গুলিস্তানে বাস উল্টে ২ কাবাডি খেলোয়াড় আহত

আগের সংবাদ

মণ্ডপে হামলার নেপথ্যে কারা

পরের সংবাদ

নোয়াখালী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১৫ হাজার অবৈধ অটোরিকশা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : জেলার প্রধান সড়কগুলোতে অনেক আগে থেকেই ৩ চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে জেলা শহরের প্রধান সড়ক, ৯টি উপজেলার উপপ্রধান সড়ক এবং শাখা সড়কগুলোতে নিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অনিবন্ধিত আরো প্রায় ১৫ হাজার অটোরিকশা।
জেলায় প্রায় আড়াই বছর ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে রাস্তায় নামা বন্ধ হয়নি নিত্যনতুন অটোরিকশার। বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিয়ে সড়কে চলছে এসব যান। শুধু অনিবন্ধিত নয়, নিবন্ধিত অটোরিকশাগুলো চাঁদা দিয়ে অবাধে চলছে মূল সড়কে। অভিযোগ রয়েছে, জেলায় পরিবহন খাতের শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকেই মাসে চাঁদাবাজি হয় ১০ কোটি টাকার বেশি।নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত আড়াই বছরে একদিকে যেমন শতকোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার, আবার জেলার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ড থেকেই শ্রমিক-মালিক নেতা সমিতির নামে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ও মাসিক হিসেবে আদায় করছেন চাঁদা। সমিতির চাঁদা হিসেবে পরিচিত ‘জিবি’ নেয়ার পাশাপাশি লাইনম্যান, পৌর টোল ও পুলিশের নামেও মাসিক চাঁদা তোলেন এসব পরিবহন নেতা।
অটোরিকশাচালক কামরুল ইসলাম, আলা উদ্দিন, নুরুল আমিন অভিযোগ করেন, তারা যা আয় করেন তার বেশির ভাগই চলে যায় রাস্তায়। তারা জানান, জেলা সদরের সোনাপুর জিরো পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়েক হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করে। প্রতিদিন সোনাপুর জিরো পয়েন্টে এসেই প্রতিটি অটোরিকশাচালককে শ্রমিক-মালিক সংগঠনকে জিবি হিসেবে দিতে হয় ৪০ টাকা। এছাড়া জিরো পয়েন্টের লাইনম্যানকে ১০ টাকা, পৌর টোল ১০ টাকা, সোনাপুর থেকে মাইজদী যাওয়ার পর লাইনম্যানকে ১০ টাকা, বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় টোল হিসেবে ১৫ টাকা এবং লাইনম্যানকে দিতে হয় ২০ টাকা। প্রধান সড়ক থেকে শাখা সড়কে ঢুকলেও দিতে হয় চাঁদা। এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি অটোরিকশাকে ১০০-১৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এটা হলো দৈনিক হিসাব। মাস হিসাবেও চাঁদা দিতে হয় চালকদের।
অটোরিকশাচালকরা জানান, প্রতি মাসে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে অটোরিকশা সংগঠনের নেতারা সোনাপুরের প্রতিটি অনিবন্ধিত অটোরিকশা থেকে ৩০০ টাকা ও নিবন্ধিত অটোরিকশা থেকে ২০০ টাকা, মাইজদীতে ২০০ টাকা ও বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় ২০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন।
এই চাঁদা শুধু সোনাপুর-মাইজদী কিংবা চৌরাস্তায় নয়, জেলার প্রতিটি উপজেলা স্ট্যান্ডের শ্রমিক-মালিক নেতারা এই চাঁদা আদায় করেন অভিযোগ করে চালকরা বলেন, ব্যক্তিগত খরচ, গ্যাস বিল ও চাঁদার টাকা উপার্জনে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই বাধ্য হয়েই যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন তারা। অটোরিকশা ও চাঁদা আদায়ের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, জেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ২৮ হাজার ৪৩৮টি অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় হয় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি। আর দৈনিক গড়ে ১০০ টাকা হিসাবে বিভিন্ন সড়কে চাঁদা বাবদ মাসে আদায় করা হয় ৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি।
নোয়াখালী ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. বখতিয়ার উদ্দীন বলেন, বর্তমানে সড়কে ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, জেলায় ২০-২৫ হাজার অটোরিকশা রয়েছে। যার কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি বছরের ২০ মে আমি এই জেলায় যোগদানের পর সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে সমিতিতে ভর্তি বাণিজ্য, মাসিকসহ সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করে দিয়েছি। অনিবন্ধিত ও নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে এবং মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাজমুল হাসান বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে নিয়মিত আমরা অভিযান চালিয়ে আসছি।
সড়কের অবস্থানের দিক বিবেচনায় জেলা পরিবহন কমিটির সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বৈধ অটোরিকশার ক্ষেত্রে অন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়