দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিস

আগের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

পুষ্টি উন্নয়নে অবদান রাখছে বুড়িরহাট হর্টিকালচার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাসান গোর্কি, রংপুর থেকে : রংপুরের বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের চারা কলম। উৎপাদিত চারার বিপণন ও বিক্রয় বাড়ার ফলে সরকারের রাজস্ব খাতে বার্ষিক আয়ও বেড়ে গেছে। সর্বশেষ দুই অর্থবছরে বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারে রাজস্ব আয় ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।
বুড়িহাট হর্টিকালচার সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১-০২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪০ টাকা। বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ৪১০ টাকায়। আয়ের পাশাপাশি এই সেন্টারে চারা উৎপাদন, কলম ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাপকতা এসেছে।
মূলত বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টার রংপুরবাসীর উদ্যান ও ছাদ বাগান তৈরি, স¤প্রসারণ, পুষ্টি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। রংপুর নগরী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাড়ে ২১ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন থেকে এখানে বিভিন্ন কৃষি গবেষণা হয়ে আসছে। এখানে প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের ফসলের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের চারা কলম ও রোপণ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত চারা ও বীজ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এতে দেশের কৃষি, ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হচ্ছে।
এমনকি করোনাকালেও থেমে ছিল না এই কার্যক্রম। উন্নতজাতের ফলের চারা, কলম, বীজ উৎপাদন ও বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করেছে। পাশাপাশি উদ্যান বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা এবং উন্নত জাতের ফল ও সবজির প্রদর্শনী কার্যক্রমও অব্যাহত আছে।
বর্তমানে দেশি-বিদেশি গাছগাছালি, চারা আর ফুলে-ফলে ভরা প্রতিষ্ঠানটি। এখানে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, জাম্বুরা, জলপাই, পেঁপে, ডালিম, আমলকী ও সুপারি গাছের চারার ছড়াছড়ি। রয়েছে লটকন, জাবাটিকাবা, আতা, শরীফা, চালতা, কাজুবাদাম, নাশপাতি, ত্বীন, স্ট্রবেরি, পেপিনোমিলনের চারা। সেন্টারজুড়ে শোভাবর্ধনকারী গাছের সঙ্গে বাহারি ফুল। উদ্যান কর্মকর্তা, কর্মচারী, মালিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা তরুণ উদ্যোক্তাদের তথ্য প্রদানের পাশাপাশি উপপরিচালক নিজেই তাদের সঙ্গে নিয়ে হাতেকলমে গাছগাছালি দেখিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
সেখানকার উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের আয়তন ২১ দশমিক ৫০ একর। এর মধ্যে সাড়ে ১৩ একর জমিতে স্থায়ী মাতৃ বাগান রয়েছে। তিন দশমিক ১ একর জমিতে নার্সারি এলাকা। এছাড়াও সেন্টারে পুকুর, বাঁশ বাগান, সেচ ও নিষ্কাশন নালা, নার্সারি শেড, সড়ক, ডরমেটরি, অফিস, আবাসিক এলাকা, গ্যারেজ, পার্কিং এলাকা রয়েছে। বিশাল এই সেন্টারে ফল, সবজি, ঔষধি, মসলা, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী চারা, কলম ও বীজ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। গেল অর্থবছরে এই হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৩১টি ব্যাচে ৯০০ জন কৃষক ও বাগান উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রায় নয় হাজার জন নিয়মিত সেবার অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শমূলক সেবা পেয়েছেন।
এছাড়াও হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যোগে উদ্যান পরিদর্শন ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে খোনে ১৪ জাতের আম ও ৪ জাতের লিচু ছাড়া মাশরুম, কমলা, লটকন, জাম্বুরা, জামরুল, লেবু, পেয়ারা, মাল্টা কলম ও কার্টিং ড্রাগন ফলের চাহিদা বেশি।
এ ব্যাপারে বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক আফতাব হোসেন জানান, বারো মাস ফল দিবে, এটা নিয়ে আমরা গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। বিশেষ করে আম, লিচু, মাল্টা ও কমলার নতুন নতুন দেশি-বিদেশি জাত সংগ্রহ করেছি। এক সময় আমাদের দেশে কমলা ও মাল্টা আবাদ হতো না। অথচ আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে মাল্টাকে আর বিদেশি ফল বলার সুযোগ থাকবে না। এই ফল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশি ফলে পরিণত হবে। ২-৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মাল্টা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, হর্টিকালচার সেন্টারে দার্জিলিং, ছাতকি ও বারো মাসি ভিয়েতনামী কমলার জাত রয়েছে। খুব শিগগিরই এসব মাতৃগাছ থেকে কলম উৎপাদন করা হবে। রংপুর অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় এসব কমলার চারা পৌঁছে গেলে দ্রুত এর সুফলও পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, কৃষাণ-কৃষাণীদের উদ্বুদ্ধকরণ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন ফল ড্রাগনের প্রদর্শনী করা হয়েছে। আধুনিক জাতের বিভিন্ন গাছের চারার সঙ্গে ড্রাগনের তিন হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বর্তমানে বারি-৪ আমের চাহিদা বেশি। কারণ দেশি আমের তুলনায় অনেক দেরিতে এই আম পাকে এবং দামও অনেক বেশি। এছাড়া লেবুর নতুন জাত সিডলেজ চায়না-৩ এর চাহিদা বেড়েছে। এটি সারাবছরই উৎপাদন হয়। থোকায় থোকায় লেবু ধরাতে অল্প জমিতে বেশি উৎপাদন সম্ভব। এই লেবুর জাতটির চারা কলম করে এ বছরই কৃষকদের মধ্যে বিতরণ শুরু হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়