চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা : চালকের সহকারী শাহীরুল এখন কোটিপতি

আগের সংবাদ

তিস্তার তাণ্ডবে লালমনিরহাটে পথে বসেছে হাজারো পরিবার

পরের সংবাদ

চকরিয়ায় ওএমএস সামগ্রী কালোবাজারে বিক্রি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মিজবাউল হক, চকরিয়া (কক্সবাজার) থেকে : কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত পৌরসভার চারজন ডিলারের মাধ্যমে ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) চাল-আটা বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব চাল-আটা বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও ‘ফুরিয়ে গেছে’ অজুহাতে ডিলাররা দুপুর ১২টার আগেই বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এভাবে প্রতিদিন অবশিষ্ট থাকা চাল তারা কৌশলে কালোবাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়ে চলতি অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত দৈনিক ৬ হাজার কেজি বা ৬ টন করে চারজন ডিলার কমপক্ষে ৪৩৫ টন চাল উত্তোলন করেছেন। দুপুরের পর মোকামে বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে তারা উল্লিখিত সময়ে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ২০০ টন সরকারি মূল্যের ৩০ টাকা দামের চাল কালোবাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দামে বিক্রি করে অন্তত ২০ লাখ টাকা হরিলুট করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, চকরিয়া পৌরসভার চারটি পয়েন্টে ওএমএস চাল আটা বিক্রিতে নীতিমালা লংঘন হচ্ছে। পাশাপাশি যিনি চাল কিনতে আসবেন, তার টিপসই সংরক্ষণ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
পক্ষান্তরে ডিলাররা তৈরি করছেন টিপসই সংরক্ষণ তালিকা। এছাড়া বরাদ্দ উত্তোলন ও বিপণনের ক্ষেত্রে চাহিদাপত্র দাখিলের নিয়ম থাকলেও তদারক কর্মকর্তাদের কাছে এসব বিষয় উপস্থাপন করা হচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা খাদ্য অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তপন মল্লিকের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এসব চাল-আটা বিক্রিতে অনিয়ম চলে এলেও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমনকি নজরদারি না থাকায় গরিবদের জন্য বরাদ্দকৃত বেশির ভাগ চাল কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তা ও কতিপয় ডিলার। জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনার আলোকে গত ২৫ জুলাই থেকে চকরিয়া পৌরসভার বিজয় মঞ্চ, ভাঙ্গারমুখ, থানা সেন্টার ও পালাকাটা স্টেশন পয়েন্টে রশিদ আহমদ, ইয়ার মোহাম্মদ, বেলাল উদ্দিন বিজু ও নুরুল হক নামের চারজন ডিলার ওএমএস কর্মসূচির চাল-আটা বিপণনের দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রতিদিন এসব ডিলার পয়েন্টে উত্তোলনকৃত চাল-আটা সঠিকভাবে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারক করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার কর্মকর্তাকে টেক অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তাদের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের একাডেমিক সুপারভাইজার রতন বিশ্বাসকে চকরিয়া বিজয় মঞ্চ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনকে ভাঙ্গারমুখ, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা গণেশ যাদবকে থানা সেন্টার ও উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আমির হোসেন ইমনকে পালাকাটা পয়েন্টে তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কার্যক্রম শুরুর প্রথমদিকে উল্লিখিত টেক অফিসাররা নির্ধারিত পয়েন্টে গিয়ে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি কার্যক্রম তদারক করলেও এক মাসের বেশি সময় ধরে যথাসময়ে উপস্থিত থাকছেন না। এ সুযোগে ডিলাররা বরাদ্দের অর্ধেক পরিমাণ চাল-আটা বিক্রি করে ‘ফুরিয়ে গেছে’ অজুহাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুপুরের পর বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এতে বেশির ভাগ ভোক্তা সাধারণ চাল-আটা না পেয়ে ফেরত চলে যেতে বাধ্য হন। এতে অবশিষ্ট থাকা চাল-আটা বিক্রি করা হচ্ছে কালোবাজারে।
তদারক কার্যক্রমে যথাযথ সময় দিতে না পারার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের একাডেমিক সুপারভাইজার রতন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ইউএনও আমাকে তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন, এটা ঠিক। তবে আমি নিজের অফিসের দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিনই ওএমএস চাল-আটা বিক্রি কার্যক্রম দেখভাল করতে পারছি না। সপ্তাহে একবার পয়েন্টে যাই। ওই সময় ভোক্তা সাধারণের উপস্থিতি দেখি। তাদের মাঝে চাল-আটাও বিক্রি করা হয়।
চকরিয়া পৌরসভার চারটি পয়েন্টে খাদ্য বিভাগের ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রির জন্য চারজন ডিলার রয়েছেন। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চার ডিলারকে ৬ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। একজন ডিলার দেড় টন অর্থাৎ ১ হাজার ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ পান। একাধিক পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে আসা ব্যক্তিরা চাল পান ৫ কেজি করে। দুপুরের আগেই বলা হয় চাল ফুরিয়ে গেছে। এভাবে দেড় টন চালের অর্ধেক বিক্রি করে বাকি চাল কালোবাজারে চলে যাচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক বলেন, উত্তোলনকৃত চাল-আটা ডিলাররা সঠিকভাবে বিপণন করছেন। তারা যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম করতে না পারে সে জন্য ইউএনও চারজন কর্মকর্তাকে টেক অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন। পাশাপাশি খাদ্য অফিস থেকেও আমি লোক পাঠিয়ে মনিটরিং করছি।
কক্সবাজার জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুদত্ত চাকমা বলেন, চকরিয়া পৌরসভা এলাকায় ওএমএস চাল-আটা বিক্রিতে কিছু অনিয়মের তথ্য শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ডিলাররা যাতে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা করতে না পারে সে জন্য খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিকল্প উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়