একাই কোকোর কবর জিয়ারত করলেন রিজভী

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ তৈরি করে পাকিস্তান ও আমেরিকা

পরের সংবাদ

‘অল্প একটু শিখে সেটার দাবিদার হতে চাই না’

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গুণী অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। নাটক, বিজ্ঞাপন কিংবা চলচ্চিত্র- সবখানেই সমানতালে অভিনয় করেন। তাকে হাজির হতে দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে। সম্প্রতি ‘লাল কাতান নীল ডাকাত’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে ডাকাত চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। গান, সিনেমা, নাটক এবং মিডিয়ার নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার : রেজা শাহীন
কেমন আছেন?
সত্যি কথা বলতে ভালো নেই। চারদিকে মৃতু্যুর খবর, অসুস্থতার খবর। করোনার ভাইরাসের কারণে অনেক আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের হারিয়েছি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ভালো থাকা যায় না। আমরা আসলে টিকে থাকার চেষ্টা করছি।

লকডাউনের দিনগুলো কীভাবে কেটেছে?
লকডাউনে তো শুটিং করার অনুমতি ছিল না। তাই পুরোটা সময় বাসাতেই থেকেছি। অন্য দিনগুলোতে শুটিং থাকার কারণে ঠিকমতো পরিবারকে সময় দেয়া হতো না। এ সময় পরিবারকে সময় দেয়ার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া সংসারের টুকটাক কাজও করেছি। বই পড়া ও মুভি দেখাও আমার খুব প্রিয় কাজ।

আপনার অভিনয় যেমন সবাই পছন্দ করে তেমনি আপনার গানও। নিয়মিত গান না করার কারণ কি?
একেবারেই গান করা হয় না সেটি কিন্তু না। কিছু কিছু অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলের অনুরোধে মাঝেমধ্যে গান গাই। অনেক সময় নিয়ে, পরিকল্পনা করে গান গাওয়া সেরকমটি হয়ে ওঠে না সব সময়। নিয়মিত না করার কারণ হচ্ছে আমি নিজেকে কখনো সংগীতশিল্পী মনে করি না। মনে না করার কারণ হচ্ছে অল্প একটু শিখে আমি সেটার দাবিদার হতে চাই না। এখন তো অনেকেই গানের কিছু না জেনেই রাতারাতি ভাইরাল বনে যাচ্ছেন।
আর গান নিয়ে আমি যে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি তা কিন্তু না। আমার ধ্যান, জ্ঞান অভিনয়কে ঘিরেই। আমি এখনো অভিনয়ের ছাত্র। এখনো সুযোগ পেলে শেখার চেষ্টা করি। আমার গান মানুষজন পছন্দ করে- এ বিষয়টা আমি খুব এনজয় করি।

মঞ্চের অভিনয় মিস করেন?
অবশ্যই মিস করি। বাস্তবতা হচ্ছে মঞ্চে একটা প্রোডাকশন করতে অনেক সময় লাগে। সব কিছু মিলিয়ে কয়েক মাস চলে যায়। এই যে দীর্ঘ সময় ধরে একটা প্রোডাকশন করতে হয় সেই সময়টা আসলে হয়ে ওঠে না। আমাদের পুরনো কিছু নাটক রয়েছে যেগুলোর শো হয় মাঝেমধ্যে। সেগুলোতে অভিনয় করা হয়। গত বছর সর্বশেষ মঞ্চে অভিনয় করেছি।

আমাদের দেশে দিন দিন ওটিটি ফ্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে হলে গিয়ে সিনেমা দেখা আগ্রহটা কমে যাবে কি?
হলে গিয়ে সিনেমা আগ্রহটা অলরেডি কমে গেছে। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। যেমন হলের সংখ্যা কমে যাওয়া, সিনেমার সংখ্যা কমে যাওয়া, করোনার ভাইরাসের প্রভাব। হলে গিয়ে সিনেমা দেখার আগ্রহ কমে যাওয়ার বড় একটা কারণ হচ্ছে ওটিটি ফ্ল্যাটফর্ম। এখন যে কেউ চাইলে ঘরে বসেই দেশ এবং দেশের বাইরের সিনেমা দেখতে পারে সহজেই। এক সময় যাদের জন্য বাংলা সিনেমা তৈরি করা হতো তারাও এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণ হচ্ছে তারা যে সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখতে চায় সে সিনেমাটি এখন হচ্ছে না। বছরে অন্তত ৫২টা ভালো সিনেমা হওয়া দরকার। আমি যে সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে চাই সেরকম সিনেমা যদি বছরে ৪/৫টা হয় তাহলে তো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকবে না। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় একটা প্রভাব পড়েছে সিনেমা হলের ওপর।

