কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই নারীর

আগের সংবাদ

শাড়িতেই এবার পকেট

পরের সংবাদ

কালো মেঘ কাটবে কবে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর যাবত মৃতপ্রায় বাংলাদেশের সিনেমা জগৎ। নতুন সিনেমা নির্মিত হচ্ছে হাতেগোনা- যেখানে ইতোমধ্যে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা একাধিক সিনেমা অনিশ্চিয়তায় রয়েছে, মুক্তি পাবে কি পাবে না; সেখানে অবশ্য নতুন সিনেমা নির্মাণের প্রত্যাশা করা আর আকাশের চাঁদ ধরতে চাওয়া একই বিষয়। করোনাকালে বিভিন্ন মেয়াদে কয়েকবার লকডাউন দেয়া হয়, তা আবার শিথিল করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জীবনযাত্রা শুরুও হয়েছে অন্যান্য ক্ষেত্রে। কিন্তু সিনেমা জগৎ এখনো আইসিইউ থেকে সাধারণ বেড অব্দি ফিরতে পারেনি। এর মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিকে ওটিটিমুখী করার প্রয়াস চলছে। কিন্তু সফলতা- অধরা। ঢালিউড এখনো ডিজিটাল জগতে দুধের শিশু। তবে সে যাই হোক, বড়পর্দায় সিনেমা দেখার যে এক নস্টালজিক ব্যাপার তা কি আর ঘোলে মানে ওটিটিতে মিটে!
২০২০ সালে করোনার প্রভাব ভয়াবহ অবস্থায় থাকলেও কিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরে সে সংখ্যাটা নগন্য। বছরের আট মাস শেষ হতে চলছে। অথচ মুক্তির তালিকায় ৮টি সিনেমার বেশি নাম পাওয়া যায়নি। এ বছরে মুক্তি পেয়েছে অনন্য মামুনের ‘কসাই’, রায়হান রাফির ‘জানোয়ার’, শিহাব শাহীনের ‘যদি কিন্তু তবুও’, হাবিবুর রহমানের ‘অলাতচক্র’, তৌকীর আহমেদের ‘স্ফুলিঙ্গ’, সেলিম খানের ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’, কামার আহমাদ সাইমনের ‘নীল মুকুট’, এফ আই মানিক পরিচালিত ‘সৌভাগ্য’। এর মধ্যে দু/একটা বাদে সবই মুক্তি পেয়েছে ওটিটিতে। অর্থাৎ সিনেমা হলের অবস্থা, এই আছে এই নেই। এদিকে মুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘পরাণ’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘৫৭০’, ‘পাপ পূণ্য’সহ বিগ বাজেটের একাধিক সিনেমা। কিন্তু সেসব সিনেমার প্রযোজক-নির্মাতারা এখনই তাদের সিনেমাকে মুক্তি দিয়ে বিপদে পড়তে চান না। যেখানে এখনো সিনেমা হল তেমন খোলা হয়নি আবার যেগুলো খুলেছে তাতে দর্শক যাচ্ছে না বললেই চলে। এদিকে গত ঈদুল আজহার আগে বন্ধ হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার রিয়ামহল ও হীরা নামের দুটি সিনেমা হল। চলতি বছরের মে মাসে সিরাজগঞ্জের চালায় বন্ধ হয়েছে নিউ রজনীগন্ধা সিনেমা হল। তার আগে গত বছর রাজশাহী শহরে উপহার নামের সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে সর্বমোট চলমান সিনেমা হলের সংখ্যা ১১০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। সেই সিনেমা হলগুলোর চালচিত্র করোনা মহামারির কারণে অনেকখানি বদলে গেছে। গত চার ঈদ উৎসবে ছিল না তেমন কোনো সিনেমা। সেই কারণে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। এ বিষয়ে প্রদর্শক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে সিনেমা হলগুলো মালিকদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেগুলো এখন খুব বাজে অবস্থার মধ্যে আছে। সিনেমা হলগুলোতে সিনেমা চালানো যাচ্ছে না, সেখানকার কর্মচারীদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারছে না। এভাবে কি চলতে পারে? কবে খুলবে সিনেমা হল, তার ঠিক নেই। হল মালিকরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন। সরকার এগিয়ে না আসলে কিছুই করার নেই সিনেমা হল মালিকদের। বাকিগুলোও একে একে বন্ধ হয়ে যাবে।’ সিনেমা হলকে বাঁচাতে বর্তমান করণীয় কী তা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘সিনেমা হল বাঁচাতে আগে সিনেমার অভাব পূরণ করতে হবে। সেসব সিনেমা হতে হবে মানসম্মত। সহজ শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণে বিদেশি সিনেমা আমদানি করতে দিতে হবে। যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা আবার সবার চাহিদা অনুযায়ী প্রণয়ন করতে হবে। সিনেমা হল সংস্কারে শর্তহীন ঋণ দিতে হবে। নতুন সিনেমা হল নির্মাণে সরকারকে দেয়া প্রতিশ্রæতি পূরণ করতে হবে এবং সিনেমা হলের বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক নয়, শিল্পনীতির আওতায় নিতে হবে। সিনেমা হলে প্রজেক্টর স্থাপন, সংস্কার ও ৬৪টি জেলায় সরকার ঘোষিত সিনেপ্লেক্স নির্মাণ অচিরেই বাস্তবায়ন করতে হবে।’ এদিকে তার সুরে সুর মিলিয়ে মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, ‘যেহেতু দেশীয় ছবি নেই তাই হলিউডের জনপ্রিয় ছবি সিনেমা হলে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হবে। শুধু আমদানি করলে দর্শক সিনেমা হলে আসবে না। এর জন্য দরকার সিনেমা হল আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলা। এ জন্য ইতোমধ্যেই মধুমিতা হলটি সময়োপযোগী করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে মধুমিতা সিনেমা হল ৫৪ বছরে পা দিচ্ছে। এই বর্ষপূর্তিতেই অত্যাধুনিক সিনেমা হল হিসেবে মধুমিতার যাত্রা শুরু হবে। এই উদ্যোগটিই হচ্ছে সিনেমা হলকে ঘুরে দাঁড় করানোর শেষ চেষ্টা। আশা করছি এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে না।’ অন্যদিকে প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘করোনা মহামারিকালে সিনেমা হল খোলার পর বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সেখান থেকে খুব বেশি আশার আলো দেখতে পারেনি সিনেমাগুলো। সিনেমা হল নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য সরকার এক হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছে। এ টাকা দিয়ে সিনেমা হল নির্মাণ ও পুরাতন হল মেরামত করে নতুনভাবে ভালো কিছুই হবে আশা করছি।’
তবে সিনেমা সংশ্লিষ্টরা হাজারো সুপরামর্শে কথা জানালেও পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে সিনেমা হলকে বাঁচানোর উদ্যোগ যদি দ্রুত নেয়া না হয়, তবে ঢালিউড কেবল ইতিহাসের পাঠ হয়ে থাকবে। সুতরাং সিনেমাপ্রেমী সবার প্রত্যাশা, সিনেমা হল সর্বোপরি সিনেমা জগৎকে বাঁচিয়ে তুলতে এক যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুতই তা বাস্তবায়ন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়