বিজিএমইএ সভাপতি : বন্ধ মিল চালু হলে ফেব্রিক্সের চাহিদা মেটানো সম্ভব

আগের সংবাদ

খাদ্য নিরাপত্তাই প্রধান চ্যালেঞ্জ : সরকারি হিসাব মতে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও চালসহ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়

পরের সংবাদ

আহমদ কবিরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আহমদ কবিরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সুদীর্ঘ ও জটিল। বিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষ পর্যন্ত আমরা সম্পর্কিত ছিলাম নানা ক্ষেত্রে, নানা পর্যায়ে, নানা আপদে বিপদে। আহমদ কবির আমাকে সেই চট্টগ্রাম কলেজ জীবন থেকেই ‘মুসা ভাই’ বলে ডাকতেন। আহমদ কবিরের দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ঢাকাতে, তার স্ত্রী নীলুফার বেগম আমাকে ডাকতেন ‘মুসা মামা’। কবিরের তিন কন্যা উপমা, শৈলী ও মিত্রার কাছে আমার পরিচয় ‘মুসা চাচা’। ভাই, মামা ও চাচা এই তিন সম্বোধনে আমি যে বাড়িতে সম্বোধিত হই সেটা হচ্ছে কবির পরিবারের সঙ্গে। আমার জটিল সম্পর্ক একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে। চট্টগ্রাম কলেজে আমাদের ক্লাসে দুজন নারী সংগীত শিল্পী ছিলেন একজন লীনা রায়, অপরজন দিলারা বেগম, তাদের দুজনই শহরবাসী। আমরা যারা গ্রামাগত তারা মাঝেমধ্যে এদের বাড়িতে যেতাম। বিশেষ করে দুজনের মা-ই আমাদের স্নেহ করতেন। খালার সতীর্থ হিসেবে নীলুফারের কাছে মামা নামে অভিহিত হই। সে তখন চট্টগ্রামের এনায়েত বাজারের একটি স্কুলগামী মেয়ে। সুতরাং ‘নীলু’ তার মামাকে মামাই ডাকবেন, ওদিকে আহমদ কবিরের এক ক্লাস উপরে থাকার ফলে আমি তার ‘ভাই’ হয়ে যাই। তখন আর দুজনের সম্বোধনের মধ্যে কোনো রফা হলো না। আমি কবিরের কাছে ভাই, নীলুর কাছে মামা। আর তিন মেয়ে বাবার অনুগামী হয়ে ‘চাচা’ বানিয়ে নিল। আমি এই পরিবারের ভাই, মামা ও চাচা। অথচ আমাদের দুজনের বাড়ির মাঝখানে একটি পাহাড়, যাকে লোকে সীতাকুণ্ড পাহাড় কিংবা চন্দ্রনাথ পাহাড় হিসেবে জানে। পাহাড়ের পূর্বে আমাদের গ্রাম আর পাহাড়ের পশ্চিমে কবিরদের বাড়ি। ওদের বাড়ি মিরসরাই, মিঠাছড়া গ্রামে, আর আমাদের হলো ফটিকছড়ির ধর্মপুর গ্রামে। আমাদের পরিচয় চট্টগ্রাম কলেজের পর্তুগীজ আমলের ভবনের করিডোরে।

আমার অনার্স পরীক্ষা
তখন তিন বছরের অনার্স পরীক্ষা ছিল। আমি পরীক্ষা দিলাম। আলোর বিয়ে হয়ে যাওয়ার ফলে সে বছর সে আর পরীক্ষা দিতে পারল না। পরের বছর আহমদ কবিরদের সঙ্গে পরীক্ষা দেয়। ফলে আলো আমার যেমন সতীর্থ তেমনি কবিরেরও সতীর্থ। ১৯৬৫ অনার্স পরীক্ষায় আমি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম, পরের বছর আহমদ কবির প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। তারপর আমি গবেষণায় মনোযোগ দিই, কবিরও কর্মজীবনে প্রবেশ করে।

