এএসপি আনিসুল হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

পরের সংবাদ

ভ্রমণ ভিসায় ৫০০ জনকে দুবাই পাচার, গ্রেপ্তার ৮

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে মানবপাচার চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র?্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. নাইম খান ওরফে লোটাস (৩১), নূরে আলম শাহরিয়ার (৩২), রিমন সরকার (২৫), গোলাম মোস্তফা সুমন (৪০), বদরুল ইসলাম (৩৭), খোরশেদ আলম (২৮), সোহেল (২৭) ও হাবিব (৩৯)। তাদের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানায় মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মো. নাইম খান ওরফে লোটাস এ চক্রের হোতা। উন্নত জীবন ও কাজের শতভাগ নিশ্চয়তার প্রলোভন দেখিয়ে ভ্রমণ ভিসায় ভিকটিমদের দুবাই নিয়ে যেত সে। তবে এ ভিসায় গিয়ে অধিকাংশ লোকই কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে দেশে ফিরতেন। আগ্রহীদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠাতে নেয়া হতো ২-৩ লাখ টাকা। লোটাস গত সাত বছর ধরে এ কাজ করছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ লোককে দুবাই পাচার করেছে সে।
লোটাসসহ মানবপাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র?্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিইও) লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান। গতকাল শনিবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিইও বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগী র‌্যাব-৩ এ অভিযোগ করেন, একটি চক্র তাদের ভ্রমণ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে টাকা ফেরত চান তারা। তখন মানবপাচারকারী চক্রটি তাদের বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড সরবরাহ করে। তবে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করতে গেলে সেখানে কর্তব্যরত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সদস্যরা তাদের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড নকল ঘোষণা করে যাত্রা স্থগিত করে দেয়। পরে দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে ভিকটিমদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ পাওয়ার পরই আমরা তদন্ত শুরু করি। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর তুরাগ, উত্তরা, রমনা, পল্টন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ১৪টি নকল বিএমইটি কার্ড, একটি সিপিইউ, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, দুই বক্স খালি কার্ড, ৫টি মোবাইল ফোন, একটি চেক বই ও ৫টি নকল সিল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পাস মো. নাইম খান ওরফে লোটাস নয় বছর ধরে দুবাই প্রবাসী। তবে হঠাৎ করেই দুবাই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেখানে দেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ ভিসায় দুবাই অবস্থানকারীদের অনুমতিপত্র দিয়ে কাজের বৈধতা দেয়। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েই নাইম মানবপাচারে জড়িয়ে পড়েন। দুবাইয়ে ফারুক নামে তার একজন সহকারী রয়েছে। আর আটক নূরে আলম শাহরিয়ার দেশে তার মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ভিক্টিমদের যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করে দেন তিনি। কসবায় শাহরিয়ারের কম্পিউটার কম্পোজ ও ফটোকপির দোকান রয়েছে। সেখানে থেকেই ভিকটিমদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কিছু ভিকটিম বিএমইটি ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড ছাড়া বিদেশ যেতে অস্বীকৃতি জানালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্র এই মানবপাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়।
হাবিব এবং খোরশেদ বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রের মূলহোতা। তারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত গোপনে নিজেদের আড়ালে রেখে বিশ্বস্তজনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে আসছেন। ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা একটি নকল বিএমইটি কার্ড দেন। জাল বিএমইটি কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে হাবিব জানান, তিনি মহসিন নামের একজনের কাছ থেকে খালি কার্ড কিনে আনেন। প্রকৃত বিএমইটি কার্ড স্ক্যান করে তিনি নিজেই গ্রাফিক্স করেন। তারপর ভিকটিমের পাসপোর্টে দেয়া তথ্য অনুযায়ী কার্ডের পেছনে তথ্য লিপিবদ্ধ করা শেষে বদরুলের নির্দেশমতো রিক্রুটিং লাইসেন্সের নম্বর বসিয়ে দেয়া হতো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়