দুর্ঘটনায় আহত বাবা : দুই সপ্তাহ পর সার্জেন্টের মামলা নিল বনানী থানা

আগের সংবাদ

সেট টপ বক্স নিয়ে স্বেচ্ছাচার > দাম ও মান নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন > এত কম সময়ে বাস্তবায়ন কঠিন : কোয়াব

পরের সংবাদ

পঞ্চাশ বছরে কতটুকু এগিয়েছে সংস্কৃতি অঙ্গন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পার করার গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে এদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে ঘটেছে বেশ পরিবর্তন। হয়েছে বিকাশ।
কিন্তু দীর্ঘ এই পথযাত্রায় শিল্প মাধ্যমে যতটুকু বিকাশ সাধিত হওয়ার দরকার ছিল, তা কি হয়েছে? কী বলছেন শিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা?
তাদের কথাই শুনেছে মেলা। লিখেছেন : রোমান রায়

সরকারকেই উদ্যোগী
ভূমিকা নিতে হবে

তানভীর মোকাম্মেল, নির্মাতা

এফডিসি-কেন্দ্রিক মূলধারার চলচ্চিত্রের গর্ব করার মতো কোনো অর্জন গত পঞ্চাশ বছরে ঘটেনি। তবে বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের কিছু অর্জন রয়েছে। কয়েকটা ভালো ছবি তৈরি হয়েছে যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আমি খুব বেশি আশাব্যঞ্জক তা বলব না। আশা করি আগামীতে দেশে কিছু ভালো চলচ্চিত্র তৈরি হবে। যেহেতু আগের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে এবং সিনেমাহলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কেবল চলচ্চিত্র-ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এসব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটা দেশে সরকার হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন। সম্পদে ও ক্ষমতায়। তাই সরকারকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। সরকার যেগুলো করতে পারে তা হচ্ছে সরকারি অনুদান প্রথাটাকে দলীয় ও অনৈতিক প্রভাব মুক্ত করে সেরা চিত্রনাট্য ও দক্ষ পরিচালকদের অনুদান দেয়া। সরকারের ফিল্ম ইনস্টিটিউটকে আমলাতন্ত্র ও মেধাহীন কিছু শিক্ষক থেকে মুক্ত করে একটা পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলা। এছাড়া ঢাকায় কলকাতার ‘নন্দন’-এর মতো একটা ন্যাশনাল ফিল্ম সেন্টার তৈরি করা ও দেশের সেন্সর প্রথাটাকে আরো আধুনিক ও
যুগোপযোগী করা।

চলচ্চিত্রের অবস্থা উত্তরণের
কোনো সম্ভাবনা নেই

সোহেল রানা, অভিনেতা

বিজয়ের ৫০ বছর। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই বিজয় উদযাপন করাটা আমার জন্য গর্বের। চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি তো অনেক দিন আগেই বলেছি, চলচ্চিত্র ডেড। তারপর বলেছি, চলচ্চিত্র কোমা। তারপর বলেছি, চলচ্চিত্র ইজ ইন লাইফ সাপোর্ট। এর আর উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ৫০ বছরের মধ্যে যদি ৪০ জন এমডি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে উন্নয়ন হবে কী করে। একজনকে কোনো কাজের দায়িত্ব দিয়ে কিছুদিন পর তার বদলে আরেকজনকে আনা হয়। কীভাবে উন্নয়ন সম্ভব? যারা এমডি হয়ে আসেন তারা তো ফিল্মের লোক না। তারা ছবি দেখেন। ছবি পছন্দ করেন। কিন্তু তারা তো ফিল্ম বানাননি। তাদের তো এটা বোঝার জন্য, করার জন্য সময় দেয়া দরকার। তারা অবশ্যই মেধাবী। কিন্তু তারা যদি কাজের জন্য সেভাবে সময় না পান, তাহলে তো চলচ্চিত্র উন্নয়ন সম্ভব না। এখন এফডিসির ফ্লোর ভেঙে বহুতল ভবন বানাচ্ছে। যেখানে শপিং সেন্টার, খাবারের দোকান হবে। তাহলে সেখানে এত মানুষের ভিড়ে শুটিং করবে কী করে? যে কমিটি করা হয়েছিল সেখানে চলচ্চিত্রের লোকজন থাকা দরকার ছিল। চলচ্চিত্র ডিজিটাল করার জন্য ডিজিটাল অনেক কিছু কিনে আনা হয়েছে। ডিজিটালভাবে তৈরি হওয়ার পর এটা তো ডিজিটাল ফরম্যাটে চালাতে হবে। তৈরি হলো ডিজিটাল, চলল এনালগে। তাহলে তো হবে না।

