সিদ্ধান্ত পরিবর্তন : শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলবে গণপরিবহন

আগের সংবাদ

উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ : সবার দৃষ্টি নারায়ণগঞ্জে > আইভী-তৈমূরের লড়াইয়ে বাড়তি মাত্রা শামীম ওসমান

পরের সংবাদ

চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা : আদালতে আবেদন > মিতু-বাবুলের সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে চায় পিবিআই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নিজের করা মামলায় এবার এই দম্পতির দুই সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায় তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংস্থাটির পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। তবে আদালতে এখনো এ বিষয়ে কোনো শুনানি হয়নি। চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা এই আবেদন বিষয়ে কখন শুনানি হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি বাবুলের আইনজীবী।
এর আগে নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা একটি মামলায় গত বছর পিবিআই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মাগুরায় গিয়ে মিতু-বাবুলের সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সাক্ষ্যগ্রহণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তবে আদালতের ওই আদেশের পর তখনকার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে দাবি বাবুলের ভাইয়ের।
মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মিতু-বাবুল দম্পতির ছেলের সঙ্গে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েটির সঙ্গেও আমরা কথা বলতে চাই। সে জন্যই আবেদন করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে এই আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো আদালত কোনো আদেশ দেননি। মিতুর বাবার করা মামলায় আগে আবেদন করা হয়েছিল। এবারের আবেদন বাবুল আক্তারের করা মামলায়। তদন্ত কাজ চলছে।
বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, এই আবেদনের বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানি না। আদালতে খোঁজ নিয়ে করণীয় বিষয় জেনে নেব। তিনি বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে আগের একটি আদেশ আছে তারপরও আরেকটি আবেদন মানসিক টর্চারের শামিল। আগের আদেশের অগ্রগতি কী, সেটাও আমরা আদালতের মাধ্যমে জানতে চাইব।
বাবুলের পরিবার মাগুরা পৌর সদরের কাউন্সিলর পাড়ার বাসিন্দা। মিতু-বাবুল দম্পতির দুই সন্তান বর্তমানে বাবুলের পরিবারের কাছেই বসবাস করছে। এর আগে মিতু হত্যা মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা মিতু-বাবুল দম্পতির দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৩ জুন মিতু-বাবুল দম্পতির দুই সন্তানকে ১৫ দিনের মধ্যে আইনজীবীর কাছে হাজির করতে বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ভাই হাবিবুর রহমান লাবুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। গত বছরের ৩০ জুন হাবিবুর রহমানের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাগুরা গিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবেশন অফিসারের উপস্থিতিতে বাবুল-মিতুর সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সাক্ষ্যগ্রহণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭।
বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, আদালত আগেই আদেশ দিয়েছেন। তখন যেহেতু করোনার প্রকোপ ছিল আমরা বলেছিলাম মাগুরায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। আদালত তা মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু এরপর তখনকার আইও আর যোগাযোগ করেননি। এমনকি আমরা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারপরও তারা মাগুরা আসেননি। এখন যদি কথা বলার প্রয়োজন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছুই জানি না। আদালতের নির্দেশ এলে কথা বলবে।
গত ৯ জানুয়ারি পিবিআইর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিতু হত্যায় বাবুলের করা মামলাতেই বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন আদালত। একই ঘটনায় মিতুর বাবার দায়ের করা অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বাবুল আক্তার গত মে মাস থেকে কারাগারে আছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও কুপিয়ে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মিতু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম তার জবানবন্দিতে ‘হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ভোলা সরবরাহ করেছিল’ বলে জানিয়েছিল।
এদিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে ২০১৭ সালে নিজেই এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহের আঙুল তোলেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে নগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবির কাছে থাকলেও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তদন্তভার পড়ে পিবিআইর ওপর। এরপর ধীরে ধীরে জট খুলতে থাকে এই মামলার।
গত বছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ১২ মে ওই মামলার তার বিরুদ্ধে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একই দিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় ওইদিনই বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি তা দেননি। এরপর থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে রয়েছেন। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পিবিআইর দেয়া চার্জশিটের বিষয়ে বাবুল গত বছর আদালতে আপত্তি জানিয়ে অন্য কোনো সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা দিয়ে মিতু হত্যার ঘটনা পুনঃতদন্ত চান। শুনানি শেষে আদালত বাবুলের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রæটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে আবারো প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন। এতে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় দুটি মামলাই এখন তদন্তাধীন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়