কাগজ ডেস্ক : রাজনৈতিক সংকটে টালমাটাল সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতার দখল নিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী। বন্দি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদকসহ সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এবং সরকার সমর্থক রাজনৈতিক নেতারা। অন্যদিকে সুদানে অস্ত্রের মুখে একটি গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন বিশেষ দূত জেফ্রি ফেল্টম্যান। রয়টার্স জানায়, গতকাল সোমবার প্রথম প্রহর থেকে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির রাজধানী খার্তুমে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
জনসাধারণের চলাচলে আরোপ করা হয়েছে কড়াকড়ি। তবে এর মধ্যেও শহরের বিভিন্ন এলাকায় সুদানের জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। দুবাইভিত্তিক আল আরাবিয়া টেলিভিশন জানায়, রাজধানী খার্তুমে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত। খার্তুমে ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। এ নিয়ে সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি এখনো আসেনি। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন স্বাভাবিক সময়ের মতই তাদের সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অভ্যুত্থান বিষয়ে কোনো খবর নেই সেখানেও। রয়টার্স জানায়, সেপ্টেম্বরের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে যে তিক্ততা ও টানাপড়েন শুরু হয়েছিল, গতকালকের ঘটনাপ্রবাহ তারই পরিণতি। সৌদি আরবের মালিকানাধীন দুবাইভিত্তিক আল হাদাথ টিভি সর্ব প্রথম সুদানের প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা ফয়সাল মোহাম্মদ সালেহর আটক হওয়ার খবর দেয়। এরপর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার খবর আসে।
আল জাজিরা জানায়, সুদানের তথ্যমন্ত্রী হামজা বালোউল, ক্ষমতাসীন সার্বভৌম কাউন্সিলের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল ফিকে সুলাইমান, শিল্পমন্ত্রী ইব্রাহিম আল শেখ, খার্তুমের গভর্নর আইমান খালিদও রয়েছেন আটক হওয়া নেতাদের মধ্যে। এর মধ্যেই সামরিক বাহিনীর একটি দল রাজধানী খার্তুমে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অভিযান চালিয়ে তাকে গৃহবন্দি করেছে বলে খবর দেয় আল হাদাথ টিভি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বরাত দিয়ে স্কাই অ্যারাবিয়াও একই খবর দেয়।

এদিকে তথ্য মন্ত্রণালয় পরে জানায়, গৃহবন্দি অবস্থা থেকেই এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক সুদানের জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর জানা যায়, আপসে রাজি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদককে ‘অজ্ঞাত স্থানে’ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সুদানের পেশাজীবীদের সমিতিও সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানিয়েছে। মার্কিন বিশেষ দূত জেফ্রি ফেল্টম্যান বলেন, সুদানে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করে সামরিক অভ্যুত্থানের খবরে তার দেশ উদ্বিগ্ন। উল্লেখ্য, সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে ২০১৯ সালে সরিয়ে দেয়ার পর সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর নড়বড়ে এক ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির মধ্য দিয়ে গত দুই বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশটি। গত শুক্রবার এক বক্তৃতায় দেশটির বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে একটি রোডম্যাপ দেন এবং সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে তা দেশের ভবিষ্যৎকে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে বলে হুঁশিয়ার করেন।