নজরুল ইসলাম খান : খালেদা জিয়ার কিছু হলে রেহাই পাবেন না

আগের সংবাদ

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

পরের সংবাদ

কুড়ি একুশের বদলে যাওয়া যাপিতজীবন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশের পর একুশও শেষ। কিন্তু থেকে গেছে গড়ে ওঠা জীবনযাত্রা। এ জীবনযাত্রা বদলে দিতে ২০২০ সালের করোনা অতিমারি বেশ বড় ভূমিকা রেখেছিল। তবে, আন্তর্জাতিকভাবে ফ্যাশন দুনিয়ার জন্য ২০২১ সাল ছিল স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার বছর। আর সেই ছন্দে শামিল হয়েছে বাংলাদেশও। বিশ্ব ফ্যাশনে ট্রেন্ডি একটা শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে টেকসই ফ্যাশন। অবশ্য বাংলাদেশের নি¤œবিত্ত আর নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষ আগে থেকেই রিসাইকেল (পুনর্ব্যবহার), আপসাইকেল (পুরোনোকে নতুন করে ব্যবহার) আর টেকসই ফ্যাশনে অভ্যস্ত ছিল। ফাস্ট ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য কমেছে। পরিবেশবান্ধব টেকসই ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। সর্বপরি প্রযুক্তিও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে মানুষের জীবনযাত্রায়। কুড়ি একুশের বদলে যাওয়া যাপিতজীবন থাকবে কুড়ি বাইশেও। মানুষের বদলানো ফ্যাশন ও লাইফস্টাইলের টুকরো গল্পগুলোই থাকছে এবার।

রেড়েছে ‘রিভেঞ্জ ড্রেসিং’
এখন চলতি ফ্যাশন ট্রেন্ডে কী চলছে তা এড়িয়ে ব্যক্তিগত রুচি, পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ্যের পোশাকও পরছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা। নিজস্ব ফ্যাশন দিয়ে অন্য সবার থেকে আলাদা করে চেনানোর জন্য ঝুঁকিও নিচ্ছেন তারা। কফি ডেটে বা অনলাইন থেকে অফলাইনের প্রথম দেখায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাজির হচ্ছেন ক্যাজুয়ালে। ‘নিউ নরমালে’ সব ভুলে নিজের প্রিয় পোশাকে সাজার এই প্রবণতাকে ডাকা হচ্ছে ‘রিভেঞ্জ ড্রেসিং’ নামে।

মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যতœ
২০২১ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সবার মনোযোগ ও যতœ বেড়েছে। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার মতো ঘটনা চোখে পড়েছে। পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ ও ব্যক্তিগত চাপে থাকা মানুষ তাদের মনের কথা খুলে বলেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদদের কাছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মনের বন্ধুর তথ্যমতে, ইউএনডিপি-মনের বন্ধুর যৌথ উদ্যোগে গত পাঁচ মাসে ১১ হাজার ৬৯০টি ফোনকল এসেছে মানসিক সেবা সংক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৩.০৪ শতাংশ সেবাই নিয়েছেন তরুণরা। এ ছাড়াও নারীদের সেবা নেওয়ার পরিমাণ ছিল ৬২.৯ শতাংশ। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে অনেকেই এখন ইয়োগা, ধ্যান বা মেডিটেশন করছেন নিয়ম করে।

বেড়েছে অনলাইন মিটিং
দেশি বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বাসা থেকে কাজের সুযোগ দিয়েছে। হোম অফিসের কারণে ল্যাপটপ, স্পিকার ও ওয়েবক্যামের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। ভিডিওর রেজল্যুশন বাড়াতে অনেকে স্ট্যান্ডসহ রিং লাইটও কিনেছেন। অনেকে বিছানায় বসে ল্যাপটপ ব্যবহারের জন্য ছোট টেবিল কিনেছেন। অনেক সম্মেলন, সভা ও আলোচনা হয়েছে জুম বা গুগল মিটে। ওয়েবিনারের কারণে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমেছে।

ইনডোর প্ল্যান্ট
গৃহবন্দী সময়ের কিছুটা ভাগ প্রকৃতিও পেয়েছে। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বাড়ায় ঘরের আনাচকানাচে অনেকেই টব রেখেছেন। কেউ কেউ পুরো একটি র?্যাক সাজিয়েছেন ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে। এ ছাড়া ফুল গাছের প্রতি মানুষের আলাদা আকর্ষণ ছিল। সাজানো-গোছানো বারান্দাও যে মনে প্রশান্তি আনে, তা আমাদের করোনাকালীন উপলব্ধি।

বেড়েছে ছাদে উৎসব
অনলাইনে পোশাক কিনে, সেজেগুজে ছাদে উঠে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা মাত্র এক বছর পুরোনো। এবারও ঈদের দিন ছাদে গিয়ে ছবি তুলেছেন অনেকে। পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবের মতো অনেক উৎসবই এখন ছাদকেন্দ্রিক। লকডাউনের মধ্যে বিকেলবেলার আড্ডাও ছিল ছাদকেন্দ্রিক। শেষ ইংরেজি বর্ষবরণ ও বারবিকিউ পার্টিও অধিকাংশ পরিবার উদযাপন করেছে ছাদেই।