কর্মজীবনের সূচনায়
কবির যতদূর মনে হয়, মুহম্মদ আবদুল হাই বিদেশ যাওয়ার ফলে বিভাগে অস্থায়ী শিক্ষকের পদে কাজে যুক্ত হয়। মুহম্মদ আবদুল হাই বিদেশ যাওয়ার ফলে আমার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পড়ে মুনীর চৌধুরীর কাছে। তিনি মার্কিন মুলুক থেকে ভাষাবিজ্ঞানে এমএ করে এসেছিলেন। তিনি এমএ ক্লাসে ভাষাবিজ্ঞান পড়াতেন। তখন আমিও কবীরের সঙ্গে মুনীর চৌধুরীর ভাষাবিজ্ঞান ক্লাসে অংশগ্রহণ করতাম। আমি ভাষাবিজ্ঞান পড়েছিলাম কাজী দীন মুহম্মদের ক্লাসে। তিনি ব্রিটিশ স্কুলের ছাত্র, আর মুনীর চৌধুরী হাভার্ডে ভাষাবিজ্ঞান পড়েছিল। ফলে ঢাকায় বসেই আমি দুই স্কুলের অর্থাৎ লন্ডন স্কুল আর হাভার্ড স্কুলের ভাষিক বিশ্লেষণের তারতম্য বুঝতে পারি।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়
আহমদ কবির ঢাকা এসে আজিমপুরে অবস্থান নেয়। আমিও তখন সপরিবারে আজিমপুর চীনা বিল্ডিংয়ে অবস্থান করি। আর দিলারা আলো, তার মা ও স্বামী প্রখ্যাত গীতিকার মাসুদ করিম দায়েম ম্যানসনে বাসা নেন। ফলে আমাদের চট্টগ্রাম কলেজের পরিচয় আজিমপুরে এসে বন্ধনে পরিণত হয়। কবিরের বিয়ের দৌত্য করেছিলেন দিলারা আলো। সুতরাং নীলু ও কবির চীনা বিল্ডিং এসে গেল। কিছুদিন পর অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের পর আজিমপুরের সরকারি বাসায় আমাদের প্রিয় শিক্ষক প্রখ্যাত নাট্যকার মমতাজউদ্দিন আহমদ ও এসে যান। আমাদের আড্ডার সদস্যদের একেক জনের অবস্থান একেক জায়গায় ছিল। মাসুদ করিম যশোর থেকে, মমতাজউদ্দিন মালদাহ থেকে কবির মিঠাছড়া থেকে আমি ধর্মপুর থেকে এসে একটি কসমোপলিটন গ্রুপ হয়ে যায়।

তথ্যের অভাব
আহমদ কবির সম্বন্ধে কিছু তথ্য অনুসন্ধানের জন্য বাংলা একাডেমির লেখক অভিধান দেখলাম। বর্ণক্রম অনুযায়ী তার নাম থাকতে পারত আহমদ আমিন চৌধুরী ও আহমদ আশরাফের মাঝখানে। অভিধানটির ৮০ পৃষ্ঠা। পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ ১৯৯৮ ফেব্রুয়ারি। লজ্জিত ও মনোক্ষুণ্ন হয়ে অন্যত্র অনুসন্ধান করলাম।

তারপর
অনুসন্ধানের উৎস হলো বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিক যুগের লেখক আজহার ইসলাম। প্রকাশক অনন্যা, তৃতীয় সংস্করণ আগস্ট ২০০১। আজহার ইসলাম, বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন। অমায়িক ভদ্রলোক। তিনি লিখেছেন (জন্ম ১৯৪৪), পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- আহমদ কবীর একজন সূ² ও বিশ্লেষণপ্রবণ প্রবন্ধকার। তার জন্মস্থান চট্টগ্রাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে তিনি বাংলায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএ অনার্স ও ১৯৬৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে এমএ পাস করেন। পেশা অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রবন্ধ পুস্তক ‘রবীন্দ্রকাব্যে উপমা ও প্রতীক (১৯৭৪)’
আজহার ইসলামকে কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। তার মূল্যায়নধর্মী পরিচিতির জন্য। বাংলা বিভাগের আশি বছর পূর্তি উদ্যাপন কমিটি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। সেই সংকলনে ৮৩ জন প্রাক্তন কৃতবিদ্য বিভাগীয় শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকের কর্মকাণ্ড বিবরণী পাওয়া যায়। সেখানে আহমদ কবিরের ৫টি প্রবন্ধ আছে (আহমদ হোসেন ১৯১৭-১৯৮৬) আহমদ শরীফ (১৯২১-১৯৯১) হাসনাহেনা (১৯২৭-১৯৯৬) লুৎফুল হায়দার চৌধুরী (১৯৩৬-১৯৯১) নাজমা জেসমীন চৌধুরী (১৯৪০-১৯৮৭)। এই মূল্যবান সংকলনের ভূমিকা লিখেছেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান। সেই ভূমিকায় বিভাগীয় শিক্ষক আহমদ কবিরের কোনো উল্লেখ নেই। মদীর নামের কথা নাই বা উল্লেখ করলাম।

