মাসুদ রানা সিরিজ কার জানা যাবে ১৩ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

পাঠ্যবই নিয়ে এনসিটিবির ঢিলেমি : যথাসময়ে ছাপার কাজ শুরু হয়নি > ১ জানুয়ারি আংশিক বই পাবে শিক্ষার্থীরা > মাঠে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

পরের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা-নাটক কেন কম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনীতে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার সংখ্যা গুনলে ফলাফল দাঁড়াবে নেহাতই হাতেগোনা কয়েকটা। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে ৫০টির মতো সিনেমা নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে টেলিভিশন নাটকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ঠিকমতো কোনো কাজ হয়নি এবং হচ্ছেও না! যা হচ্ছে তাতেও সঠিক বিষয় ফুটে উঠছে না। বিশেষ দিনকে ঘিরে দায়সারাভাবে কিছু কাজ হচ্ছে। কেন এমনটি হচ্ছে? এর পেছনে মূলত কী কারণ লুকিয়ে- তা খুঁজতে মেলা কথা বলে কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে

মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণে অনেক আয়োজনের প্রয়োজন
তানভীর মোকাম্মেল, নির্মাতা

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা পরিবারের অভিজ্ঞতার কাহিনী নিয়েই একেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব। সে তুলনায় সংখ্যায় ও মানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি বেশ কম। আমাদের প্রজন্মের তারেক মাসুদ, মোর্শেদুল ইসলাম বা আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত ছবি তৈরি করেছি বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানসিকভাবে যতটা উদ্বুদ্ধ ছিলাম, বর্তমানের তরুণরা ততটা নয়। তার সহজ কারণ হচ্ছে তারা তো মুক্তিযুদ্ধটা দেখেনি। তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও আবেগটা সে কারণেই তেমন নেই। আরেক কারণ হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে দেশের তরুণদের মধ্যে এক ধরনের বিরাজনীতিকরণ ঘটছে। আমাদের মতো তারা রাজনীতিসচেতন নয়। এসব কারণেই তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা কম তৈরি করছে। সিনেমা ব্যয়বহুল মাধ্যম। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মাণে অনেক আয়োজনের প্রয়োজন পড়ে। এখন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এসব জিনিস সংগ্রহ করা কঠিন। সে কারণেই সবাই অনুদানের জন্য অপেক্ষা করে। তবে সরকারি অনুদান ছাড়াও কিছু ছবি তৈরির উদ্যোগের কথা আমি জানি। বিশেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে।

আমরা একটা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির অধীনে
ফাখরুল আরেফিন খান, নির্মাতা

স্বাধীনতার ৫০ বছরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নির্মিত হয়েছে প্রায় ৫০টি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ যাবৎ নির্মিত সিনেমা যথেষ্ট নয়। আমি মনে করি ৫০ বছরে প্রায় ২০০/৩০০ সিনেমা নির্মাণ হওয়ার দরকার ছিল। তবে আমরা একটা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির অধীনে। যার ফলস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা এত অল্পসংখ্যক নির্মিত হয়েছে। সরকারী অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রযোজকদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নির্মাণে দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন দেশের মুক্তিযুদ্ধ এমনকি গৃহযুদ্ধ নিয়েও বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশেও সেই ধরনের সিনেমা নির্মিত হওয়া উচিত। অবশ্য ইতোমধ্যে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সেভাবে প্রকাশ্যে আসছে না বা আস্তে পারছে না। সিনেমা নির্মিত হয় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। সে জায়গায় তরুণ প্রজন্মের বর্তমান অভিজ্ঞতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অভিজ্ঞতার তেমন মিল নেই। সেখান থেকে তরুণ প্রজন্ম সিনেমা নির্মাণ করতে এসে প্রাসঙ্গিকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরলে ধরবে, না ধরতে চাইলে ধরবে না। আসলে জোর করে তো কিছু হয় না।

