‘ভীষণ এক্সাইটেড ও নার্ভাস’

আগের সংবাদ

নির্বাচন ঘিরে বারবার নির্যাতন : ইস্যু যাই হোক হামলার লক্ষ্যবস্তু ‘সংখ্যালঘু’, স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ধর্ম’

পরের সংবাদ

সবজির চারায় দিন বদল শাহনগরের চাষিদের

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাহিদ আল মালেক, শেরপুর (বগুড়া) থেকে : বগুড়ায় উৎপাদিত শীতকালীন হরেক রকম পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজির চাহিদা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে এই এলাকায় উৎপাদিত সবজির চারার চাহিদা। আর বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগরের চারা নগরীতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত উন্নতমানের চারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের ২৫ জেলায়। শাহনগরের পাশাপাশি জেলার আরো কয়েকটি উপজেলার গ্রামেও জনপ্রিয় হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজির চারা উৎপাদন। এসব নার্সারিতে বছরে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি চারা।
এ ব্যাপারে শাহনগর গ্রামের বিশিষ্ট চারা ব্যবসায়ী নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামে নিরাপদ ও উন্নতমানের সবজির জন্য প্রায় ২শ নার্সারিতে বছরে ১৫ থেকে ২০ কোটি চারা উৎপাদন হয়। এই চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এখানে উৎপাদিত চারা মাঝে হাইব্রিড জাতের মরিচ, পেঁপে, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমোটো রয়েছে। এছাড়া মাটি ছাড়াই কোকোপিটেও চারা উৎপাদিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, প্রতি শ চারা গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই হিসাবে শুধু শাহনগরে প্রতি বছরে উৎপাদিত চারার মূল্যই আসে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রানীনগর গ্রামে প্রায় ৩০ জন কৃষক এখন সবজির চারা উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক যুগ হলো সবজির চারা উৎপাদন করি। এ বছর প্রায় ৪ লাখ চারা তৈরি হবে আমার নার্সারিতে।
শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ী ইউনিয়নের বেটখৈর গ্রামের কৃষক মো. ইনজিল শরিফ জানান, ১ বিঘা জমিতে ফুলকপি, মরিচ, টমেটোসহ নানা ধরনের শীতকালীন সবজির চারা তৈরি করেছি। আশা করছি এ বছর ৭ থেকে ৮ লাখ চারা উৎপাদন হবে। এগুলো ঢাকা, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাবে। ধান কিংবা অন্য ফসলের তুলনায় সবজির চারা করায় লাভ বেশি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরে আলম জানান, উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের শাহনগর, চকচুপিনগর, বড়পাথার, খোট্টাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে উন্নতমানের চারা উৎপাদন করে প্রায় ৩শ কৃষক। এসব চারা যায় দেশের প্রায় ২৫টি জেলায়। প্রায় তিন যুগ ধরে চারা উৎপাদন করে সফলতা পাওয়ায় শাহনগর এখন ‘সবজির চারা নগরী’ নামে পরিচিত।
বগুড়ায় সবজির জন্য বিখ্যাত শিবগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মুজাহিদ সরকার জানান, উপজেলায় সবজির ব্যাপক চাষ হয়। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে উপজেলার উথলী গ্রামে কিছু নার্সারিতে বাঁধাকপি, মূলা, ফুলকপির চারা উৎপাদন হয়। যেগুলোর মান খুবই ভালো।
শেরপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রানীনগর, ফুলবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বছরজুড়েই অন্য ফসলের পরিবর্তে সবজির চারা উৎপাদন করছে কৃষকরা। এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছে। উন্নত জাতের চারা লাগিয়ে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক ভোরের কাগজকে জানান, বগুড়ার শাজাহানপুরের শাহনগরসহ বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত সবজির চারার খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। উন্নত ও নিরাপদ সবজির জন্য এসব চারা বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হওয়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে চারা উৎপাদন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. দুলাল হোসেন ভোরের কাগজকে জানান, এ বছর জেলায় ১২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যাতে উৎপাদন আশা করা হচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার টন সবজি। আর এই সবজি উৎপাদনের জন্য যে চারার প্রয়োজন তার সবই বগুড়ার শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, শেরপুর, সদর ও গাবতলী উপজেলায় উৎপাদন করে কৃষকরা। উন্নত মানের চারা উৎপাদনের ফলে বগুড়ায় সবজির উৎপাদনও বাড়ছে। যা রপ্তানিও হচ্ছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করা গেলে চারা শিল্প আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়