বাংলা ভাষা সমিতি
এবার বাংলাদেশ ভাষা সমিতির কথা বলা প্রয়োজন। এই সমিতি গঠিত হয়েছিল ৭ জুলাই ১৯৭৬। এই সমিতি গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের ভাষাসমস্যা ও ভাষাতিরিক্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনার একটি মঞ্চ তৈরি করা। সমিতির একটি মুখপত্র ছিল, শিরোনাম ভাষাপত্র। এই ভাষাপত্রের ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যায় আটটি লেখা ছিল। সম্পাদনা করেছিলেন বশির আল হেলাল। সেই সংকলনে আহমদ কবিরের একটি লেখা ছিল তার নাম ‘যে ভাষায় কথা কই।’
‘যে ভাষায় কথা কই’ প্রবন্ধটি বৃহৎ কলেবরের প্রবন্ধ নয়, মাত্র ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ। শব্দ সংখ্যা হবে আনুমানিক এক হাজার। এই ছোট প্রবন্ধটিতে তিনি ভাষার নানাবিধ বৈচিত্র্য সম্বন্ধে কথা বলেছেন। প্রমথ চৌধুরীর একটি মোক্ষম উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন- ‘যে ভাষার কথা কই সেই ভাষায় লিখতে পারলে লেখা প্রাণ পায়।’

আহমদ কবির ও প্রমথ চৌধুরীর চিন্তার সাযুষ্য
প্রমথ চৌধুরীর ভাষাদর্শের যৌক্তিকতা ও উপযোগিতা সম্বন্ধে বারবার ভাষায় আহমদ কবির তার বক্তব্যকে তুলে ধরেছেন। যিনি প্রমথ চৌধুরীর ভাষাদর্শ বুঝতে চাইবেন এবং সর্বজন মান্যভাষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে চাইবে তাকে প্রবন্ধটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেই চলবে। আমি তার প্রবন্ধের উপসংহারের কতিপয় বাক্য তুলে আলোচনা শেষ করছি। তিনি লিখেছেন-
‘স্বভাষায় শিক্ষিত হওয়া একটা বড় কাজ এবং শিক্ষার যে সুফল দেশের জনসাধারণকে বিলিয়ে দেয়াও বড় জাতীয় দায়িত্ব। বাংলাদেশের সব শ্রেণির শিক্ষিত লোক সে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না এলে জাতির জন্য তা হবে দুর্ভাগ্য, শুধু কবি-সাহিত্যিক বা সাহিত্যের অধ্যাপকদের কাজ হবে বাংলা ভাষা চর্চা করা, আর অন্যেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে- এমন হলে চলবে না। বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, অর্থনীতিবিদ সবাইকে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
কবিরকে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে আমরা একটি সমিতি করেছিলাম। নাম বাংলাদেশ ভাষা সমিতি, এর পেছনে যার সশ্রম প্রণোদনা ছিল তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির কর্মচারী। তার নাম মুহম্মদ হাবিবুল্লাহ। হাবিবুল্লাহ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। সুতরাং তাকে সতর্কতার সঙ্গে এবং স্বচ্ছতার মধ্যে জীবন যাপন করতে হতো।

দু পঙ্ক্তির ভিন্নমত
আহমদ কবির যেহেতু ড্রাফটিং এ দক্ষ। ভাষা সাহিত্যের নিয়মাবলি আমি আর কবির মিলেই করেছি। সেই নিয়মাবলি সমিতির ভাষাপত্রের পরিশিষ্টে আমার মনে হয় একাধিকবার মুদ্রিত হয়। পরিমার্জনার কাজ করেছিলেন বশির আল হেলাল। বশির আল হেলালের বড় ভাই নেয়ামুল বশির ভাষা সমিতির সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর নেয়ামুল বশির স্মারকসংখ্যা প্রকাশ করা হয় এবং সেটা সম্পাদনা করেছিলেন বশির আল হেলাল। আমি একাধিকবার বিদেশ গেলে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন আহমদ কবির। ভাষা সমিতির পত্রপত্রিকাগুলোর দেখভালও করতেন তিনি। তবে সমিতির সভাপতি আহমদ শরীফের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে কার্যকর। ভাষা সমিতির ভাষাতিরিক্ত যে কাজগুলো করেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে এরশাদ আমলে মজিদখান প্রণীত শিক্ষানীতির বিরোধিতা করা। আমি তখন সমিতির সম্পাদক। আমার সঙ্গে লেখাপড়ার কাজ করার জন্য আসত শাহীন আখতার বলে আমাদের এক ছাত্রী। একদিন সে এলে তাকে আমি একটু ডিকেটশন নিতে চলি। তার হস্তাক্ষর ছিল সুন্দর। দু-তিন লাইনের একটি বিবৃতি তাকে ডিকটেটকর করলাম। বিষয় ছিল শিক্ষানীতিতে য বাংলা ইংরেজি আরবির সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, সেটা অবৈজ্ঞানিক ও শিশু মনস্তত্ত্ব বিরোধ। সুতরাং বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক। সুন্দর করে টাইপ করে আহমদ শরীফের স্বাক্ষর নিয়ে আমরা সেটা পত্রিকায় প্রেরণ করি। তখন সারাদেশ সামরিক শাসনের যাঁতাকলে নিশ্চুপ। ভাষা সমিতির এই বিবৃতির পরপর দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী বিবৃতি দিতে শুরু করল। আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলে যাই। এদিকে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী ভাষা সমিতির বিবৃতির রচয়িতার খোঁজ করতে আসে। তখন কবির বলেছে যে, তিনি তো দেশে নেই, বিদেশে চলে গেছেন। গোয়েন্দা বাহিনী বহু কষ্টে সন্ধান পায়, যে আমি হাওয়াই-এ ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে আছি। জেনারেল এরশাদ হাওয়াই হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছিলেন। দেখা গেল ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারের সব বাঙালি দাওয়াত পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আতাহারুল ইসলাম ও আমি দাওয়াত পাইনি।

