জাবির ভর্তি পরীক্ষা : প্রক্সি দিতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

আগের সংবাদ

এশিয়ান আর্চারিতে পদক খরা ঘোচাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

অগ্রিম টাকা দিয়েও পণ্য পাননি ১০ হাজার গ্রাহক : ইভ্যালির পথে হাঁটছে আলেশা মার্ট!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : অন্তত ১০ হাজার গ্রাহকের কয়েকশ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে পণ্য না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাদের প্রধান কার্যালয়সহ দুটি অফিস। পাওয়া যাচ্ছে না আলেশা মার্টের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দাবি, অগ্রিম অর্থ নিয়ে দীর্ঘ কয়েক মাসেও পণ্য দেয়নি আলেশা মার্ট। এক মাস ধরে আলেশা মার্ট কয়েক দফা চেক দিলেও অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় ডিজঅনার হয়। এ অবস্থায় গ্রাহকের ভিড় বাড়লে প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও আলেশা মার্টের প্রধান কার্যালয় এবং করপোরেট অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, এমন খবরকে ‘গুজব’ দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে আরো বলা হয়েছে, তাদের কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং তাদের দুটি কার্যালয়ই খোলা রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে জমকালো আয়োজনে যাত্রা শুরু করে আলেশা মার্ট। এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। আলেশা মার্টের কাছে অন্তত ১০ হাজার গ্রাহকের পাওনা ৪৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মাঝামাঝি দেশের কয়েকটি আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। তখন ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ এবং ধামাকাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তখনো আলেশা মার্টকে দেখা গেছে ব্যাপকভিত্তিক বিপণন প্রচারণা চালাতে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মতো অভিনব এক ডিসকাউন্ট কার্ডের প্রচলন শুরু করে। এতে বয়স্ক, মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা জনগোষ্ঠীকে লোভনীয় সব ডিসকাউন্ট দেয়ার কথা বলা হয়। এই কার্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য সম্প্রতি যখন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করে, তখন থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো আলেশা মার্টকেও নজরদারিতে রেখেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গত জুলাইয়ে আলেশা মার্টে একটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম। মোটরসাইকেল দিতে না পারায় টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিল আলেশা মার্ট। গত সোমবার বনানীর প্রধান কার্যালয়ে এসে অফিস বন্ধ পান রফিকুল। দিনভর বসে থেকেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা পাননি তিনি। তার মতো অনেকেই ফিরে গেছেন শূন্য হাতে। গতকাল মঙ্গলবারও অনেকে এসে দেখেন অফিস বন্ধ।
ভুক্তভোগী একাধিক গ্রাহকের দাবি, এক মাস ধরে আলেশা মার্ট কয়েক দফা চেক দিলেও অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় তা প্রত্যাখ্যাত (ডিজঅর্নার) হয়। এ অবস্থায় গ্রাহকের ভিড় বাড়লে প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেয় আলেশা মার্ট।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হলেও সময়মতো পণ্য দেয়া হয়নি। পরে টাকা ফেরত চাইলে চেক ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বারবার। এদিকে বনানীর কার্যালয়ে নোটিস টানিয়ে গ্রাহকদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তেজগাঁওয়ের নাসরিন টাওয়ার অফিসে। অথচ সেখানেও কেউ নেই। এখন মামলা করার কথা ভাবছেন অনেক গ্রাহক।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে আলেশা মার্ট যথাসময়ে গ্রাহকদের অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারছিল না। এই গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যের জন্য আগাম অর্থ গ্রহণ করা হয়েছিল। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে সরকারের নেয়া সা¤প্রতিক পদক্ষেপগুলোর একটি হচ্ছে, কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অর্ডারকৃত পণ্যের জন্য অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করতে পারবে না। ও
