নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

বরিশাল অঞ্চলে আমন ধান কাটার ধুম : দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : জেলার বিস্তৃত মাঠজুড়ে এখন আমন কাটার ধুম পড়েছে। নানা প্রতিকূলতা আর গভীর নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’ এ অগ্রহায়ণের অকাল বর্ষণের ক্ষতির পরও পৌষের কুয়াশা ঘেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলের মাঠে মাঠে ধান কাটার এ দৃশ্য যে কোনো মানুষেরই চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে এবার বৃষ্টিতে ধানের গুণগত মান কিছুটা খারাপ হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলে ধানের দাম নিয়ে কৃষকের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে। মঙ্গলবারও বরিশালে প্রতিমণ আমন ধান বিক্রি হয়েছে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। অথচ গত বছর এ অঞ্চলে ১১শ টাকা মণ দরে আমন ধান বিক্রি করেছেন কৃষকরা।
সূত্রমতে, প্রকৃতিনির্ভর বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় এবারো নি¤œচাপ ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে খরিপ-২ মৌসুমে ১১টি জেলায় আবাদকৃত ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের ফসল অকাল বর্ষণের পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা কোনো কোনো অঞ্চলে সব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন ঘরে তোলার পরে বোরোসহ বিভিন্ন ধরনের রবি আবাদেরও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দেশে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ২০ লাখ টন চাল পাবার কথা রয়েছে। তবে দেশের অন্য এলাকাগুলোর মতো এ অঞ্চলের সিংহভাগ জমি উচ্চ ফলনশীল-উফশী ও হাইব্রিড ধান আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হলে উৎপাদন ২৫ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব হত বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ এবং ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় এ অঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ আমনের জমি প্লাবিত হওয়ায় ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে। ফলে সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল অঞ্চলে আমনের উৎপাদন ঘাটতি ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড় লাখ টন কম। গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি বাদে দেশে ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৮ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৩ টন আমন চাল উৎপাদন হয় বলেও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই উৎপাদন ছিল প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টন। তবে সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল অঞ্চলে এখনো উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদে অনেক পিছিয়ে। এদিকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-‘ব্রি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ প্রযুক্তি এ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে হস্তান্তরে ডিএইর মাঠ কর্মীদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অঞ্চলে খরিপ-২ মৌসুমে যে ৮.৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে, তার মধ্যে সনাতন জাতের ধানই প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরে। এসব ধানের উৎপাদন হেক্টর প্রতি মাত্র ১.৮০ টনের মতো। অথচ হাইব্রিড জাতের আমনের অবাদ হয়েছে মাত্র ৫শ হেক্টরের মতো। সারাদেশে অতি উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ধানের আবাদ হয় প্রায় আড়াই লাখ হেক্টরে। কিন্তু হাইব্রিড জাতের ধানের উৎপাদন দেশের অন্য এলাকার তুলনায় এ অঞ্চলে হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন বেশি। এমনকি উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের আমন আবাদেও পিছিয়ে বরিশাল অঞ্চল। তার পরেও এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে পৌষের সকাল থেকে ধান কাটার ধুম চলছে।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে এ অঞ্চলে ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ আমন কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর উৎপাদিত ধানের দাম কম পাবার পরও দমে থাকছে না বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এককালের ‘বাংলার শস্য ভান্ডার’ খ্যাত বরিশাল অঞ্চল এখনো সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, আমন সংগ্রহের পরপরই পৌষ মাসে কৃষকরা যাতে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারেন এ বিষয়ে নির্দেশনা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এ সময় ভুট্টা, আলুসহ শীতকালীন সবজি রক্ষায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়