ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

বরিশালের আপেল আমড়া : একবার খাইলে মন চাইব আরেকবার খাইতে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : আসেন ভাই আসেন, একটা খাইয়া যান। একবার খাইলে আরেকবার খাইতে মন চাইব। ছিইল্লা-কাইট্টা লবণ লাগাইয়া দিমু, মাত্র ৫ টাকা। এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা আমড়া বিক্রি করছেন বরিশাল নগরীর বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। তাদের হাঁকডাকে কিছুটা বিরক্ত হলেও সাজানো গোছানো কাঠিতে বসানো আমড়া নিয়ে যখন আশপাশে ছোটাছুটি করেন তখন জিব্বায় জল রাখা দায়। ফলগুলোকে ওরা বিশেষভাবে কেটে পরিবেশন করেন। দেখতে দারুণ! এক বিশেষ আকর্ষণ। মনে হবে, এ যেন শিল্পীর কারুকাজ। গোল্ডেন আপেল হিসেবে খ্যাত বরিশালের আমড়া খেতে অনেক সুস্বাদু। তাই এর চাহিদা সমগ্র দেশব্যাপী।
তবে এ অঞ্চলের উৎপাদিত আমড়া গুদামজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুম শেষ হলেই অপেক্ষা করতে হয় আবার একটি বছর। বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত জানিয়েছেন, শুধুমাত্র আমড়া-ই নয়, এ অঞ্চলের উৎপাদিত পচনশীল ফল যাতে নষ্ট হয়ে না যায় এজন্য প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্ষণাবেক্ষণাগার তৈরির জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
আমড়া বাঙালির অতি প্রিয় একটি ফলের নাম। বিশেষ করে বরিশালের আমড়ার খ্যাতি রয়েছে সমগ্র দেশব্যাপী। এ অঞ্চলের আমড়ায় টক-মিষ্টির মিশ্রণে ভিন্ন এক স্বাদ পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় টক। পরিপক্ব হলে খেতে বেশ লাগে। পাকা ফল খুবই মিষ্টি। আমড়ার বেশির ভাগ কাঁচা খাওয়া হলেও ভর্তা, আচার, চাটনি আর পরিপক্ব ফল দিয়ে তৈরি করা যায় জুস, জেলি এবং মোরব্বার মতো লোভনীয় খাবার। গ্রামাঞ্চলের কেউ কেউ গোশতের সঙ্গে আমড়া রান্না করে খান। ডালের সঙ্গেও খাওয়া যায়। আমড়ার শাঁস সাদা। পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। যে কারণে একে গোল্ডেন আপেল বলে।
মাঘ-ফাল্গুনে আমড়ার মুকুল আসে। এর পরে ফল। কচি অবস্থায় ফলের বিচি নরম থাকে। পরিপক্ব হলে আঁটি বেশ শক্ত হয়। অগ্রহায়ণ মাসে ফল পাকে। পাকা ফলের গন্ধ চমৎকার। দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানির জন্য এর ফলন ও গুণগতমান অনেক ভালো। প্রসিদ্ধ হিসেবে সবাই বরিশালের আমড়া বললেও বিভাগের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিকে (নেছারাবাদ) আমড়ার রাজধানী বলা হয়। কারণ, ওখানকার ফলন সবচেয়ে বেশি। ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা এবং বরগুনায়ও আমড়ার ভালো ফলন হয়। এছাড়া দিন দিন আমড়ার উৎপাদন বৃদ্ধি ও উচ্চমূল্য পাওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক মানুষই আমড়া চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভালো ফলনের জন্য আমড়ার উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি আমড়া-১ এবং বারি আমড়া-২ রয়েছে। বারি আমড়া-১ বারোমাসি।
গাছ বামনাকৃতির হয়। তাই বাড়ির ছাদেও লাগানো যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। নাম এফটিআইপি বাউ আমড়া-১।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এ অঞ্চলে আমড়ার আবাদি জমির পরিমান ৩৮০ হেক্টর। আর গত বছর এ অঞ্চলে ৩ হাজার ৮০০ টন আমড়া উৎপাদিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে আরো বেশি ফলন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত জানান, এ অঞ্চলে উৎপাদিত পচনশীল শস্য যাতে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করা যায় এজন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে দেয়া আছে। তবে বৃহদাকারে নয় প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনুমোদন পেলে এ অঞ্চলের কোনো ফসলই আর নষ্ট হবে না। তিনি বলেন, যেহেতু আমড়া এখন উচ্চমূল্যের একটি ফসল তাই অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের মাধ্যমে চাষিদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদেরও আমড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমড়া পুষ্টিগুণে টইটম্বুর। এতে ভিটামিন সির পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লৌহ।
আমড়ায় আছে যথেষ্ট ভেষজ গুণও। কফ ও পিত্ত নিবারণের পাশাপাশি মুখে রুচি আনা এবং কণ্ঠস্বর পরিষ্কারে এর ভূমিকা রয়েছে। জ¦র, সর্দি, কাশি, এমনকি ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণুকে প্রতিরোধ করে। দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখে। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত ও পুঁজপড়া বন্ধ করে। স্ট্রোক এবং হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে। পেকটিনজাতীয় আঁশ থাকায় বদহজম, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সহায়তা করে। মুখের রুচি বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় আমড়া ক্যান্সার প্রতিরোধক। ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। রক্ত আমাশয় হলে আধা কাপ পানিতে ৩-৪ গ্রাম আমড়ার কষ, সেই সঙ্গে ১ চা চামচ গাছের রস এবং একটু চিনি মিশিয়ে খেতে হবে।
গাছের ছালে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ প্রতিহত করার উপাদান রয়েছে। ফলের বীজ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এর শিকড় প্রজননজনিত রোগ নিরাময়ে অবদান রাখে। ভেষজবিদদের মতে, আমড়ায় গর্ভপাত হওয়ার উপাদান থাকায় গর্ভবতী নারীদের এ ফল খাওয়া নিষেধ। ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা আমড়া খেতে পারবেন। তবে পাকা ফল নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়