সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

নৈতিক স্খলন বাড়ছে : যৌন হয়রানির শিকার ৬০ ভাগ নারী পুলিশ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজিজুর রহমান জিদনী : সহকর্মী কিংবা সিনিয়রদের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হন পুলিশের প্রায় ৬০ ভাগ নারী সদস্য। এদের মধ্যে অধিকাংশই বিষয়টি গোপন করেন। হাতেগোনা কিছু সদস্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চান। আর অভিযোগের পর বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও দেয়া হয়। শুধু নারী নির্যাতন নয়, ঘুষ, দুর্নীতির পাশাপাশি নানা নৈতিক স্খলনে আক্রান্ত পুলিশের একটি বড় অংশ। সম্প্রতি পরিচালিত অভ্যন্তরীণ মাঠপর্যায়ের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশে আরো সংস্কার এবং পুলিশ সদস্যদের সঠিক মনিটরিং ও মূল্যায়নের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার ও উন্নয়নে মাঠপর্যায়ের মতামত’ শীর্ষক এক জরিপ ফলাফলে বলা হয়েছে, ৪০ শতাংশ নারী সদস্য সহকর্মীদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে নারী সদস্যদের মতে, এই হার ৬৬ শতাংশ।
সহকর্মীদের হাতে যৌন হয়রানির ওই জরিপে রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, পার্বত্য অঞ্চল ও বিশেষায়িত ইউনিটের কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদবির ৪৪১ সদস্য অংশ নেন। এদের মধ্যে ৩৪৬ জন সদস্য সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কোনো মতামত দেননি ৯৫ জন সদস্য। ৩৪৬ জনের মধ্যে ১৩৮ জন অর্থাৎ প্রায় ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, নারী সদস্যরা হয়রানির শিকার হন। এরপর জরিপে অংশ নেয়া নারীদের মধ্য থেকে ১২ জনের কাছে আলাদাভাবে জানতে চাওয়া হয়, তারা যৌন হয়রানির শিকার হন কিনা? এদের মধ্যে আটজন হ্যাঁসূচক জবাব দেন। অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ নির্যাতিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অন্যান্য নৈতিক স্খলনের অভিযোগ বাড়ছে। মাদকসহ নানা কাণ্ডে গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে ডিএমপির গোয়েন্দা কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাকলায়েন শিথিলের ১৮ ঘণ্টা কাটানোর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ফেনীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় ডিবির ইন্সপেক্টরসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে গত বুধবার রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন তারই এক নারী সহকর্মী।
এদিকে শুধু বগুড়া জেলায় গত আড়াই বছরে নানা অপরাধে জড়ানোর দায়ে ৮৯ জন পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ১৭ পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই শেরপুরে অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ হোসেনকে বগুড়া পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের মধ্যে এসব ঘটনা আগেও ছিল। তবে আগে সেভাবে প্রচার পেত না; যা এখন গণমাধ্যমের কারণে সহজেই জানা সম্ভব হচ্ছে। তবে ভাববার বিষয় আগে অপারেশনাল পর্যায়ে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটত। এখন ম্যানেজারিয়াল পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠছে। এ বিষয়ে গতকাল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, পুলিশ সাধারণত পলিসি, ম্যানেজারিয়াল ও অপারেশনাল লেভেলে কাজ করে থাকে। আগে অপারেশনাল লেভেলেই এ ধরনের বিচ্যুতিগুলো বেশি দেখা যেত। কিন্তু এখন আমরা ম্যানেজার লেভেলেও এ ধরনের ঘটনা দেখছি, যা আসলেই দুঃখজনক ও ভাবিয়ে তোলার মতো।
পুলিশকে রাজনৈতিকসহ দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এতে অনেকেই নিজেদেরকে অপ্রতিরোধ্য মনে করছে। ভাবছে, কিছু করে তারা পার পেয়ে যাবে। আমি মনে করি, পুলিশের মধ্যে সেভাবে পরিবর্তন আসেনি। তাদের কিছু বিভাগ বেড়েছে সত্যি, কিন্তু সেই ব্রিটিশ নিয়মেই তারা চলে। যথাযথ সংস্কারটা হচ্ছে না তাদের। ফলে আর্থিক উচ্চাভিলাষের পাশাপাশি নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবক্ষয় দেখছি আমরা। আর এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পুলিশে আরো সংস্কার দরকার। পুলিশ সদস্যদের সঠিক মনিটরিং ও মূল্যায়নের আওতায় আনা দরকার। এছাড়া কোনো পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তা প্রকাশ্যে আনা জরুরি, যা ভবিষ্যতে অন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও ভয় সৃষ্টি করবে।
যদিও পুলিশ বলছে, তাদের কোনো সদস্য অপরাধ করলে বা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রতি নিয়ত প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশনের মাধ্যমেও তৎপরতা চালানো হয়। এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, পুলিশ সদস্যদের ভালো কাজে যেমন স্বীকৃতি ও পুরস্কারের আয়োজন রয়েছে, তেমনি পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধ করলে বা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্যকে বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তির আওতায় আনা হয়। প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশনের মাধ্যমেও তৎপরতা চালানো হয় যে কোনো প্রকার বিচ্যুতি থেকে সদস্যদের দূরে রাখতে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়