আফজাল হোসেন। দেশের নন্দিত অভিনয় শিল্পী ও নির্মাতা। প্রায় দুই যুগ পর মঞ্চে অভিনয় করবেন তিনি। নাটকের নাম ‘পেন্ডুলাম’। মাসুম রেজার রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিচ্ছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। এটি যৌথভাবে প্রযোজনা করছে ঢাকা থিয়েটার ও দেশ নাটক। অনেক বছর পর মঞ্চে অভিনয় করা প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘নতুন কোনো সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারাটাই তো আনন্দের। এই বয়সে এসে আবারো মঞ্চে অভিনয় করব। এর জন্য একটু এক্সাইটমেন্ট তো কাজ করছেই। অনেক বছর মঞ্চে অভিনয় না করলেও ঢাকা থিয়েটারসহ বিভিন্ন নাট্যদলের একাধিক নাটকে সেট ডিজাইন করেছি, পোস্টার ডিজাইন করেছি। এছাড়া আমার নাট্যদলের বিভিন্ন কর্মযজ্ঞের সঙ্গে থাকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেক দিন অভিনয় করা হয়নি। প্রায় দুই যুগ টেলিভিশন নাটকেও খুব বেশি অভিনয় করিনি। মঞ্চেও অভিনয় করা হয়নি। এই বয়সে অভিনয় করতে মঞ্চে দাঁড়ানো আনন্দের।’ ‘পেণ্ডুলাম’ নাটকে কীভাবে যুক্ত হয়েছিলেন জানতে চাইলে নন্দিত এই অভিনয় শিল্পী বলেন, ‘মূলত করোনার লকডাউনে যখন একেবারে ঘরবন্দি হয়ে আছি তখনই নাটকটিতে কাজ করার পরিকল্পনা হয়। এই নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই আমার ভীষণ কাছের মানুষ। নাসির উদ্দিন ইউসুফের মতো নন্দিত নাট্যনির্দেশকের মঞ্চ নির্দেশনায় অভিনয় করছি। আর মাসুম রেজা তো এই সময়ের ভীষণ মেধাবী নাট্যকার। সহশিল্পী হিসেবে আছেন নাজনীন চুমকি ও কামাল আহমেদ। আমরা করোনার লকডাউনের সময়টাতে অনলাইনে মহড়া করেছি। সপ্তাহ দুয়েক হলো মহড়া কক্ষে শারীরিক উপস্থিতিতে মহড়া করছি। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হয়তো মঞ্চে আসতে পারে।’ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়নৈপুণ্যে হাজারো মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও পরে বিজ্ঞাপননির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েছেন আফজাল হোসেন। তার শুরুটা হয়েছিল মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে। পরে জীবিকার ব্যস্ততায় মঞ্চে অভিনয় করেননি প্রায় দুই যুগ। দীর্ঘ বিরতির পর আবারো মঞ্চে অভিনয় করতে যাচ্ছেন এই নন্দিত অভিনয়শিল্পী। আফজাল হোসেন বলেন, ‘জীবিকার ব্যস্ততার কারণে এই সময়টাতে মঞ্চে অভিনয় করা হয়নি। টেলিভিশন নাটকেও হাতেগোনা কিছু নাটকে অভিনয় করেছি। তবে থিয়েটার থেকে দূরে ছিলাম না।’ নাট্যসংগঠন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রায় চার দশক আগে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেছিলেন আফজাল। এই নাট্যদলে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন শিমূল ইউসুফ, হুমায়ুন ফরীদি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সুবর্ণা মুস্তাফাসহ অনেককে। মূলত একই নাট্যদলে কাজ করার সুবাদে আফজাল-সুবর্ণা-ফরীদি হয়ে ওঠেন বন্ধু। পরে এই বন্ধুত্বের গল্প দেশজুড়ে আলোচিত হয়। আর ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ। এছাড়া অসংখ্য গুণী অভিনয়শিল্পীর জন্ম দেয়া ঢাকা থিয়েটার মূলত ছিল আফজাল হোসেনের শিল্পমানস গড়ার মূল ভিত্তি। অনেক দিন পর নাসির উদ্দিন ইউসুফের নির্দেশনায় মঞ্চে অভিনয় প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘নাসির উদ্দিন ইউসুফের নির্দেশনায় কাজ করাটা সব সময়ই আনন্দের। অনেক কিছু শিখি।’ জানা যায় ২০১৮ সালে ‘পেন্ডুলাম’ নাটকটি লিখেছেন মাসুম রেজা। মূলত তিনটি চরিত্র মঞ্চে অভিনয় করবে। এতে রতন চরিত্রে দেখা যাবে আফজাল হোসেনকে। আর লাসিং ও এসপ চরিত্রে দেখা যাবে নাজনীন চুমকি ও কামাল আহমেদকে। নাটকটি নগর প্রেক্ষাপটে। একজন সাধারণ মানুষের বদলে যাওয়ার গল্প। পুঁজিবাদী সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে অসঙ্গতির সময়ে বেড়ে ওঠা একজন মানুষের প্রায় শেষ বয়সে এসে তার অবস্থাটা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
টেলিভিশন নাটকের কাজ প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, “আমি তো এক যুগের বেশি সময় ধরে খুব বেশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করিনি। ‘ছোটকাকু’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক কয়েক বছর ধরে নিয়মিত নির্মাণ করছি। করোনার জন্য এটির শুটিংও বন্ধ ছিল। আবার শুরু করেছি। আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনীভিত্তিক একটি ডকু ফিকশন নির্মাণ করছি। নাম ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’। এটির ব্যাপ্তি দুই ঘণ্টার। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অনুদানে নির্মিত এই ডকু ফিকশনটি লিখেছেন আনজীর লিটন ও চিত্রনাট্য করেছেন মাসুম রেজা। স্বামী, স্ত্রী ও তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে এই ডকু ফিকশনের গল্পটা এগিয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে তৈরি হলেও এটি তার জীবনী নয়। খুব আলাদা ধরনের গল্প।”