আমরা একটা পতনের
ক্ষেত্রে আছি

মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি। স্বাধীন দেশের স্বাধীন জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অন্য রকম ভালো লাগা। আবেগ অনুভূতি প্রকাশের সেরা মুহূর্ত। মুক্তিযুদ্ধের ফলে একটা বিকাশ হয়েছে। বিকাশের ক্ষেত্রে তো উত্থান-পতন থাকেই। আমরা এখানে একটা পতনের ক্ষেত্রে আছি। সময়ের সঙ্গে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন ছাড়া নাট্যাঙ্গনে উন্নয়ন মোটেও চোখে পড়ার মতো ছিল না। স্বাধীনতার এই সুবর্ণ সময়ে এসেও দেখি একটা নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে পড়ে আছি। আমি এখন ঢাকার বাইরে এসেছি, এখানে এসে কোনো জায়গায় বিজয় দিবসের আয়োজন সেভাবে দেখিনি। আমাদের কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখিনি। সেই দায় থেকে আমি নিজেকেও মুক্ত মনে করি না। এক সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলা ও বিভিন্ন থানায় যত মঞ্চ নাটকের আয়োজন চোখে পড়ত। এখন তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তেমনি টিভি নাটকের মানোন্নয়ন নিয়ে হতাশা কাজ করে। প্যাকেজ যুগ শুরু হওয়ার পর যেমন নাটকের সংখ্যা বেড়েছে, তেমনি মানের অবনতি ঘটেছে ব্যাপকভাবে। মিডিয়া প্রসারিত হচ্ছে। অথচ মনে দাগ কাটার মতো কাজ হচ্ছে ক’টি সেটাই প্রশ্ন। এখন তো সংস্কৃতি অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের সেই প্রতিফলন নেই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে সব চলচ্চিত্র, নাটক, ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়েছে, আমার মনে হয় না সেগুলো জনমনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। শিল্পের উৎকর্ষ তুলে ধরতে হবে।

প্রযুক্তি এগিয়েছে
আমরা পারিনি

শর্মিলী আহমেদ, অভিনেত্রী

এখন কাজ বেশি বেশি হচ্ছে। অনেক টিভি চ্যানেল হয়েছে। প্রযুক্তিও অনেক এগিয়েছে। একটা কথা হচ্ছে বেশি কাজে মান ধরে রাখা যায় না। আমরা যখন সে সময়ে কাজগুলো করেছি, সেগুলো কিন্তু স্মরণীয় হয়ে আছে। আগে আমরা নাটকের শুটিং যেখানে চার দিনে করতাম, এখন সে কাজ হচ্ছে দুই দিনে। কিছু মানুষ চেষ্টা করছে ভালো করার জন্য। স্বাধীনতার ৫০ বছর সে হিসাবটা করতে গেলে মনে হয় না আমরা এগোতে পেরেছি। বিশেষ করে গত দুই বছরে এই মহামারি করোনা আমাদের আরো পিছিয়ে দিল। এখনও সেটার প্রভাব রয়েছে। সবদিক দিয়েই আমরা পিছিয়ে গেলাম। শুধু এই শিল্প অঙ্গনই না সব ক্ষেত্রে। এটা তো আমাদের ব্যর্থতা না। এটা উপর আল্লাহর তরফ থেকেই হয়েছে। এখন শুধু আমাদের দোষ দিলেই হবে না। প্রকৃতি মহামারির কারণেই এই সময়ে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। আমরা প্রকৃতির ব্যাপারে কোনো খেয়ালই করিনি। আমরা শুধু ধ্বংস করেছি, নষ্ট করেছি এই প্রকৃতিকে আমরা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করিনি। আমি জানি না কোনো অভিনয়শিল্পী তার অভিনয় জীবনে সন্তুষ্ট হতে পারে কিনা। আমার মনে হয় কাজ করে তো তেমন কিছুই করতে পারলাম না। মনে হয় না ভালো কিছু করতে পেরেছি। তবুও কাজ করে যাচ্ছি। কাজকে ভালোবেসে এখনো করে যাচ্ছি।

দেশ স্বাধীন না হলে এসব
পরিবর্তন আসত না

রফিকুল আলম, সংগীতশিল্পী

একটি দেশের উন্নতি বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উন্নতি কিংবা প্রাপ্তি মাপার যন্ত্র নেই। তবে আমাদের উন্নতি, পরিবর্তন ও সংযোজন হয়েছে স্বাধীনতার কারণে। আমাদের সংস্কৃতির যে বিষয়গুলো আছে তাতে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। একটা যুদ্ধাহত দেশ, যুদ্ধ করে জাতি যখন স্বাধীনতা পায় তখন তাদের মননে একটা পরিবর্তন হয়। সেই মননের পরিবর্তন হয়েছে বলে আমাদের সৃজনশীল কাজের চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের বাংলা গানে আমাদের মাধ্যমেই দুটি পরিবর্তন এসেছে। দেশের গান, লোকসঙ্গীতে আমরাই পরিবর্তন এনেছি। স্বাধীনতার কারণে এর পরিবর্তন এসেছে। এখন স্টেজে বিনোদনের জন্য দেশের গান করে। দেশের গান বিনোদনের জন্য না। তবে কষ্টের হলেও সত্য এখন ছায়াছবির অবস্থা খুব খারাপ। তার কারণ পৃথিবীজুড়েই চলচ্চিত্রের অর্থ লগ্নিকারক কমে এসেছে। গানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ঘরে থেকে গান রেওয়াজ করে স্টেজে উঠে গাইলাম। এটি তো নয়। এর সঙ্গে অনেক অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে। স্বাধীনতার কারণে তথ্য প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। দেশ স্বাধীন না হলে এসব পরিবর্তন আসত না। তবে অসন্তুষ্টির কারণ এখন গানের লগ্নিকারক কমে গেছে। গানের ক্ষেত্রে কলকাতা গীতিকাব্যে এগিয়ে। তাদের গানের ধারা পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের আরো পরিবর্তন দরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়