চকবাজারে প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন

আগের সংবাদ

তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সার দেশ

পরের সংবাদ

সিটিং সার্ভিস থাকছে না : বাড়তি ভাড়া আদায়ে ১৮ বাসের জরিমানা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করতে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে যাত্রীবাহী বাসের। নির্ধারিত বাড়তি ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া ঠেকাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ও বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে অধিকাংশ বাসেই বর্ধিত ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায়নি। এ সুযোগে বাসগুলো নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছে। এ অপরাধে রাজধানীর কলাবাগান, শাহবাগ ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এলাকায় ১৮টি বাসকে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার কলাবাগান পুলিশ বক্স সংলগ্ন সড়কে ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক, রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাশ এবং শাহবাগ এলাকায় বিআরটিএর নির্বাহী হাকিম শাকিলা বিনতে মতিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। কলাবাগান সিগন্যালে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে অন্তত ২৫টি গাড়ি থামিয়ে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা এবং গাড়িতে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা টাঙানো আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করেন ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় কলাবাগানে ৮টি গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এসব মামলায় মোট সাড়ে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় ১০টি বাসকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিআরটিএর নির্বাহী হাকিম শাকিলা বিনতে মতিন সাংবাদিকদের বলেন, বেশি ভাড়া নিচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য করা হচ্ছে। অভিযানে স্বাধীন এক্সপ্রেসের একটি বাসকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ছাড়াও দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক বলেন, গণপরিবহনের নৈরাজ্য ঠেকাতে ডিএমপি, বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দাশ বলেন, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগে ১০টি বাসকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বিকালে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহর সভাপতিত্বে এতে ১২০টি পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি, রুট মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা মালিক-শ্রমিক সমন্বয়ে ১১টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেন। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে থেকে সব অনিয়ম তদারকি করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এর আগে দুপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ঢাকা মহানগরে চলাচলকারী ছয় হাজার বাস-মিনিবাসের মধ্যে মাত্র ১৯৬টি সিএনজিচালিত বাস রয়েছে। রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনর্র্নিধারণ নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। ১০ থেকে ১২ বছর আগে ঢাকায় গ্যাসচালিত গাড়ি চলাচল করত এখন এসব বাসের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে, ঢাকা এবং দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সিএনজিচালিত। এসব বাসে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অনুসন্ধান করে ১২০টি কোম্পানির ছয় হাজারের মধ্যে মাত্র ১৩ কোম্পানির ১৯৬টি বাস সিএনজিচালিত পেয়েছি। এটি মোট গণপরিবহনের মাত্র ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে ভাড়া নিয়ে অনিয়ম এড়াতে আগামী তিন দিনের মধ্যে ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসে স্টিকার লাগানো হবে এবং এসব গাড়ি যাতে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে সেজন্য মালিক-শ্রমিকদের ১১টি দল মাঠে নজরদারি করবে। সিটিং সার্ভিসে কোনো নিয়মনীতি নেই মন্তব্য করে এনায়েত উল্লাহ বলেন, তিন দিন পর ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ‘সিটিং সার্ভিস’ এবং ‘গেটলক সার্ভিস’ থাকবে না। সিটিং সার্ভিস এবং গেটলক সার্ভিসের নামে আমরা নানা ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। আজ থেকে তিন দিন সময় দেব। এর মধ্যে সিটিং সার্ভিস- গেটলক লেখা তুলে ফেলতে হবে। তিন দিন পর অভিযান চালিয়ে সিটিং সার্ভিস পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছু বাস আসন সংখ্যার সমান যাত্রী পরিবহন করে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে। এসব বাসের গায়ে লেখা থাকে ‘সিটিং সার্ভিস’। আবার এসব বাস নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া থামে না বলে কখনো কখনো বলা হয় গেটলক সার্ভিস। বাসের ৯৫ শতাংশ আসনে যাত্রী থাকবে, ৫ শতাংশ সিট খালি থাকবে হিসাব ধরেই বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সেখানে সব বাসই সিটিং হওয়ার কথা, দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী যাওয়ার কথা নয়। এর আগে ২০১৭ সালেও সিটিং সার্ভিস বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, কিন্তু সেই উদ্যোগ আর কার্যকর হয়নি। খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, এই সিস্টেম দূরপাল্লার বাসে থাকবে। ঢাকায় অফিস সময়ে এটা সম্ভব না। অফিস টাইমে ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাড়ি দরকার তা নেই।
উল্লেখ্য, ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটে তিন দিন বাস বন্ধ থাকার পর মালিকদের দাবির মুখে গত রবিবার দূরপাল্লার বাসে ২৭ শতাংশ এবং ঢাকায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ায় সরকার। এ ভাড়া বৃদ্ধি শুধু ডিজেলচালিত বাসের জন্য কার্যকর হবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানালেও সিএনজিচালিত বাসেও বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে মঙ্গলবার বিআরটিএ কার্যালয়ে বাস মালিক-শ্রমিক নেতা এবং পুলিশ ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠকে দুই জ্বালানিতে চালিত বাসগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত আসে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়