ভালো অভিনয়শিল্পী হওয়ার পেছনে মঞ্চের গুরুত্ব কতটুকু?
শুধু মঞ্চ থেকে অভিনয় শিখে আসলেই যে ভালো অভিনয় হওয়া যায় তা কিন্তু নয়। মূল কথা হচ্ছে একজন ভালো অভিনেতা হতে হলে তাকে জানতে হবে, শিখতে হবে, পড়তে হবে। অনুশীলন করতে হবে। এখন সে মঞ্চ থেকে শিখবে নাকি বাড়িতে বসে শিখবে এটা তার ব্যাপার। ভালো অভিনয়শিল্পী হতে হলে তাকে অবশ্যই চর্চা করতে হবে।

এখন তো টিকটক এবং ইউটিউব সেলিব্রেটিদের নিয়ে কেউ কেউ নাটক, সিনেমা বানাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আমি বিষয়টিকে দুভাবে দেখি। কেউ আসে অল্প সময়ের জন্য। হয়তো ৬ মাস কিংবা এক বছর টিকে থাকে। ভাইরাল হয়। তারপর হারিয়ে যায়। আবার কেউ আসে দীর্ঘ সময়ের জন্য। সে দীর্ঘ সময়ের জন্য আসবে তাকে তো সেরকম প্রস্তুতি নিয়েই আসতে হবে। সবাই যে থিয়েটার থেকে আসবে তা কিন্তু না। সবাই যে একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসবে তা কিন্তু না। বাংলাদেশ তো বটেই সারা পৃথিবীতে এরকম অনেক ভালো অভিনয় শিল্পী আছেন যারা অন্য মাধ্যম থেকে এসেছেন। কথা হচ্ছে, যিনি অন্য জায়গা থেকে এসেছেন তিনি এখানে এসে শিখেছেন, জেনেছেন এবং পড়েছেন। আমাদের দেশের অনেক ছেলেমেয়েরা আছেন যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ভিন্ন ছিল। কিন্তু তারা শোবিজে এসে নিজেদের ভেঙেছেন, তৈরি করেছেন এবং তারা খুব ভালো করছেন। আমি খুব সহজে জয়া আহসান, মেহাজাবিন এদের নাম বলে দিতে পারি। যারা অন্য মাধ্যম থেকে এসেছেন। এখানে আসার পর শিখেছেন, জেনেছেন। সে কারণেই তারা আজ এতদূর আসতে পেরেছেন। মূল কথা হচ্ছে যে যেখান থেকেই আসুক তাকে অভিনয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমি চান্স পেয়ে গেলাম আর ডিরেক্টর এবং প্রডিউসারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখলাম এটার নাম টিকে থাকা না।

আপনার হাতে থাকা সিনেমাগুলোর কি খবর?
কয়েকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’ রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘নোনাজলের কাব্য’, মীর সাব্বিরের ‘রাত জাগা ফুল’। এ রকম ৬-৭টি সিনেমা রয়েছে যেগুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আরো কিছু সিনেমা আছে যেগুলোর কিছু অংশের কাজ করা হয়েছে।

লাল কাতান, নীল ডাকাত কেমন সাড়া পেলেন?
ভালোই সাড়া পেয়েছি। এটিতে ডাকাতের চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। ‘নীল ডাকাত’ চরিত্রটি দর্শকরা খুব পছন্দ করেছে। এই ক্যারেক্টারটা আমি খুব এনজয় করেছি।

আপনি তো এক সময় কমেডি চরিত্রে অভিনয় করতেন। এখন কেন করছেন না?
একসময় প্রচুর কমেডি ক্যারেক্টার করেছি। এখন কমেডি ক্যারেক্টর না করার কারণ হলো এখনকার কমেডি আর আগের কমেডি এক না। অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখন তো জোর করে হাসানো হচ্ছে। কমেডির নামে এখনকার নাটকে ঝগড়া, মারামারি দেখানো হচ্ছে। ঠিক এই কারণেই হাসির নাটক থেকে দূরে আছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়