সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানববন্ধন

আগের সংবাদ

ঝুঁকিতে উদারপন্থি ও নারীরা : শরিয়া আইনে দেশ চালানোর ঘোষণা তালেবান প্রশাসনের, তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে

পরের সংবাদ

করোনায় বিপর্যস্ত পোল্ট্রি শিল্প

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : বিশ্বব্যাপী করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবেলায় কয়েক দফার লকডাউন দিতে হয়েছে সরকারকে। ফলে বিয়ে বা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান একেবারেই কমে গেছে। যা হচ্ছে তাও সীমিত পরিসরে, লুকাছাপা করে। এতে মুরগির বাজারের চাহিদা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে ধস নেমেছে পোল্ট্রি শিল্পে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের হিসাবে গেল দুই বছরে প্রান্তিক পর্যায়ে ২৯ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য খামারিদেরও ব্যবসায় টিকে থাকার কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। করোনাকালে পোল্ট্রি শিল্পে ক্ষতি প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ধ হওয়া খামার সচল করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে স্বাভাবিক অবস্থায় মুরগি ও ডিমের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হবে।
জানা গেছে, সামাজিক অনুষ্ঠানে মূলত ব্রয়লার মুরগির বেশ চাহিদা থাকে। পোল্ট্রি-সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে খামারিরা ক্রমাগত লোকসান দিচ্ছেন। এছাড়া চাহিদা না থাকার কারণে বাজারে মুরগির দামও কম। অন্যদিকে মুরগির খাদ্যের দাম এক মাসের ব্যবধানে বস্তায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও মুরগির বাচ্চার দাম ১৫-২০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে খামারের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারি শেডে মুরগির বাচ্চা তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। আট বছর ধরে পোল্ট্রি খামার করছেন। ভালোই চলছিল তার ব্যবসা। কিন্তু করোনায় একদিকে পোল্ট্রি পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, অন্যদিকে ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার পক্ষে খামার পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। এ খারাপের মধ্যে আবার মুরগির খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। এক মাস আগে খাদ্যের বস্তা কিনতাম ২ হাজার ১০০ টাকায়। এখন সেই বস্তা কিনতে হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। এর মধ্যে এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় মুরগির বাজার চাহিদা কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার আশপাশের অনেক খামারি টিকতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ থেকে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে শুনেছিলাম, কিছুদিন আগে আমার খামারে অডিটও হয়েছে। তবে আমি এখনো কোনো ধরনের প্রণোদনা পাইনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনায় সামাজিক অনুষ্ঠান ও বড় বড় হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় মুরগি ও ডিমের চাহিদা কমে গেছে। উৎপাদনের তুলনায় কম মূল্য পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক খামারির অবস্থায় শোচনীয়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রায় লক্ষাধিক পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এর মধ্যে ২৯ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আর যারা ব্যবসায় টিকে আছেন, তারাও লোকসান মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ হাবিবুল হক বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা সব সময়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকেন তাদের মুরগি বা ডিম বিক্রি হবে কিনা। গত এক বছরে দাম অনেক কমে গেছে। এতে হতাশায় পড়েছেন তারা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিন বলেন, সরকার যদিও নগদ প্রণোদনা দিয়েছে। ঘোষণার তিন দিনের মধ্যেই বড় বিডার ফার্মার, হ্যাচারি মালিক এবং ফিড ম্যানেরা খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দিয়ে প্রণোদনার টাকার বেশি আদায় করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্যমতে, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার আছে। ব্রয়লার মুরগির মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১৬ সালে ছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার টন, ২০১৭ সালে ছিল ৫ লাখ ১০ হাজার টন এবং ২০১৮ সালে ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯ সালে সেটি দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার টনে। ২০২০ সালে ছিল সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন।
বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার প্রায় ৪০ শতাংশ নারী। অন্যদিকে সপ্তাহে ব্রয়লার বাচ্চার উৎপাদন ১ কোটি ৭০ লাখ থেকে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখে নেমে এসেছে। আর সোনালির উৎপাদন কমেছে ২০-২৫ শতাংশ। এই শিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে ১০ বছরের জন্য কর অব্যাহতি সুবিধার দাবি জানিয়েছে বিপিআইসিসি।
সংগঠনটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ১০ হাজার টাকা একজন খামারির জন্য কিছুই না। কিন্তু এক হাজার মুরগির বাচ্চা অথবা দুইজন ফিড একটি খামার শুরু করতে অনুপ্রেরণা দিবে। সরকার ঘোষিত যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তা যদি এভাবে বিবেচনা করে দেয়া হয়, তাহলে খামারির সংখ্যা আবার বাড়ানো সম্ভব হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা : করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য প্রণোদনা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭৪ জন খামারিকে ৮৪৬ কোটি টাকা প্রণোদনার সংস্থান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮১ জন খামারিকে ৫৫৭ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৭৪ টাকা নগদ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ১ লাখ ৭৯ হাজার ২১ জন খামারিকে দ্বিতীয় ধাপে ২১৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা নগদ প্রণোদনা দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
গত ২৭ জুন একটি অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিয়েছে।
এ দুটি খাতকে কীভাবে সম্প্রসারিত করা যায়, সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। যাচাই-বাছাই করে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অবশিষ্ট খামারিদেরও প্রণোদনা দেয়া হবে। আশা করি এ প্রণোদনা দিয়ে খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়