কাগজ প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত সমস্যার মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা মানুষের উদ্বেগ আরো বাড়াতে পারে। আইএমএফ বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আর আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এবার তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক-এডিবির পর এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে চাপে রয়েছে দেশের মানুষ। এই পূর্বাভাসটি সত্য হলে এ চাপ আরো বেড়ে যেতে পারে। সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আর আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত আইএমএফের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা কোনো বিশ্লেষণ নেই। শুধু দেশওয়ারি ছকে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে প্রক্ষেপণ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তবে এর গতি দুর্বল হয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনার ‘ডেল্টা ধরন’-এর সংক্রমণ এবং উন্নয়নশীল ও নি¤œ আয়ের দেশগুলোতে প্রত্যাশিত টিকাদান না হওয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ২০২২ সালে হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’-এ আইএমএফ বলেছিল, ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। মঙ্গলবার তা থেকে দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে নতুন এই পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমএফের প্রতিবেদনে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হবে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আইএমএফের সদস্য ১৮৮টি দেশের অর্থনীতি কেমন যাবে, তা নিয়ে বরাবরের মতো এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশসহ কিছু দেশের ক্ষেত্রে প্রক্ষেপণ অর্থবছরের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে। বাকি সব দেশের তথ্য দেয়া হয়েছে ক্যালেন্ডার বছরকে ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা চলাকালে আইএমএফ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
আইএমএফের মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়বে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এবার তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আইএমএফের মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়। তবে মহামারির ধাক্কায় ওই অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ৭ অক্টোবর প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। আরেক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে। বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।