১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

ধরিত্রী বাঁচাতে বৈশ্বিক মিলনমেলা : কথা দিয়ে কেন কথা রাখছে না উন্নত বিশ্ব

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : স্কটল্যান্ডের গø্যাসগোতে চলমান কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে চীন ও রাশিয়ার নেতারা অংশ না নেয়ায় তাদের ব্যাপক সমালোচনা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার কথা, জলবায়ু এক গুরুতর সমস্যা, অথচ চীন এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একই কাজ করল রাশিয়ার পুতিন। যদিও দুই সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধিরা গেছেন। বিশ্বে কার্বন নিঃসরণকারী দেশের শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরই যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত ও রাশিয়া।
সম্মেলনে ১২০ দেশের নেতারা ইতোমধ্যেই অঙ্গীকার করেছেন ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নিঃসরণের হার কমানো এবং বন উজাড় রোধ করা হবে। বৃক্ষ নিধন রোধ করার অঙ্গীকারে সই করেছে চীন ও রাশিয়া। পুতিন ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নিয়ে বলেন, বন সংরক্ষণে রাশিয়াই সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ওদিকে বাইডেন বলেন, নিজেকে নতুন বিশ্ব শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে চীন, অথচ তারাই এ সম্মেলনে হাজির হয়নি। একে তিনি শি জিনপিংয়ের ‘বড় ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেন। পুতিনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাশিয়ার বনাঞ্চল জ¦লছে, আর তিনি নিশ্চুপ হয়ে আছেন। শি যে সম্মেলনে আসছেন না, সেটি আগেই জানা ছিল। গত মাসে অবশ্য তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৬০ সালের মধ্যে চীন কার্বন নিরপেক্ষ দেশ হবে। গত ১৩ অক্টোবর বিশ্ব জ¦ালানি সম্মেলনে পুতিনও অঙ্গীকার করেন, রাশিয়াও ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করবে। নেট জিরো, বা কার্বন নিরপেক্ষ মানে হচ্ছে, বায়ুমণ্ডলে বর্তমান মাত্রার সঙ্গে নতুন করে গ্রিনহাউস গ্যাস যুক্ত হবে না।
এদিকে সম্মেলনে বনাঞ্চল উজাড় প্রতিরোধের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছে বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদীরা। জাতিসংঘ একে একটি ‘শুভ সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেন। বন রক্ষার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সূত্র থেকে ১৯০ কোটি ডলারের তহবিল জোগানোর প্রতিশ্রæতিও মিলেছে এ সময়। এতে সই দানকারী দেশের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল এবং ইন্দোনেশিয়া। এসব দেশে গহিন অরণ্যের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যেই কেটে উজাড় করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ এবং ভারতের নাম স্বাক্ষরকারী দেশের তালিকায় নেই। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালেও একই রকম একটি চুক্তির থাকার পরও বন রক্ষায় তেমন কোনো সাফল্য মেলেনি। প্রতিশ্রæতি দেয়ার চেয়ে তার বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তারা। বৃক্ষরাজি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে, কারণ গাছপালা বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই অক্সাইড টেনে নেয় বলে বাতাসে কার্বন গ্যাসের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হয়।
এদিকে চীন বলছে, তাদের কার্বন নির্গমন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে ২০৩০ সালে। তারা চায় ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের শক্তি উৎপাদনের ২৫ শতাংশ আসবে ফসিলজাত নয়, এমন জ্বালানি থেকে। প্রধানত কয়লা নির্ভরতার কারণে তাদের কার্বন নির্গমন এখনো বাড়ছে। শি গত মাসে জানান, তারা এখন থেকে বিদেশে আর নতুন কোনো কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। অথচ দেশের ভেতরে কয়লাখনিগুলোকে আদেশ দেয়া হয়েছে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য, যাতে সে তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পারে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ঘটিয়েছে চীন। বিশ্বের মোট সৌর বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশেও বেশি উৎপাদিত হচ্ছে চীনে। তাছাড়া বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনেও চীন এখন বিশ্বে এক নম্বর। কিন্তু চীনকে যদি তার অঙ্গীকার রক্ষা করতে চায়, তাহলে তাকে ২০৬০ সালের মধ্যে কয়লার চাহিদা ৮০ শতাংশেরও বেশি কাটছাঁট করতে হবে। তবে সমালোচকরা বলছে, অন্য দেশগুলোও যদি চীনের পথ অনুসরণ করে তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে ২০০৫-এর স্তরের অর্ধেকে নামিয়ে আনবে কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণ। ২০৩০ সালের মধ্যে সেখানে নতুন গাড়ির অর্ধেকই হবে বিদ্যুৎ চালিত। তাদের অঙ্গীকার ২০৫০ সালের মধ্যেই তারা কার্বন-নিরপেক্ষ দেশ হবে তারা। যুক্তরাষ্ট্রে ফসিলজাত জ্বালানি সেদেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি শক্তির উৎস। তবে তৎপর হচ্ছেন বাইডেন। ১৫ হাজার কোটি ডলারের ক্লিন ইলেকট্রিসিটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তিনি, যা দিয়ে ফসিল জ্বালানি পরিত্যাগকারী কোম্পানিগুলোকে পুরস্কৃত করা হবে। তবে সেখানকার অনেক আইনপ্রণেতা এতে বাধা দিচ্ছেন; বলছেন, এর ফলে কয়লা শিল্পের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। বিগত দশকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্বন নিঃসরণ অনেকে কমেছে। তবে ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার নামে নজরদারি সংস্থা বলছে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে চাইলে ‘আরো উন্নতি ঘটাতে হবে’ এক্ষেত্রে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়