চট্টগ্রাম অফিস : অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চকবাজার ওয়ার্ডের নির্বাচনে জয়লাভ করা কাউন্সিলর কিশোর গ্যাং লিডার নূর মোস্তফা টিনু জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত টিনুকে বরণ করতে মিছিল ও মোটরসাইকেল শোডাউনের মাধ্যমে কারাগারের ফটকে ভিড় জমায় তার কর্মী-সমর্থকরা। জামিনের পর কারাফটকের ভেতর থেকে একটি সাদা প্রাইভেট করে গলায় ফুলের মালাসহ পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি পরে বের হতে দেখা যায় টিনুকে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের জামিন মঞ্জুরের কপি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বিকাল ৪টার দিকে জামিনের কাগজপত্র যাচাইবাছাই শেষে কারাগার থেকে টিনুকে মুক্তি দেয়া হয়। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মাজহারুল হক বলেন, আদালত থেকে জামিন আদেশ পাওয়ার পর বিকালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দীন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জামিনের কাগজপত্র ৪র্থ যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা হয়। জামিন মঞ্জুরের আদেশের পক্ষে টিনুর আইনজীবী আদালতে জামিননামা দাখিল করেন।
প্রসঙ্গত অস্ত্র আইনে কারাগারে থাকাবস্থায় গত ৭ অক্টোবর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে অংশ নেন তিনি। ২১ প্রার্থীর সেই নির্বাচনে জামানাত হারিয়েও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিনু। মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে টিনু ৭৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাং লিডার টিনু। নগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে টিনু গ্রুপের সদস্যরা। নগরের চকবাজার এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন টিনু। নগরজুড়ে বিভিন্ন স্পটে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততা রয়েছে গ্রুপটির। এ গ্রুপের দুর্ধর্ষ ক্যাডাররা গড়ে তুলেছে ডজনখানেক উপগ্রুপ। টিনুর পৃষ্ঠপোষকতায় ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালায় এসব গ্রুপ ও উপগ্রুপ। এসব গ্রুপ ও উপগ্রুপের নিয়ন্ত্রকদের বিরুদ্ধেও নগরের বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।
২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় নগরের কার্পাসগোলা এলাকা থেকে টিনুকে একটি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলিসহ আটক করে র্যাব। পরে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে একটি শর্টগান ও ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র আইনে মামলা করে টিনুকে নগরের পাঁচলাইশ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। এই মামলায় এক বছর চার মাস কারাগারে থাকার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পান টিনু। গত ২৩ মে অস্ত্র মামলায় টিনুর জামিন বাতিল করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। গত ২০ জুন ৪র্থ চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ আদালত টিনুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে ২০০৩ সালে অত্যাধুনিক একে-২২ অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয় টিনু। সেই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক হওয়া চকবাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি শিপুকে ছাড়াতে চকবাজার থানার সামনে প্রায় দুঘণ্টা অবরোধ করেছিল টিনুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একাংশ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।