দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিস

আগের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : কৌতূহলে মাদক নিয়ে এখন নিরাময় কেন্দ্রে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবির (ছদ্মনাম)। দরিদ্র বাবার অনেক আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর কথা ছিল তার। কিন্তু বন্ধুদের প্ররোচনায় মাদক নিয়ে এখন তাকে যেতে হচ্ছে নিরাময় কেন্দ্রে। শেষ করতে পারেননি পড়ালেখাও। প্রথমে তাকে ফ্রিতে মাদক দেয়া হয়। মাদক নেয়ার পর আস্তে আস্তে তিনি অস্বাভাবিক হয়ে পড়েন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করার কারণে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে আটক করে। তবে পরে জানা যায়, তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তাই মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিলেও পরে তার বিভাগের পরীক্ষায় তিনি তার শিক্ষকদের গালি দেয়াসহ মারতে উদ্যত হন। আবির ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানান তার বাবা। এরপর ছেলেকে নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়া হয়। তার বাবা ভোরের কাগজকে বলেন, আমার ছেলে খুবই মেধাবী। অন্য কোনো কারণে নয়, মাদকের কারণে আমার ছেলের আজ এ অবস্থা। আমি খুব কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছি। অনেক বড় আশা ছিল ছেলেকে নিয়ে। এই বলে কাঁদতে থাকেন তিনি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের এক শিক্ষার্থী, বাণিজ্য অনুষদের এক শিক্ষার্থীও মাদক নিয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তাদেরও নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তির কথা বলছেন তাদের সহপাঠীরা। এছাড়া আরো কিছু শিক্ষার্থী অস্বাভাবিক আচরণ করছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদক নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রথমে এক বন্ধুর প্ররোচনায় ও কৌতূহলের কারণে মাদকে আসক্ত হই। এখন যেন আমার জগৎ পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমি এটা ছাড়তে চাই। কিন্তু ছাড়তে পারছি না। একদিন মাদক না নিলে আমি একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে কাউন্সিলিং করার জন্য গত ২৩ অক্টোবর মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদকে আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আয়েশা সিদ্দিকা ডেইজীকে সদস্য সচিব করে মোট ৫ সদস্যের এক কাউন্সিলিং কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। জবির মেডিকেল সেন্টারের উপপ্রধান চিকিৎসক ডা. মিতা শবনব এর সদস্য। অভিজ্ঞ টিম গঠন করে তারা শিক্ষার্থীদের মানসিক চিকিৎসা দেবেন বলে জানা গেছে।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও মনোবিশেষজ্ঞ ড. নূর মোহাম্মাদ বলেন, মাদকাসক্তের বিকাশপর্বে শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট খারাপ, কারো থেকে কষ্ট পাওয়া, কৌতূহলের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে সিগারেট খাওয়া শুরু করে। পরে একাকী গ্রহণ করে। এরপর সিরিয়াস মাদক নেয়। আমাদের কাজ স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করা। মাদকের সিনিয়র পর্যায়ে গেলে রিহ্যাবের মতো নিরাময় কেন্দ্রে নিবিড় চিকিৎসা করতে হয়। আমাদের পরামর্শ, কেউ যদি মাদকে আসক্ত হয় তাকে খারাপ চোখে না দেখে মানবিকভাবে দেখতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৫-২০টি মাদক সেবনের স্পট রয়েছে। স্পটগুলোতে ছোট-বড় প্রায় ১০-১৫টির বেশি গ্রুপ মাদক সেবন করে। এদের অধিকাংশ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। তারা মাদকের মধ্যে বেশি গাঁজা, ইয়াবাসহ ফেনসিডিল সেবন করে বলে জানা গেছে। ক্যাম্পাসে এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রনেতা, কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম পুলিশের তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ভোরের কাগজে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ক্যাম্পাসে অভিযান চালায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। এ বিষয়ে বিশ্বদ্যিালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ক্যাম্পাসে মাদক গ্রহণের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের আমরা ধরার চেষ্টা করছি। দুই দিন আগে একজনকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়