আহমদ কবির ছিলেন পড়–য়া শিক্ষক
আহমদ কবির যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখানে শিক্ষকতার সম্মানিত পেশা হিসেবে বিবেচিত ছিল। তার বড় ভাই ইতিহাসের ছাত্র ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন এবং মিঠাছড়া স্কুলের প্রধান ছিলেন। তার নাম আবু জাফর আহমদ। তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম সাহেবের সহপাঠী ছিলেন। কবির সেদিক থেকে সিরাজুল ইসলাম সাহেবকে সিরাজ ভাই বলে পরিচয় দিতেন। আমাদের মধ্যে তাকে (ঝওঈ) বলে ডাকার অভ্যাস ছিল।
আহমদ কবিরের শ্বশুর সরকারি কর্মচারী ছিলেন এবং সুনাম ও সততার সঙ্গে জীবন যাপন করেছিলেন। তার ছেলেমেয়েদের সবাই উচ্চশিক্ষিত ছিলেন, কেউ বিজ্ঞানে, কেউ বাংলায়, কেউ বা ব্যবসা বাণিজ্যে। আহমদ কবির বড় মেয়ের জামাই হিসেবে সবার লেখাপড়ার প্রতি দায়িত্ব পালন করতেন। আহমদ কবিরের স্ত্রীও ছিলেন কলেজ শিক্ষক। মায়ের মতো সংসারী মানুষ। তারা তাদের তিন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। মজার ব্যাপার ছিল তারা কম্পিউটার বিজ্ঞানে পারদর্শী কিন্তু যন্ত্রপাতি নির্ভরতা কবিরের একেবারেই ছিল না। তিনি রবীন্দ্রসংগীত পছন্দ করতেন, নিজে সংগীতের রস উপভোগ করতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রয়োজনের তাগিদে তিনি মোবাইল ব্যবহার করতেন। কবির আত্মপ্রচার বিমুখ ছিলেন। শুনেছি বাংলা বিভাগে একাধিকবার তিনি নিজের পদোন্নতির জন্য চেষ্টা না করে অন্যদের পদোন্নতির পথ প্রশস্ত করতেন।
আমরা একবার ভাওয়াল পরগণার নাগরী গ্রামে সানোওল দ্য আসসুমপসার স্মৃতি আবাসস্থল ও সেন্ট নিকোলা গির্জা দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা ছিলাম চারজন ওয়াকিল আহমদ, আহমদ কবির, সাঈদ উর রহমান ও আমি। আমরা রডারিক রোজারিওর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেটি এখনো অপ্রকাশিত আছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আমরা একটু চাঙ্গা হয়ে উঠেছিলাম; এ সময়ে মুনীর চৌধুরী ছিলেন বিভাগীয় প্রধান। তিনি তখন একটি ঝড়পরড়ষরহমঁরংঃরপ জবংবধৎপয ঝঁৎাবু চৎড়লবপঃ-এর সঙ্গে সম্পর্কিত হয়েছিলেন। সহযোগী হিসাবে নিয়েছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে আর সহকারী হিসেবে নিয়েছিলেন আহমদ কবির, ফজলুল হক ও আমাকে।

প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য
একটি দুষ্প্রাপ্য প্রতিবেদনে দেখতে পাচ্ছি যা প্রকাশিত হয়েছিল ঈবহঃবৎ ভড়ৎ অঢ়ঢ়ষরবফ খরহমঁরংঃরপং থেকে ১৯৭৫ সালে। খধহমঁধমব ঝঁৎাবু রহ উবাবষড়ঢ়রহম ঘধঃরড়হং এই নামে। তাতে বাংলাদেশের কোনো উল্লেখ নেই। কারণ ১৯৭১ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব পাকিস্তান উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। আমাদের প্রকল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন মুনীর চৌধুরী।
মুনীর চৌধুরীর তিরোধানের পর সমাজভাষাতাত্ত্বিক জরিপের কাজ তেমন এগিয়ে যায় না। আমরা যারা ছিলাম তারা তার স্থান পূর্ণ করার যোগ্য হতে পারিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়