কাগজ প্রতিবেদক : শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিভেদে সর্বনি¤œ ৩৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ আট হাজার ৮০০ টাকা নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন হয়। শিল্পকারখানায় পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে ৬৬ শতাংশ নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন হচ্ছে। আবাসিক এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন না করার আইনি বিধান থাকলেও ৭২ শতাংশ শিল্পকারখানা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। ক্ষমতার অব্যবহার ও ক্ষেত্রে বিশেষে অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এটি করা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মাওলা। এ সময় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণায় ৩৩৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করে সংস্থাটি। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ জরিপ পরিচালিত হয়।
টিআইবি জানায়, জরিপের আওতাভুক্ত শতকরা ৫৭ ভাগ শিল্পকারখানা বা প্রকল্প কোনো প্রকার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ছাড়াই পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে। শিল্পকারখানার শতকরা ৬৬ ভাগ পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন করে থাকে। আবার শতকরা ১৭ ভাগ শিল্পকারখানা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র না পাওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপন না করার আইনি বিধান থাকলেও জরিপের আওতাভুক্ত বেশির ভাগ শিল্পকারখানাই আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ক্ষেত্র বিশেষে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এটি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে প্রভাবশালী আমলা এবং ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের একাংশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক থাকায় প্রভাব এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ত্রæটিপূর্ণ ইআইএ সম্পাদন করেও ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে অযৌক্তিকভাবে একই কর্মকর্তার ১০ বারসহ ১০ বছরে মোট ২৯৩ জন কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে ভ্রমণ বাবদ অর্থ অপচয় করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, জাতিসংঘ পরিবেশ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের মৃত্যু হয় পরিবেশগত বিপর্যয়জনিত কারণে। এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স-২০২০ অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণ রোধে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম।
বায়ুদূষণের বিভিন্ন উপাদানের বার্ষিক গড় উপস্থিতির হিসেবে দূষণের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে; দূষিত রাজধানীর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। বায়ু দূষণজনিত কারণে গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩১ হাজার ৩০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।