‘শিশু বক্তা’ রফিকুল মাদানীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

আগের সংবাদ

চমক থাকছে টাইগার স্কোয়াডে ; মিরপুরে পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের অনুশীলন

পরের সংবাদ

ভয়াল সিডর দিবস আজ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : আজ সোমবার ভয়াল ‘সিডর দিবস’। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ভয়াল সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস ও ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল বরগুনাসহ সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল। এ ঘূর্ণিঝড়ে গবাদিপশু ও বন্যপ্রাণীর জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছিল। নিখোঁজ হয়েছিলেন বহু মানুষ। জনপদ পরিণত হয়েছিল মৃত্যুকূপে। ১৪ বছর পর সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন সেখানকার মানুষ। তাদের অধিকাংশই হারিয়েছেন স্বজন। এখনো সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন তারা। উপকূলের মানুষের স্মৃতিতে এখনো ভেসে ওঠে শত শত মানুষের আর্তচিৎকার আর স্বজনদের আহাজারি। এখনো সন্তান হারা বাবা-মা, বাবা-মা হারা সন্তানরা পথের দিকে তাকিয়ে থাকে তারা ফিরে আবার আসবে এই আশায়।
ভয়াল ওই রাতে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ২১৫ থেকে ২৩০ কিলোমিটার বেগে সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস ও ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল। সে দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের সব জল যমদূতের মতো এসে মানুষকে নাকানি-চুবানি দিয়ে কেড়ে নিতে শুরু করল। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ¡াসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। চারদিকে ধ্বংসলীলা। লাশের পর লাশ। কবর দেয়ার মতো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলায় ১ হাজার ৫০১ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। গৃহহীন হয়ে পড়েছিল ৮৯ হাজার ৭৮৫টি পরিবার। এর মধ্যে আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৮৬ জন মানুষ সে দিন প্রাণ হারিয়েছিল। জলোচ্ছ¡াসে দুই উপজেলার ৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। বিধ্বস্ত হয়েছিল ১৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সুপার সাইক্লোন সিডরের ক্ষত চিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন জীবিত স্বজনরা। সিডরের দুুদিন আগে আমতলী উপজেলার ঘটখালী ও বৈঠাকাটা গ্রাম থেকে ১৪ জন দিনমজুর পানের বরজের জন্য ধানশিলতা সংগ্রহে ট্রলারযোগে বঙ্গোপসাগরে সুন্দরবন এলাকার দুবলারচরে যান। সিডর তাদের ট্রলারসহ ভাসিয়ে নিয়ে যায় দুই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর মোহনা সংলগ্ন টেংরাগিরি বনের কাছে। তাদের মধ্যে চারজন জীবিত অবস্থায় ফিরে এলেও আজ পর্যন্ত বাকি ১০ জন ফিরে আসেননি। নিখোঁজরা হলেন- ইউসুফ (৪০), জব্বার (৫৫), সোবাহান (৪২), হোসেন (৫০), খলিল (৩৫), রতন (৪০), সোহেল (১৮), মনিরুল (২৫), দেলোয়ার (২৫) ও আলতাফ (২০)। স্বজনদের হারিয়ে অসহায় পরিবারগুলো এখনো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
সিডরে নিখোঁজ ইউসুফের স্ত্রী আমেনা বেগম কান্নারত অবস্থায় বলেন, ‘মোর স্বামী বড় বইন্যার দুই দিন আগে সাগরে গেছে পানের বরজের লইগ্যা লতা কাটতে। হেইহানে বইয়া বইন্যায় হ্যারেসহ লগের সব মানষেরে পানতে ভাষাইয়া লইয়া গ্যাছে। আইজ পর্যন্ত ফিইররা আয় নাই। এ্যাহন পোলাপান লইয়া অনেক কষ্টে দিন কাডাইতেছি।’
প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর দিবসে’ স্বজনহারা মানুষ মিলাদ, দোয়া, কুরআনখানি ও নানাবিধ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি স্মরণ করে থাকে।
এছাড়া দুই উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিহতদের স্মরণ করে মোমবাতি প্রজ¦ালন ও শোক র?্যালির আয়োজন করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়