এ্যাপে মিলছে রেস্টুরেন্টের খাবার
স্বল্প মেয়াদি লকডাউনের সময় বন্ধ ছিল হোটেল-রেস্তোরাঁ। ফুড ডেলিভারি অ্যাপের কারণে ২০২০-২১ এও ঘরে বসেই বাইরের খাবার অর্ডার করা গেছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঘরে বসেই খাবারের অর্ডার দেওয়ার প্রবণতা এখনো বিরাজমান। এক্ষেত্রে ভাজাপোড়া ও মুখোরোচক খাবারই বেশি খান সবাই। তবে,
বাসায় যারা রান্না করে খেয়েছেন, তারা খাবার-দাবার রান্নায় তেল ও লবণ ব্যবহারে সতর্ক ছিলেন। সকালের নাশতায় জায়গা করে নিয়েছে ওটস, সিরাল, কর্নফ্লেক্স, ফল। স্বাস্থ্য সচেতনেরা দুধ-চায়ের বদলে গ্রিনটিকে জায়গা দিয়েছেন চায়ের কাপে। করোনা মহামারির পর থেকেই কমেছে দাওয়াত আদান-প্রদানের রীতি। সামাজিকভাবে মেলামেশার অভাব খানিকটা কমিয়েছে খাবারদাবারভিত্তিক গ্রুপগুলো। কে কী রান্না করেছেন তা নিয়ে জমজমাট ছিল ভার্চুয়াল আড্ডা। স¤প্রতি ভারতীয় ফুড ডেলিভারি সংস্থা সুইগির তথ্যমতে, ওই দেশে ২০২১ সালে প্রতি এক মিনিটে ১১৫ জন মানুষ বিরিয়ানির অর্ডার করেছেন।
অন্যদিকে, সময়ের সঙ্গে জনপ্রিয়তার পারদ বেড়েই চলেছে কফি কালচারের। ঢাকা শহর এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা কফি হাউজগুলো তার প্রমাণ দেয়।

জনপ্রিয়তা পেয়েছে মডেস্ট ফ্যাশন
২০২১ সালে মডেস্ট ফ্যাশন নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। শালীনভাবে ফ্যাশন সম্মত পোশাক পরার বিষয়টি মুসলিম তরুণীদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়। তবে শালীন পোশাকের বিষয়টি এখন আর নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে বা বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে শালীন পোশাক বা মডেস্ট ফ্যাশনে আকৃষ্ট হচ্ছেন নারীরা। শুধু এদেশেই নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের নারীরাও আজকাল গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন লম্বা গাউন বা কুর্তি, সঙ্গে মাথায় রং-বেরঙের হিজাব বা স্কার্ফ। নতুন ধারা হিসেবে বিশ্বে চালু হয়েছে মডেস্ট ফ্যাশন ট্রেন্ড। এখন পুরো পৃথিবীতে ফ্যাশন জগতে যে ধরনের পরিবর্তন এসেছে, তাতে কেবল শীতকাল নয়, বছরজুড়েই মানুষ একটু বড়সড় ঢিলা আর আরামদায়ক জামাকাপড় পড়তে পছন্দ করেন। এরকম পোশাকে শরীরের অতিরিক্ত মেদও ঢেকে রাখা যায় বলে অনেক নারীই ঢিলেঢালা পোশাকে আত্মবিশ্বাস ও আরাম পান।

উৎসবের রঙ এখনও লাল
উৎসবের রং হিসেবে এখনো এক নম্বর অবস্থান থেকে নামেনি লাল। দুর্গাপূজায় একাধিক মণ্ডপ ঘুরে এমনটাই চোখে পড়েছে। আর শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পাঞ্জাবি অথবা কোথাও ট্যুরে গেলে ‘কাপল’দের মিলিয়ে পোশাক পরা ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগের চেয়ে অনেক বেশি। মহামারিকালে ফ্যাশন আর খাবারদাবারের ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবসা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ‘কাস্টমাইজড’ করে পোশাক বানানোর প্রবণতাও বেড়েছে। বেড়েছে একটু বড় ব্যাগ, টোট ব্যাগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

ন্যুড মেকআপ
বাসায় বসে মেকআপ করার প্রচলন শুরু হয় গত বছর। ২০২১ সালেও একই ধারা অব্যাহত ছিল। মেকআপ শিখতে অনেকেই ইউটিউব টিউটোরিয়ালের সহায়তা নিয়েছেন। ভারী মেকআপের বদলে এখন ন্যুড মেকআপই বেশি জনপ্রিয়। মেকআপ আর্টিস্টদের কাছে ‘নো মেকআপ লুক’-এর আবদার ছিল চাহিদার তুঙ্গে। স্মোকি আই, কড়া লিপস্টিক ও ব্লাশন ব্যবহারের মাত্রা কম ছিল।