ই ঘোষণার পর থেকেই কয়েকটি মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টকে আর পণ্য সরবারহ করতে চাইছে না। এদের মধ্যে একটি ভারতীয় মোটরসাইকেল নির্মাতা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আর এই কারণে গ্রাহকের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারছে না আলেশা মার্ট। সেজন্য গত প্রায় এক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটির বনানী কার্যালয়ে গ্রাহকের ভিড় বাড়ছিল। এই ভিড় নিয়ন্ত্রণে আলেশা মার্টের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে কয়েকবার ঘোষণা দেয়া হয়, কার্যালয়ে এলে যেন কেবল গ্রাহকই আসেন, অন্য কাউকে যেন সঙ্গে আনা না হয়।
গত সোমবার রাত ১২টার পর প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘বিশেষ ঘোষণা’ দিয়ে বলা হয়, আলেশা মার্ট ইতোমধ্যে অত্যন্ত সফলভাবে বাইক ডেলিভারি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। কিন্তু রিফান্ড প্রক্রিয়া পরিচালনা করার সময় বিগত এক সপ্তাহ ধরে আলেশা মার্টের বনানীর কার্যালয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বারা অফিস স্টাফদের ওপরে অতর্কিত হামলা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে অফিস কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল। হামলাকারীরা কেউই আলেশা মার্টের গ্রাহক নয়। তাই আমাদের সব সম্মানিত গ্রাহককে সুন্দরভাবে সেবা প্রদান ও আলেশা মার্টের অফিস কার্যক্রম আবার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কাস্টমারদেরকে কোনো প্রকার রেফারেন্স ব্যবহার না করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। আমাদের কাছে সব কাস্টমার সমান। ওই ঘোষণায় আরো বলা হয়, অর্ডার এবং রিফান্ডজনিত বিষয়ে যে কোনো তথ্য জানার জন্য শুধু আপনারা (গ্রাহক নিজে) সশরীরে আমাদের অফিসে উপস্থিত থাকবেন। গ্রাহক ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি কোনোভাবেই অফিসে গ্রহণযোগ্য হবে না এবং গ্রাহকদের যে কোনো সেবা প্রাপ্তির জন্য অবশ্যই নিজ নিজ জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসার অনুরোধ করছি।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর আলেশা মার্টের ফেসবুক পেজে প্রতিষ্ঠানটি একটি ‘জরুরি ঘোষণা’ দেয়, যেখানে বলা হয়, ‘বনানী এলাকায় ভূগর্ভস্থ দুর্যোগ’-এর কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিবেচনায় নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কাস্টমার কেয়ার (২৪/৭) সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।’ এই ঘোষণার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গ্রাহকের ভিড় বাড়তে থাকে।
তখন আবার ঘোষণা দেয়া হয়, আপাতত বনানী কার্যালয় বন্ধ থাকবে কিন্তু তেজগাঁওয়ের নাসরিন টাওয়ারে আলেশা মার্টের মূল প্রতিষ্ঠান আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেডের করপোরেট কার্যালয় খোলা থাকবে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল দিনভর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ভোরের কাগজ। মোবাইল ফোনে বারবার কল ও এসএমএস পাঠানোর ২ ঘণ্টা পরও অন্যপ্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত জুলাইয়ে সরকার প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বলা হয়, অনলাইনে পণ্য কেনার জন্য গ্রাহক মূল্য পরিশোধ করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরবরাহকারীর কাছে পণ্য পৌঁছে দেবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এরপর তা ক্রেতাকে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতার অবস্থান একই শহরে হলে অর্ডার করার পাঁচদিনের মধ্যে, আর ক্রেতা-বিক্রেতার অবস্থান ভিন্ন শহরে হলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি মোবাইল মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান বিকাশ সাময়িকভাবে ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে, যার মধ্যে ইভ্যালির সঙ্গে আলেশা মার্টও ছিল। এরপর সেপ্টেম্বরে সরকার জানিয়েছিল, আর্থিক লেনদেন মনিটর করার জন্য সরকারের নজরদারিতে রয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, যার অন্যতম আলেশা মার্ট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়