কাগজ প্রতিবেদক : ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত নমুনার ১৭ শতাংশের মধ্যে ক্যান্সার চিহ্নিত হয়। ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। শতকরা হিসাবে পুরুষদের মধ্যে এই হার ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর নারীদের হার ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ। পুরুষরা মূত্রথলি, প্রটেস্ট ও মুখগহ্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি। নারীরা স্তন, জরায়ুমুখ, মুখগহ্বরে ক্যান্সারে আর শিশুরা লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের উদ্যোগে বছরব্যাপী প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি ও মাসব্যাপী হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণায় এমন তথ্য মিলেছে। গতকাল বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সেমিনারে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান ও সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডা. শেহরিন ইমদাদ রায়না। অধ্যাপক অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং প্যাথলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা, হেলথ ইনফরমেশন ইউনিটের প্রধান ডা. শাহ আলী আকবর আশরাফি প্রমুখ।
প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রিতে দেখা যায়, ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত ২১ হাজার ১৭৫টি নমুনার মধ্যে ৩ হাজার ৫৮৯টি নমুনার (১৭ শতাংশের) ক্যান্সার চিহ্নিত হয়েছে। পুরুষদের (৪০ দশমিক ৫ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ) ক্যান্সারের আধিক্য রয়েছে। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষদের প্রধান ক্যান্সারগুলো হলো- মূত্রথলি ১০ দশমিক ২ শতাংশ, প্রটেস্টে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মুখগহ্বরে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। নারীদের প্রধান ক্যান্সার হলো স্তন (২৩ দশমিক ৩ শতাংশ), জরায়ুমুখ (২১ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং মুখগহ্বর (৮ দশমিক ৯ শতাংশ)। প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারের পরিমাণ পুরুষের ১১ দশমিক ২ শতাংশ, নারীদের ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ।
হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, মোট রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৫৬ জন। তাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ১ হাজার ২৩৮ জন এবং শিশু ৪১৮ জন। এখানে পুরুষদের প্রধান ক্যান্সার হলো ফুসফুস (৯ দশমিক ৬ শতাংশ), লিউকেমিয়া (৯ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং লিম্ফোমা ৯ শতাংশ। নারীদের স্তন (২৮ দশমিক ১ শতাংশ), থাইরয়েড (১৬ দশমিক ১ শতাংশ) এবং জরায়ুমুখ ১২ দশমিক ২ শতাংশ। ছেলে শিশুদের প্রধান ক্যান্সার হলো লিউকেমিয়া (৭১ দশমিক ৫ শতাংশ), লিম্ফোমা ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। মেয়ে শিশুদের প্রধান ক্যান্সার হলো লিউকেমিয়া (৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ), হাড় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।
সেমিনারে উত্থাপিত প্রবন্ধে সারাদেশে ক্যান্সারের সঠিক তথ্য পেতে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি চালু এবং ক্যান্সার রেজিস্ট্রির কারিগরী দিক উন্নত করতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা কামনা করা হয়।
বক্তারা ক্যান্সার মোকাবিলায় করণীয় বাস্তবায়নে সঠিক নেতৃত্বদান, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা, ক্যান্সারভিত্তিক ডাটা সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার ও প্রাপ্ত ডাটাগুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।