গ্যালারি কায়া : বাংলাদেশ-ভারতের শিল্পীদের নিয়ে ‘এপিক ১৯৭১’

আগের সংবাদ

স্বস্তির ভোটে আইভীর হ্যাটট্রিক : সব শঙ্কা উড়িয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট, শামীম ওসমানের কেন্দ্রে হেরেছে নৌকা

পরের সংবাদ

নির্বিকার প্রশাসন : কুষ্টিয়ায় আতঙ্কের নাম ‘ড্রাম ট্রাক’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় কুষ্টিয়া শহরজুড়ে এক আতঙ্কের নাম ড্রাম ট্রাক। চীনা প্রযুক্তির এ ট্রাকটি সম্পন্ন স্টিল বডি। এক সঙ্গে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ টন মালামাল বহন করতে পারে। তাই অল্প সময়ে অনেক বেশি নদীর বালু বিক্রি করার সুযোগে বালু ইজারাদার, এক শ্রেণির ঠিকাদার দিনের পর দিন ড্রাম ট্রাক কিনে পুরো জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বেপরোয়া এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন এসব ড্রাম ট্রাক সাধারণত পার্বত্য এলাকার জন্য নির্মিত হলেও জনবহুল এবং মাত্র ১০-২০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন সড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করার শহর ও গ্রামাঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তেমনি মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এতে জেলাবাসীর কাছে ড্রাম ট্রাক এখন আতঙ্ক। ঘাতক ড্রাম ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে শহরের হরিশংকরপুর লাহিনী বটতলায় এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, জেলা প্রশাসন থেকে বালু মহাল ইজারা গ্রহণ করার সময় ছোট ট্রলি, ঠ্যালা ভ্যানে বহন বড় ধরনের পরিবহনে বালু বহন না করার বিষয়ে অঙ্গিকার করার কথা বলে ইজারা পত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েও কুষ্টিয়া শহরের বাহাদুর খালী মৌজায় মহাশ্মশান গড়াই নদীর বালু মহাল ইজারা গ্রহণের পর থেকে ইজারাদার তার নিজের গড়া যথেচ্ছ অনিয়ম করে চলেছেন।
মিলপাড়া পুলিশ ফাঁড়িসহ প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে ওই ইজারাদার প্রতিদিন শত শত ড্রাম ট্রাক ভর্তি বালু জেলা শহর থেকে উপজেলা, বিভাগে বিতরণ করছে। আর দ্রুত গতিসম্পন্ন অবৈধ ড্রাম ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন নারী, শিশু, কিশোর, যুবকসহ বিভিন্ন বয়সির মানুষ।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় রাজস্ব শাখা থেকে শহরের বাহাদুর খালী মৌজায় গড়াই নদীর মহাশ্মশান বালু মহালটি ইজারাগ্রহণ করে মিলপাড়া নিবাসী রনি খান। স্থানীয় আধিপত্যবাদী, ক্ষমতার দাপটে তিনি যেন অনেকটাই বেসামাল। বালু মহাল ইজারা পাওয়ার পর থেকে ইজারা গ্রহণের সকল প্রকার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অতিরিক্ত দামে, ছোট্ট ট্রলির পরিবর্তে ৬ চাকার ট্রাক, ১০ চাকার ট্রাক এবং ড্রাম ট্রাক দিয়ে হাজার হাজার টন বালু উত্তোলন শুরু করে। শহরের মধ্যে পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) ব্যবস্থাপনায় নির্মিত মাত্র ১০ থেকে ২০ টন ওজনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সড়ক দিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ টন ওজনের বালু, মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক, ১০ চাকার ট্রাক প্রতিনিয়িত আসা যাওয়া করায় মিলপাড়া, মহাশ্মশান ঘাট, ইকোপার্ক, মিলপাড়া, লালন শাহ মাজার সড়কসহ পুরো শহরের সড়কগুলো ভেঙে পড়েছে। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এলাকাবাসীকে জিম্মি করে যত্রতত্র বালু উত্তোলনে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুর রহমান মণ্ডল জেলা প্রশাসক বরাবর ১০ মে. টনের অধিক ভারবাহী ট্রাক বা যানবাহন চলাচল বন্ধকরণ প্রসঙ্গে তিনটি দিক উল্লেখ করে পত্র পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি উক্ত রাস্তাগুলোয় অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও অদৃশ্য খুঁটির জোরে ড্রাম ট্রাক শহরের রাস্তা, আবাসিক এলাকা, প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তাঘাট চষে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মো. ছাব্বিরুল আলম জানান, ড্রাম ট্রাকের চাকায় ধাক্কা খেয়ে অনিক নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ কুষ্টিয়া হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ড্রাম ট্রাকটি মিলপাড়া ফাঁড়িতে আটক রাখা হয়েছে। মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে ইজারাদার রনি খানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গক্রমে কুষ্টিয়া শহরজুড়ে প্রশাসন, পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত ড্রাম ট্রাক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বেপরোয়া গতি ও অদক্ষতার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত কয়েক দিনে ৪ নারী শ্রমিকসহ প্রায় ১০ জন ড্রাম ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। ঘাতক ট্রাক আর ইচ্ছে মাফিক বালু মহালের ইজারাদারের কারণে শহরে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়