পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

গঙ্গাচড়ায় কাবিটার ৩ প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যানের পকেটে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মজিদ কাজল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) থেকে : প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ চার মাস আগে শেষ হয়েছে। তবুও বাস্তবায়ন হয়নি কাজের বিনিময়ে টাকার (কাবিটা) তিন প্রকল্পের কাজ। অথচ দুটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে পুরো টাকা এবং অপর প্রকল্পটির আংশিক টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
সড়কে মাটি না পড়লেও প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি প্রকল্পের টাকাও উত্তোলন করেছেন চেয়ারম্যান। তৃতীয় প্রকল্পের কিছু টাকা উত্তোলন ও ভাগাভাগি হলেও সড়কের সংস্কার কাজ এখনো শুরু হয়নি। প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে রাস্তা সংস্কার না করে জনদুর্ভোগ বাড়ায় এবং টাকা তুলে নেয়ায় স্থানীয় প্রশাসনকে দুষছেন ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপ্টন কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচির (কাবিটা) আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৩টি প্রকল্প দাখিল করেন। প্রকল্পগুলো হলো- ‘দক্ষিণ বেতগাড়ী প্রামাণিকপাড়ার চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে খাঁ টারীর মোড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার’ কাজে বরাদ্দ ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০ টাকা। ‘আলদাদপুর খিলালগঞ্জ বাজার থেকে চেয়ারম্যানের প্রজেক্ট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার’ কাজে বরাদ্দ ৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৬ টাকা। ইতোমধ্যে দুটি প্রকল্পের পুরো টাকাই উত্তোলন করা হয়েছে। অপর প্রকল্পটি হচ্ছে ‘দক্ষিণ বেতগাড়ী বালাপাড়া আনজুর মোড় থেকে খাঁ টারীর মোড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার’ কাজ। এতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬০৭ টাকা। এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
রাস্তার সংস্কার কাজ ও টাকা তুলে নেয়া প্রসঙ্গে বেতগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান (প্রকল্প চেয়ারম্যান) কামরুজ্জামান লিপ্টন বলেন, দুটি প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করেছি। একটি প্রকল্পে মাটির অভাবে কাজ করতে পারিনি। তাই ওই প্রকল্পের পুরো টাকা উত্তোলন করিনি। সড়কে মাটি না পড়লেও সংস্কারকাজ সঠিকভাবে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুনিমুল হক। তিনি বলেন, দুটি প্রকল্প সঠিকভাবে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। ফলে প্রকল্পের পুরো টাকা চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়।
সরজমিন প্রকল্প এলাকায় গেলে স্থানীয়দের অনেকে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপ্টন ক্ষমতাবলে এসব অপকর্ম করেছেন। তাকে সহযোগিতা করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুনিমুল হক। তার যোগসাজশে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন লিপ্টন।
তাদের অভিযোগ, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে আমরা ১৪ ফুট প্রস্থ রাস্তা পেতাম। প্রামাণিকপাড়ায় রয়েছে মাত্র ৪-৫ ফুট প্রস্থের রাস্তা। আমরা কৃষক, এ রাস্তা দিয়ে আমাদের গরুর গাড়ি চলে না। রিকশা-ভ্যান অনেক কষ্টে পার করতে হয়। প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ তুলে নেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিবেশী এক শ্রমিক জানান, দক্ষিণ বেতগাড়ী প্রমাণিকপাড়ার কাবিটা প্রকল্পের রাস্তায় আমরা অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (৪০ দিনের কর্মসূচি) শ্রমিকরা মাটি ভরাট করেছি। স্থানীয়দের কয়েকজন এ বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করেন। দক্ষিণ বেতগাড়ী খাঁ টারীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাস্তায় মাটিকাটা হয়নি। ফলে চলাচলে দুর্ভোগ লেগেই আছে।
প্রকল্পে রাস্তার প্রশস্ত ১৪ ফুটের পরিবর্তে ৪ ফুট থেকে ১১ ফুট পর্যন্ত পাওয়া গেছে। কোথাও ১৪ ফুট রাস্তা পাওয়া যায়নি- এমন তথ্য তাকে জানানো হলে পিআইও মুনিমুল হক জানান, প্রকল্প এলাকা পরিবর্তন করা হয়েছে। সব প্রকল্পে ১৪ ফুট রাস্তা রয়েছে। তবে পরিবর্তিত প্রকল্পের অনুমোদন দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলীমা বেগম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, প্রকল্প তিনটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়