মুক্তিযুদ্ধ তো মনগড়া কিছু নয়
রওনক হাসান, অভিনেতা ও নির্মাতা

নাটক যথেষ্টই নির্মাণ হয়েছে। তবে তার অধিকাংশই ভাষা ভাষা জ্ঞান নিয়ে নির্মাণ করা। যথেষ্ট গবেষণা, বাজেট ও ইতিহাসের সত্যতা কতটুকু সেটা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের নাটকের নির্মাণ বাড়িয়ে লাভ কি? যদি সেগুলো মানসম্পন্ন না হয়! এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের নাটকের বাজেট দেড় থেকে দুই লাখ। এই টাকায় কী হবে? মুক্তিযুদ্ধ তো মনগড়া কিছু নয়। নিজের মতো ভেবে একটা স্ক্রিপ্ট দাঁড় করিয়ে দিলেই হলো! এর জন্য তথ্যের প্রয়োজন। তার জন্য গবেষণা প্রয়োজন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের নাটকের জন্য যে বাজেট তা মোটেই যথেষ্ট নয়। মুক্তিযুদ্ধের অনেক কাজেই সঠিক ইতিহাস থাকে আবার অনেকগুলোতে থাকে না। যেমন আমি অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের নাটকে অভিনয় করেছি। অধিকাংশ নাটকের সমস্যা বাজেট এবং চিত্রনাট্য। বাজেট না বাড়লে চিত্রনাট্য নিয়ে গবেষণাও কম হবে স্বাভাবিক। মাসের পর মাস গবেষণা করে একজন একটা লেখা লিখল। সেটার পারিশ্রমিক সে পাবে ৫ থেকে ১০ হাজার। তাহলে সে চলবে কী করে? ভালো পাণ্ডুলিপি আসবে কোথা থেকে? ফলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকের বাজেট যেমন বাড়াতে হবে তেমন সঠিক তথ্য নিয়ে মানসম্পন্ন নাটক নির্মাণ করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের নাটকে অর্থ বরাদ্দ কম হয়
আশফাক নিপুণ, নির্মাতা

প্রথমত, এক ঘণ্টাব্যাপী যে নাটকগুলো হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণের দিকে যেতে হবে। আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক যে নাটক টেলিভিশনের জন্য নির্মাণ করা হয় তাতে যেমন যথেষ্ট বাজেট থাকে না তেমন তথ্য-উপাত্তসহ ভালো কিছু উপস্থাপিত হয় না। ফলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাটকের প্রতি দর্শকের একটি অনীহা জন্ম নিয়েছে। প্রতিটা নাটকে একই বিষয়, একই ঘটনা দেখা হয়। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এমনও অনেক ঘটনা আছে, যা এখনো তুলে ধরা হয়নি। যেমন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রোজাও হয়েছে, ঈদও হয়েছে। সে সময়ের মানুষ কীভাবে তা পালন করেছে! এ নিয়ে নাটক হতে পারে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে তো শুধু অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ হয়নি। সেখানে একেকজন মানুষের আলাদা আলাদা মতাদর্শ ছিল। সে বিষয় নিয়েও নাটক হতে পারে। কিন্তু তা হয়নি এবং হচ্ছে না। এদিকে ভালোবাসা দিবস বা অন্য দিবসগুলোতে যে পরিমাণের অর্থ বরাদ্দ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের নাটকে তা করা হয় না। ফলে নির্মাতারা ঠিকঠাক, তথ্য-উপাত্ত নিয়ে, গবেষণা করে নাটক নির্মাণ করতে পারেন না। ফলে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান জানিয়ে যে কাজগুলো করা হচ্ছে তাতে সম্মান জানানো তো হয়ই না উল্টো একই জিনিস ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখিয়ে দর্শককে বিমুখ করা হয় এবং সঠিক তথ্যের বিপরীতে কাল্পনিক ঘটনার উত্থান হয়। তাই আমি মনে করি টেলিভিশন নাটকে মুক্তিযুদ্ধ তুলে ধরা বন্ধ করে সিনেমার দিকে যাওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়