চিকিৎসকের অবহেলা : জুডো খেলোয়াড় প্রিয়াংকার মৃত্যু

আগের সংবাদ

সুদিন ফিরছে সোনালি আঁশের

পরের সংবাদ

গাড়ি চলবে অটো-গ্যাসে!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) যখন গাড়িতে ব্যবহার হয়, তখন সেটিকে বলা হয় অটোগ্যাস নামে। এলপিজিকে ক্লিন বা গ্রিন ফুয়েল বলেও আখ্যায়িত করা হয়। প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণে উৎপন্ন এ গ্যাসটি পেট্রল ও অকটেনের বিকল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ইঞ্জিনের জন্যও এই জ্বালানি বেশি কার্যকর এবং নিরাপদ। সিএনজির চেয়ে ওজন এক-তৃতীয়াংশ কম। সিলিন্ডারে চাপ কম থাকায় বিস্ফোরণের ঝুঁকিও অনেক কম।

জ্বালানি হিসেবে তেল মানে অকটেন, পেট্রল ও ডিজেল বহুল পরিচিত। গাড়ি চালানোর খরচ কমাতে দেশে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) বা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়। এই গ্যাসের মূল্য কম হলেও ইঞ্জিনের জন্য কমবেশি ক্ষতিকর। সাধারণত আমাদের দেশে যে গাড়িগুলো আমদানি করা হয়, সেগুলো তরল জ্বালানি দিয়ে চালানোর জন্য তৈরি। সিএনজি গ্যাস শুষ্ক হওয়ায় ইঞ্জিনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তেলের খরচ কমিয়ে এবং ইঞ্জিনের ক্ষতি না করে নতুন একটি জ্বালানি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গ্যাসটির নাম লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)।

এলপিজিতে ৪০ শতাংশের বেশি জ্বালানি খরচ সাশ্রয় হয়। তরল হয়ে এই গ্যাস ইঞ্জিনে প্রবেশ করায় আলাদা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না।
গাড়িতে এলপি গ্যাস নেওয়ার জন্য যে সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়, তা সিএনজি সিলিন্ডারের ওজনের তুলনায় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। সিএনজি গ্যাসে ২০০ বারের (বিএআর) অধিক চাপ বা প্রেসার থাকতে হয়। যেখানে এলপিজিতে ৭.৫ বার চাপ বা প্রেসার থাকে। একটি ৬০ লিটার সিএনজি সিলিন্ডারের পরিধি ও দৈর্ঘ্য হয় যথাক্রমে ১০৫৪ ও ১০১৬ মিলিমিটার। এলপিজি সিলিন্ডারের পরিধি ও দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৩১৪ ও ৮৬৩ মিলিমিটার। সিএনজি গ্যাস ইঞ্জিনে ২০০ থেকে ৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপ উৎপাদন করে। এলপি গ্যাসে এই তাপমাত্রা ১৩১ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
প্রতি লিটার এলপিজির মূল্য বর্তমানে ৫০.৫৬ টাকা, যে কারণে যানবাহনে এলপিজি সিলিন্ডার কনভারসনের হার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এলপিজি সিলিন্ডার একবার পূর্ণ করলে তা দিয়ে সিএনজির তুলনায় চার বা পাঁচ গুণ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যায়।
এলপি গ্যাসে সিএনজির তুলনায় কম কার্বন নিঃসরণ হয়। এলপিজির সিলিন্ডারের প্রেশার সিএনজি সিলিন্ডারের তুলনায় মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। তাই এতে বিস্ফোরণের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। সিএনজিতে ২৫ শতাংশ সিস্টেম লস থাকে, যেখানে এলপিজির সিস্টেম লস মাত্র ৫ শতাংশ। সিএনজির মতো দুটি পদ্ধতিতে গাড়িকে এলপি গ্যাস জ্বালানিতে ব্যবহারের জন্য রূপান্তর করা হয়। সিকুয়েনশিয়াল পদ্ধতিতে কম্পিউটার দিয়ে ডায়াগনসিস ও টিউনিং করে গাড়িকে এলপি গ্যাসের জন্য রূপান্তর করা হয় এবং ইনজ্যাকশন পদ্ধতিতে ম্যানুয়েল টিউনিং করেও গাড়িকে রূপান্তর করা হয়।

সস্তা বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে গুণগত মানবিহীন কিট ব্যবহারে সর্তক থাকতে হবে

আশফাক নাবিল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
এ্যাডভান্স এলপিজি ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি লিমিটেড

