দুর্ঘটনায় আহত বাবা : দুই সপ্তাহ পর সার্জেন্টের মামলা নিল বনানী থানা

আগের সংবাদ

সেট টপ বক্স নিয়ে স্বেচ্ছাচার > দাম ও মান নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন > এত কম সময়ে বাস্তবায়ন কঠিন : কোয়াব

পরের সংবাদ

ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল : মেহেরপুরের ১০৩ ভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মেহেরপুর প্রতিনিধি : শীত শুরু হয়েছে। রয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরেরও গ্রিন সিগনাল। তাই মেহেরপুরের প্রতিটি ইটভাটাতেই দেয়া হয়েছে আগুন। আর এই ভাটাগুলোর অধিকাংশই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে কাঠ। জেলায় ১০৩টি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে ১৮টি হাওয়া ভাটা। এই ১৮টি হাওয়া ভাটাতেও আবার প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০০-৪০০ মণ কাঠ ব্যবহার করা হয়। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি শুধু ভাটাতে আগুন জ্বালানোর জন্য অল্প পরিমাণ কাঠ পোড়ানোর জন্য মৌখিকভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১০৩টি ভাটার একটিরও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকার কারণে জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স দেয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন না থাকা প্রতিটি ভাটা মালিক ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সেই ভাটাগুলোতে ইট তৈরি ও বিক্রি করছেন।
সিংহভাগ ভাটা মালিকই ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবিধারী নেতা, কেউবা দলের নিষ্ঠাবান কর্মী অথবা দলের আশীর্বাদপুষ্ট। জেলা ও জেলার বাইরের বনাঞ্চলের গাছ ধ্বংস করে লাখ লাখ টন কাঠ পোড়ানো চলছে ভাটাগুলোতে। মেহেরপুর বন বিভাগ থেকে জানা গেছে প্রতি মৌসুমে মেহেরপুরে শুধু ইটভাটায় পোড়ানো হয় প্রায় ৯০ লাখ টন কাঠ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-এর ১৬ ধারায় বলা আছে, ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে কাঠ ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি হতে পারে। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০১৩ সালে। অথচ মেহেরপুরে এই আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র মেহেরপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর উল্লাহ বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারপরও আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভাটা মালিকদের কাঠ পোড়াতে নিষেধ করেছি।
ভাটা মালিকদের দাবি, সরকারের নীতিমালা মেনে ভাটা স্থাপনে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো অনুমোদন পাচ্ছেন না বছরের পর বছর। সরকারিভাবে বিভিন্ন দিবস পালনের ব্যয় মেটাতে এসব ভাটা মালিক সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মালিকদের দাবি।
অবৈধ হলেও ভাটাগুলো থেকে প্রতিবছর রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব ভাটা থেকে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ইটভাটা মালিক আখতারুজ্জামান চঞ্চল জানান, গত সোমবার তার ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তিনিসহ প্রতি ইটভাটা মালিকই ৩৭ হাজার ৭০০ টাকা করে চালান দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেতে। কিন্তু বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না বছরের পর বছর।
জেলা ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেতে, যেসব শর্ত পালন করতে হয়, তার কোনোটিই ভাটাগুলো পালন করতে পারে না। তাই ভাটাগুলোকে ছাড়পত্র দিতে পারছে না। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অনুরোধ করব, উন্নয়নমূলক কাজের অংশীদার হিসেবে শর্ত কিছুটা শিথিল করে ভাটাগুলোকে যেন ছাড়পত্র দেয়া হয়। অবাদে কাঠ পোড়ানোয় একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে অন্যদিকে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের রোগ। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, কাঠ পোড়ানোর ফলে ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় মানুষের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডের কারণে মাঠের ফসল ও এলাকার পরিবেশ দূষণ হয়। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এ দূষণ খুবই ক্ষতিকর।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান জানান, নীতিমালা না মেনে স্থাপিত ভাটাগুলোতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হলে ইটের দাম বেড়ে যাবে। ব্যাহত হবে উন্নয়নমূলক কাজ। ইট ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে মানুষের। মানবিক কারণেই কিছুটা ছাড় দেয়া হয়। ভাটা মালিকরা আবেদন করেছিলেন ভাটার কয়লায় আগুন জ্বালাতে কিছু কাঠ দরকার। সে হিসাবে মৌখিক অনুমতি দেয়া আছে দু-চার মণ কাঠ ব্যবহারের। এ সুযোগে অনেক ভাটায় কাঠ পুড়ছে। অভিযান চালিয়ে সেসব ভাটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়