১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : ল্যাম্পপোস্ট নষ্ট করে চলে মাদক সেবন

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক (ছদ্মনাম)। ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ায়। কিন্তু দুই মাস পর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে বিষণ্নতায় ভুগতে থাকে অনিক। মাদক নিলে এ বিষণ্নতা দূর হবে বলে প্ররোচনা দেয় তার এক মাদকসেবী বন্ধু। প্রথমে তাকে ফ্রিতে গাঁজা ও সিগারেটে আসক্ত করা হয়। পরে সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন আর ফ্রি মাদক মেলে না, কিনতে হয় নিজের টাকায়। অনিক জানান, প্রথমে বন্ধুর প্ররোচনায় আমি মাদকে আসক্ত হই। আমি এখন এটা ছাড়তে চাই। কিন্তু ছাড়তে পারছি না। একদিন মাদক না নিলেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার কাছে এখন বিশ্ববিদ্যালয় মানেই মাদকের আড্ডা।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৫-২০টি মাদক সেবনের স্পট রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, তিন নম্বর গেট, মুজিব মঞ্চের পাশে নারিকেল তলা, অডিটোরিয়ামের পেছনে, নতুন ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড, ছাদ ও ভবনটির ৮ তলার ওপর কাজ চলা ফ্লোরগুলোর সিঁড়িতে, ছাত্রী কমন রুমের পাশে কাশ্মির চত্বর, রফিক ভবনের পেছনে, প্রশাসনিক ভবনের পেছনে, বিজ্ঞান ভবনের সামনেসহ বাস রাখার সব জায়গায় মাদকের আড্ডা বসে। এসব স্পটে ছোট-বড় ১০-১২টির বেশি গ্রুপ মাদক গ্রহণ করে থাকে। এদের অধিকাংশ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। তারা মূলত গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল সেবন করে বলে জানা গেছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, এসব মাদক স্পটে রাতে ল্যাম্পপোস্টের আলো না জ্বললেও পিটপিট করে জ্বলে গাঁজা, বিড়ি-সিগারেটের আলো। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদক সেবনের জন্য ল্যাম্পপোস্টের আলো বিপত্তি হওয়ায় কেটে ফেলা হয়েছে ক্যাবল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাতেই মাদক খুব সহজলভ্য। মূলত শাঁখারিবাজার, সদরঘাট, মুরগিটোলা, ল²ীবাজার এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে মাদক কিনে আনে শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন একই শিক্ষার্থী মাদক কিনলে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ তকমা লেগে যাবে- এই শঙ্কায় গ্রুপ থেকে টাকা তুলে একেক জন একেক দিন মাদক কিনে আনেন।
এদিকে মাদক ছাড়াও এসব এলাকায় প্রায়ই ছাত্রছাত্রীদের অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখা যায় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তা কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলা অনুষদের ২০১৭-১৮ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী ভোরের কাগজকে বলেন, কাঁঠালতলায়, কাশ্মির চত্বরে, বিজ্ঞান ভবনের বাস পার্কিং এলাকায় রাতে যেতেই ভয় লাগে। অনেকে সেখানে মাদক সেবন করে। এছাড়া বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে এসব এলাকায় ঘুরতে এসে কাউকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখলে বিব্রত হতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, ল্যাম্পপোস্টগুলো করোনার বন্ধেও সচল ছিল। ক্যাম্পাস খোলার কিছু দিন আগে থেকে হঠাৎ লাইটগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এসব জায়গায় প্রায়ই মাদকের আড্ডা ও ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে দেখি। কিন্তু আমরা সংখ্যায় কম। মাদকসেবীদের প্রায় সবাই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্য হওয়ায় কিছু বলতেও পারি না। তারা আরো বলেন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাকর্মী মাত্র ১৮ জন। তিন শিফটে ৬ জন করে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই ৬ জন দিয়ে নতুন ভবন, কলা ভবন, ভিসি ভবন, অবকাশ ভবন, রফিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন, ডরমিটরি ভবনসহ ৫টা গেট নিরাপত্তা দেয়া আর মাদক সেবন ঠেকানো সম্ভব নয়। প্রত্যেক জায়গায় দুজন করে হলেও ৪০-৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী প্রয়োজন। আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় থাকি।
ক্যাম্পাসে মাদক গ্রহণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ল্যাম্পপোস্টগুলো ঠিক করতে বলা হয়েছে। মাদক গ্রহণের বিষয়ে আমরা মাঝেমধ্যে খবর পাই। তাদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তাকর্মী কম। ভিসি স্যারকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। এছাড়া মাদকসেবীদের ধরতে কোতোয়ালি থানাকে সিভিলে অভিযান চালাতেও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। জগন্নাথের দুই মাদক ব্যবসায়ীর নাম আমাদের তালিকায় এসেছে। এর মধ্যে একজন ছাত্রনেতাদের মধ্যে দায়িত্বশীল। তাদের হাতেনাতে ধরার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়