কাগজ প্রতিবেদক : এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বাড়ানো আবশ্যক। পাশাপাশি শুল্ক ও কর কাঠামোর যুগোপযোগীকরণ ও অটোমেশন, পণ্য উৎপাদন ও সাপ্লাইচেইন ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
ডিসিসিআই আয়োজিত গতকাল শনিবার ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণপরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি; স্থানীয় বাজারের উন্নয়ন’ শীর্ষক ভাচুর্য়াল ডায়ালগে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ডায়ালগে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি দাস। এছাড়াও এনবিআর’র সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী, রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ, জাতীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাসার হাওলাদার এবং বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বাপী) মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান প্রমুখ ডায়ালগে নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত সরাসরি ভর্তুকি নানাবিধ সুবিধাদি হ্রাস পাবে, এমতাবস্থায় রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণে আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে আরো অধিক হারে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ শিল্পায়ন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বাণিজ্য সচিব এলডিসি পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীদের ক্যাশ ইনসেনটিভ সহায়তা দিতে না পারলেও, অন্যান্য পন্থায় উদ্যোক্তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার প্রক্রিয়াগুলো আরো সহজীকরণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি জানান, সরকার দেশের ব্যবসা পরিচালনার সূচকে উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এ সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের আরো বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার কমপ্লায়েন্স, ব্রান্ডিং ও আইপিআরর চ্যালেঞ্জসহ অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু শুল্ক-অশুল্ক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে, যা আমাদের স্থানীয় বাজারকেও প্রভাবিত করবে। তিনি জানান, আমাদের জিডিপিতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও সেবা খাতের অবদান প্রায় ৬০ শতাংশ, এছাড়াও ফ্যাশনওয়্যার, ফুটওয়্যার ও ফার্মাসিউটিক্যাল প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এমতাবস্থায় শুল্ক ব্যবস্থাপনা, কর কাঠামো ও ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় বাজারের উন্নয়ন, পণ্য উৎপাদন ও সাপ্লাইচেইন ইকোসিস্টেম ও সর্বোপরি সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করা ডিসিসিআই সভাপতি।
তিনি স্থানীয় বাজারের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য নতুন বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের ওপর জোরারোপ করেন। রিজওয়ান রহমান স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আরো শক্তিশালী করার জন্য ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরো বাড়ানোর আহ্বান জানান।
এলডিসি হতে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজার উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের দক্ষতা ও পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তাব করেন এনবিআরর সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক। দেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সহায়তা, ভ্যাট প্রদানের প্রক্রিয়া আরো সহজীকরণ, অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি বন্ড সিস্টেম অটোমেশনের পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, কোভিড মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেশের উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়েছে এবং সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে অনেকাংশেই সুদ কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা স্বল্পসুদে আর্থিক সহায়তা পাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি জানান, করোনা মহামারির ফলে পর্যটন খাতের ক্ষতির পুষিয়ে নিতে ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।