দলবেঁধে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং
বিয়েতে এখন শাড়ির পাশাপাশি লেহেঙ্গা, এমনকি গাউনও আছে ট্রেন্ডে। ব্যাচেলর পার্টি, ব্রাইডাল শাওয়ার, মেহেদি নাইটস, সংগীত এগুলোও পালন করা হচ্ছে ঘটা করে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মাস ধরে চলে গান ও নাচের মহড়া। প্রি ওয়েডিং ফটোশুট (বিয়ের আগে ঘটা করে ছবি তোলার আয়োজন) ও পোস্ট ওয়েডিং ফটোশুটও (বিয়ের পর সধারণত বর-বউয়ের ডেস্টিনেশন ফটোশুট বা কোথাও গিয়ে ঘটা করে ছবি তোলার অনুষ্ঠান) ট্রেন্ডে। তবে মহামারিকাল পেরিয়ে বিয়ের আয়োজন সংক্ষিপ্ত পরিসরে করাটাও পাশাপাশি রয়েছে ট্রেন্ডে। জনপ্রিয় হচ্ছে ‘ ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ও। দলবেঁধে বর কনের প্রিয়জনদের নিয়ে হলুদ, বিয়ের অনুষ্ঠান যৌথভাবে দূরে করা হচ্ছে এই ডেস্টিনেশন ওয়েডিং- এ।

বিয়ের ধারায় পরিবর্তন
২০২১ সালেও ছিল বিধিনিষেধ। তাই বলে থেমে ছিল না বিয়ের আয়োজন। ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে সেরেছেন অনেকে। পরিবার, কাছের বন্ধু ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে এসব আয়োজন সেরেছেন সবাই। স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করায় বিয়ের খরচও কমেছে।
ঘরোয়া আয়োজনের কারণে খাবার, সাজসজ্জার বাড়তি খরচ কমেছে। কনেদের অপেক্ষাকৃত কম দামের শাড়ি, পারিবারিক গয়না পরতে দেখা গেছে। সোনার গয়নার বদলে সিলভার ও গোল্ড প্লেটেড গয়নার চল ছিল বেশি। অনেক আয়োজনই হয়েছে ছোট্ট কোনো রেস্তোরাঁয়, কেউ বাড়ির ছাদে বা ঘরের ভেতরেই সেরে ফেলেছেন বিয়ের অনুষ্ঠান।

ফ্যাশনে মাস্কের সংযোজন
বিগত ২ বছর ধরেই ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে মাস্ক। ২০২০ সালে মহামারি করোনাভাইরাসের পর থেকে এখনো মাস্কের কদর বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে বিচিত্র সব মাস্ক। নানা নকশা ও স্বকীয়তা ফুটে উঠছে মাস্কে। শুধু মডেলরাই নন, মাস্কের সঙ্গে ফ্যাশনকে মিলিয়ে দিয়েছেন বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। অনেকে এখন ওয়েডিং ড্রেসসহ যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই মাস্ক ব্যবহার করছেন। মাস্ক এখন হয়ে উঠেছে প্রয়োজনীয় এবং ফ্যাশনেবল অনুসঙ্গে।

তরুণীদের ফ্যাশনে স্কার্ফ ইন
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের হট ফ্যাশন ট্রেন্ড স্কার্ফ ফিরে এসেছে প্রবল প্রতাপে। রেশমের স্কার্ফের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে মানুষ। প্রিন্ট প্যাটার্নে ব্লক লেটার, ফুল ও হিজিবিজি মোটিফের চাহিদাও ছিল উল্লেখযোগ্য। বোল্ড রং, যেমন টকটকে লাল স্কার্ফের প্রতিও আগ্রহী ছিলেন ফ্যাশন-সচেতনেরা। স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে থুতনির নিচে অথবা মাথার পেছনে স্কার্ফ দিয়ে নট বাঁধা ফ্যাশনেবল নারীদের রাস্তাঘাটে চোখে পড়েছে হরহামেশাই। স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে নিতেও দেখা গেছে অনেককে। এমনকি ব্যাগের হাতলেও স্কার্ফের দেখা মিলেছে।

অনলাইন কেনাকাটায়
আস্থা বেড়েছে
করোনা আসার পর থেকেই অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে। যা এখনো চলমান। পোশাক, গয়নার মতো ফ্যাশনপণ্য ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করতেও অনেকে অনলাইনের ওপর ভরসা বাড়িয়েছেন। বেড়েছে অনলাইন দোকানপাটের সংখ্যাও।
ই-ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ই-কমার্সের বাজারের আকার এখন ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ভোক্তারাও অনলাইনে কেনাকাটায় আস্থা বাড়িয়েছেন করোনাকালে। এখন যে কোনো পণ্য-সামগ্রীই মেলে ই-কমার্স বা এফ-কমার্সে।
মহামারিকালে ফ্যাশন আর খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবসা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ‘কাস্টমাইজড’ করে পোশাক বানানোর প্রবণতাও বেড়েছে। বেড়েছে একটু বড় ব্যাগ, টোট ব্যাগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা। পোশাক, ব্যাগ, জুয়েলারি, প্রসাধনী, জুতা সবই মেলে অনলাইনে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়