ঢাকা সেনানিবাসে এনআইডি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন

আগের সংবাদ

যশোর বোর্ডের হিসাব থেকে আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন : জালিয়াতির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

পানগুছির অব্যাহত ভাঙনে বদলে যাচ্ছে মোরেলগঞ্জের মানচিত্র

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম জসিম উদ্দিন, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) থেকে : পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙনে প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় উপজেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের মানচিত্র। প্রতিদিন ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। বসতবাড়িসহ বহু প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট চলে গেছে নদীগর্ভে। গত ৫০ বছরে পানগুছি নদীর আয়তন বেড়েছে তিনগুণ। এক কিলোমিটারের বেশি এখন নদীটির প্রশস্ততা। এরই তীরে উপজেলার ৩ লাখ লোকের বসতি।
দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এই নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরেও সেই স্বপ্নের বেড়িবাঁধের দেখা মেলেনি। বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আন্দোলন, মানববন্ধন করেছে। মন্ত্রী, এমপি ও পাউবোর কর্মকর্তারা পরিদর্শনও করেছেন বহুবার। বেড়িবাঁধের দাবিতে ডিও লেটারসহ দৌড়ঝাঁপও করেছেন তারা। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোনো কিছুই দেখতে পারেনি এলাকাবাসী।
গত ৫০ বছরে শুধু উপজেলা সদর থেকে নদীতে চলে গেছে খাদ্যগুদাম, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, টেলিফোন অফিস, আব্দুল আজিজ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এসিলাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ভবন, ডাকবাংলো, বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ কোয়ার্টার, আনছার ময়দান, বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিস, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, থানা জামে মসজিদ, সার্বজনীন হরিসভা মন্দির, শ্মশান ঘাটসহ বহু প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট। বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে গাবতলা, কাঁঠালতলা, বারইখালী, ফেরিঘাট, কুমারখালী, সন্নাসী, শ্রেণিখালী, ঘষিয়াখালী, সোনাখালী, ফুলহাতাসহ ২০টি গ্রাম।
কয়েক বছর ধরে পানগুছি নদীর ভাঙনে শুধু মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৩টি গ্রামের কমপক্ষে ৪০০ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। গাবতলা গ্রামের ২৫ একর জমি ধসে গেছে নদীতে। সিডর, আইলা, ইয়াসের পরও ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি গাবতলা থেকে পশুরবুনিয়া অভিমুখে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ডিও লেটার দেন। ডিও লেটারে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার পূর্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে পোল্ডার নং-৩৫/২ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, যা অদ্যাবধি বাস্তবায়িত হয়নি।’
২০২১ সালের মে মাসে বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী, বহরবুনিয়া, বলইবুনিয়া ও পঞ্চকরণ ইউনিয়নের নদী-তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে নদী শাসন কার্যক্রম শুরু হবে। রাস্তাঘাট পুনর্নির্মাণ করা হবে। সন্নাসী থেকে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।
সংসদ সদস্যের পরিদর্শনকালে নদী-তীরবর্তী হাজার হাজার নারী-পুরুষ সেøাগান দেন- ‘ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহামুদুন্নবী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এইচএম মাহমুদ আলী ও খাউলিয়া ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন বলেন, পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙন প্রতিরোধে জরুরিভিত্তিতে সন্নাসী লঞ্চঘাট থেকে মোরেলগঞ্জ শহর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে।
সরজমিন দেখা যায়, পানগুছি নদী-তীরবর্তী গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের মুখে গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, কাঁচা-পাকা রাস্তা। অনেক পরিবার ভাঙনের কবলে বাড়িঘর হারিয়ে শহরমুখী কিংবা অন্যত্র বসবাস করছে। কমিউনিটি ক্লিনিকটিও ভাঙনের মুখে। আতঙ্কে রয়েছে নদী-তীরবর্তী ৩০টি পরিবার। গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, মসজিদ, খাউলিয়া ও গাবতলা ব্রিজ এখন হুমকির মুখে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইতোপূর্বে নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নতুন করে ভাঙনের বিষয়টিও অবহিত করা হবে। যাতে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়