গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধে ব্যর্থ সরকার

আগের সংবাদ

ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ! জিনোম সিকুয়েন্সিং বাড়ানোর তাগিদ > সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে : বিশেষজ্ঞদের মত

পরের সংবাদ

মুরগির খামার থেকে মিজানের আয় মাসে লাখ টাকার বেশি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : লেয়ার মুরগির ফার্ম থেকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাঁড়াডোব গ্রামের রাইসমিলপাড়া এলাকার মিজানুর রহমানের মাসিক আয় এখন দেড় লাখ টাকা। শুধু মুরগির ফার্মই নয় মিজানুর রহমান মাল্টিপ্ল্যান করে করছেন বিভিন্ন ফসলের চাষ। বিশেষ করে মালটা বাগান, কলাচাষ এখন এলাকাতে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। অথচ এই মিজানই বিএ পাস করে চাকরির পেছনে অনেক সময় ঘুরেও একটা চাকরি জুটাতে পারেনি। বেকারত্বের অভিশাপ আর পরিবারের কটাক্ষে জর্জরিত মিজান অভিশপ্ত বেকার জীবন কাটিয়ে উঠে এখন তার মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে মিজান জানান, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দি হাঙ্গার প্রজেক্টের প্রশিক্ষণ তার জীবন পাল্টে দিয়েছে, প্রশিক্ষিত করেছে। তাদের পরামর্শে যুব উন্নয়ন থেকে নিয়েছি হাঁস-মুরগি পালনবিষয়ক প্রশিক্ষণ। এভাবেই বদলে যাওয়া জীবনের গল্প শোনান মিজানুর রহমান মিজান। মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় তার ঘুরে দাঁড়ানো গল্প। মাত্র ৫শ মুরগি নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন লেয়ার মুরগির খামার। এখন তার মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা।
তিনি জানান, ফার্ম গড়ে প্রথম দিকে খুব একটা লাভবান না হলেও দ্বিতীয়বার তার ফার্মে যোগ হয় ১১০০ মুরগি। দ্বিতীয়বার মুরগি চাষ করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লাভের মুখ দেখতে শুরু করি ফার্ম থেকে। বর্তমানে আমার মুরগির খামারে রয়েছে ১৫০০ লেয়ার মুরগি। সেখান থেকে প্রতিদিন সাড়ে ১৩০০ ডিম আসছে। ডিম বিক্রি করে ১১ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। তবে মুরগির খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদ আমার প্রতিদিন ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন আমার ৬ হাজার টাকা আয় হয়।
তিনি জানান, তাকে দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক এখন লেয়ার ফার্ম গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। কেউ কেউ নতুন করে ফার্ম গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এলাকার কেউ লেয়ার মুরগির ফার্ম গড়তে চাইলে পরামর্শ থেকে শুরু করে সব ধরনের কারিগরি সহায়তাও দিয়ে থাকি। এ কারণে আমাকে এখন এলাকার মানুষ শ্রদ্ধা করে। মিজানুর রহমানের মুরগির খামারের পাশাপাশি রয়েছে ১০ বিঘা জমিতে কলা চাষ, ২ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ, ২ বিঘা জমিতে মরিচের চাষসহ নানা ধরনের সবজির বাগান। তিনি বলেন, চাকরি বা বিদেশে না গিয়ে এলাকায় মুরগির ফার্ম গড়ে শিক্ষিত বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হতে পারেন। এজন্য শুধু মনোবল থাকলেই হবে। এদিকে মিজানুর রহমানের দেখাদেখি একই পাড়ার হামিম রেজা, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মতিয়ার রহমান, রেনুফা খাতুন, সিরাজুল ইসলাম, মইনাল হোসেন, ইউসুব আলীসহ বেশ কয়েকজন গড়ে তুলেছেন লেয়ার মুরগির খামার। তারাও এখন বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত হয়েছেন।
খামারি মতিয়ার রহমান বলেন, এলাকার যুবকদের আইকন মিজান। তাকে দেখাদেখি এলাকার ১০/১২ জন খামার গড়ে তুলেছেন। প্রথম দিকে আমি তার কাছ থেকে খামার স্থাপন ও ওষধপত্রসহ নানা ধরনের পরামর্শ নিয়েছি। এখন আমার খামারে ৪০০ লেয়ার ও ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। প্রতি মাসে আমি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করে থাকি।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের গাংনী এরিয়া অফিসের সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দীন জানান, এলাকার বেকার যুবকরা মিজানকে দেখে অনেকেই স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে। আমরা তাকে হাঙ্গার প্রজেক্ট থেকে উজ্জীবক প্রশিক্ষণ ছাড়া আয়বর্ধক অনেকগুলো প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হাঙ্গার প্রজেক্ট মূলত কাউকে ঋণ দেয় না। ঋণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে নানা ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম ভোরের কাগজকে বলেন, বিদেশে না গিয়ে বা চাকরির পেছনে না ছুটে শিক্ষিত বেকার যুবকরা নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারে। বর্তমান সরকার বেকার যুবকদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। এসব সুবিধা গ্রহণ করে নিজের ভাগ্যে উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে বেকারদের সামনে। নিজেদের জমি না থাকলেও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে শাকসবজি, বাণিজ্যকভাবে বিভিন্ন ফসল যেমন- মাল্টা, চায়না লেবু বা পেয়ারার বাগান গড়েও স্বাবলম্বী হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়