নিজের যানবাহন/গাড়ী কে অটো এলপিজি তে রূপান্তরিত করার বিষয়ে যদি ভেবে থাকেন তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন উঠে থাকবে যে, জ্বালানী হিসেবে অটো-গ্যাস(অটো-এলপিজি) এর ব্যবহারে ইঞ্জিনে কোন ক্ষতিকর প্রভাব পরবে কিনা? সর্বোপরি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি জানতে চান যে রূপান্তরটি আপনার গাড়ীর ইঞ্জিনকে কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত করবে কিনা।

১. সরকার থেকে গাড়িতে এলপিজি রুপান্তরের অনুমতি লাইসেন্স দেয়া হয়। প্রতিটি ওয়ার্কশপে তুরস্কের বা ইটালির কিট ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তবে ফেসবুকে বাড়িতে গিয়ে এলপিজিতে রুপান্তর করুন নিজের গাড়ি- এ ধরনের প্রচারণার বাস্তব ভিত্তি নাই। পাশাপাশি মানসম্মত কিট দিয়ে গাড়িতে কনভার্সন করলে গাড়ি চলাচলের প্রক্রিয়ায় আপনি থাকবেন নিরাপদও।

২. অটো-গ্যাস(অটো-এলপিজি) পেট্রোল বা ডিজেলের চেয়ে পরিষ্কার জ্বালানী।
তাই এতে গাড়ীর ইঞ্জিনের অংশগুলিতে কোন রকম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
৩. এটি ব্যবহারে গাড়ীর ইঞ্জিনে প্রি-ইগনিশন (নকিং) প্রতিরোধ করে। সাবলীল এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে গাড়ির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৪. অটো-গ্যাস(অটো-এলপিজি) তে রূপান্তরে ক্রমবর্ধমান রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমে যায়
এবং ব্যবহারে গাড়ীর ইঞ্জিন শব্দ এবং কম্পন অনেকটা হৃাস পায়।

৫. এলপিজিতে রূপান্তরে ইঞ্জিন ব্লক, পিস্টন, স্পার্ক প্লাগ, ইগনিশন সিস্টেম, লুব্রিকেশন সিস্টেম এবং ইলেক্ট্রিক্যালস সবই একই থাকে। শুধুমাত্র পরিবর্তন ঘটে জ্বালানী ও জ্বালানির সংগ্রহস্থলে এবং ব্যবহারের সিস্টেমে।
৬. অটো-গ্যাস(অটো-এলপিজি) রূপান্তরিত গাড়ীতে দ্বৈত জ্বালানী (দ্বি-জ্বালানী) ব্যবহারের সুবিধা থাকে। কারন এ ধরনের রূপান্তরিত গাড়ীতে দুটি জ্বালানি ট্যাংক থাকে। একটি জ্বালানি ট্যাংক থাকে অটো-গ্যাস(অটো-এলপিজি) এর জন্য এবং অন্য জ্বালানি ট্যাংক টি থাকে পেট্রলের জন্য। শুধু সুইচ পরিবর্তন করে ব্যবহার করা যায়।

৭. অনেকেই সিএনজি থেকে গাড়ি এলপিজিতে রুপান্তরের সময় পুরানো সিলিন্ডারটিই ব্যবহার করে থাকেন। মনে রাখতে হবে এটি অটো-গ্যাস(অটো-এলপিজি)এ ব্যবহৃত সিলিন্ডার থেকে গঠনগত বৈশিষ্ট্য, কার্যপ্রণালী ও ওজনে অনেক আলাদা এবং ভারী। এসে গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

৮. সস্তা বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে অনুমোদনবিহীন কনর্ভাসন ওয়ার্কশপে এবং গুণগত মানবিহীন কিট ব্যবহারে সর্তক থাকতে হবে। পাশাপাশি অনেক গাড়িতে শুরুতে রুপান্তরের পর পর বেশি গ্যাস খরচ হচ্ছে বলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না। এটি স¦াভাবিক প্রক্রিয়া।

৯. অটোগ্যাস উন্নত দেশগুলোয় গাড়ির প্রধান জ্বালানি। উন্নয়নশীল অনেক দেশও ঝুঁকছে এতে। গাড়ির জ্বালানি হিসেবে অটোগ্যাস যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি পরিবেশবান্ধবও। অটোগ্যাস পরিবহনযোগ্য হওয়ায় দেশের যেকোনো প্রান্তেই ফিলিং স্টেশন করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়