সবুজ বাংলাদেশকে সবুজতর করার আহ্বান আইজিপির

আগের সংবাদ

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা জাতিসত্তা : বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সয়লাব বড় ইলিশে : জেলেরা এখন অনেক খুশি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার থেকে : ইলিশে সয়লাব কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টা পর্যন্ত এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।
দেখা যায়, সাগর থেকে বাঁকখালী নদীতে ফিরছে ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে রয়েছে হাজারের অধিক বড় বড় ইলিশ। জেলেরা বলছেন, অতীতে এত বড় ইলিশ সাগরে ধরা পড়েনি। যার কারণে ইলিশে এবার ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। এফবি রাইয়ান ট্রলারের জেলে মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ইলিশ মাছের দাম ভালোই পাচ্ছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সাগরে অনেক বড় বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সাগরে অনেক বছর পর এত বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
ইলিশ দেখলেই মন ভরে যাচ্ছে। এফবি ছেনুয়ারা ট্রলারের মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, সাগরে জাল ফেললেই বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে। আগে এত বড় ইলিশ সাগরে ধরা পড়েনি। এখন সাগরে ইলিশ ধরা পড়াতে তা দ্রুত বিক্রি করার জন্য অবতরণ কেন্দ্রে এলাম। বিক্রি করে পুনরায় ট্রলারে বরফ নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে চলে যাব। রফিক নামে এক জেলে বলেন, ৬৫ দিন বন্ধের পর আল্লার রহমতে সাগরে অনেক বড় বড় ইলিশ জালে ধরা পড়ছে। যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা জেলেরা এখন অনেক খুশি।
সাগরে যাচ্ছি, বড় বড় ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছি এবং তা ভালো দামে অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি করে আবারো সাগরে যাচ্ছি। সবই আল্লাহর রহমত, সাগরে এখন অনেক মাছ। জেলে আব্দুর রহিম বলেন, সাগরে ইলিশ আর ইলিশ। গেল ১০ দিন সাগরে জাল ফেলে ৩ হাজারের অধিক ইলিশ ধরেছি। এই ইলিশ নিয়ে অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে এসে বিক্রি করলাম। ইলিশের ভালো দাম পাওয়াতে আমরা খুবই আনন্দিত এবং খুশি।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রয়েছে দুটি মাছ রাখার শেড। কিন্তু এসব শেড ইলিশে সয়লাব। ইলিশ রাখার আর জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে খোলা মাঠে ইলিশ রাখছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, অতিরিক্ত ইলিশ অবতরণ হওয়ায় মাছের দাম কিছুটা কমলেও শেড সংকটে নষ্ট হচ্ছে ইলিশ। ফলে প্রচুর ইলিশ নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে ইলিশের দাম নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট তারা।
অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী আবদুল মাবুদ বলেন, এখন কক্সবাজারে ইলিশ আর ইলিশ। ইলিশের উৎসব চলছে। যদি ইলিশ বাইরের দেশে রপ্তানি করা যায়; তাহলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো। আরেক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ঘাটে প্রতিদিন ৫০টির অধিক ট্রলার ভিড়ছে। এসব ট্রলারে প্রচুর ইলিশ। এই ইলিশ রাখার জায়গা নেই কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। যার কারণে ইলিশগুলো খোলা মাঠে রাখতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিনই ইলিশের সরবরাহ বাড়ছে। যার কারণে দাম কিছুটা কমছে। ৩ দিন আগেও ১০০ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। এখন ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ টাকায়।
এদিকে কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ বছর যথেষ্ট পরিমাণে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার পর সাগরে ইলিশের দেখা মিলছে। ইলিশের আকার অনেক বড়। আমরা ট্রলার, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা খুবই খুশি। নাসির উদ্দিন বাচ্চু বলেন, সাগরে মাছ শিকার শেষে ট্রলার যখন অবতরণ কেন্দ্রে ঘাটে আসে তখন সাগরের নাজিরারটেক মোহনায় বালুচরে আটকা পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তাই দ্রুত এই মোহনায় ড্রেজিংয়ের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে একটি মাত্র জেটি রয়েছে। এই জেটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রলারের মাছ নামাতে সমস্যা হচ্ছে। মাছ ওঠা-নামা করতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। এছাড়াও অবতরণ কেন্দ্রে মাছ রাখার শেড রয়েছে মাত্র দুটি। এই শেডে মাছ রাখার পর আরো ২০ থেকে ৩০ টন মাছ খোলা মাঠে রাখতে হচ্ছে। যার কারণে মাছ নষ্ট হয়ে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। তাই এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
এব্যাপারে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. এহ্ছানুল হক বলেন, গত ৫ দিনে কক্সবাজারে প্রায় ৩০০ টন মাছ অবতরণ হয়েছে। যার মধ্যে ইলিশের পরিমাণ ছিল ২০০ টনের অধিক। বিপুল পরিমাণ মাছ অবতরণ হওয়ায় মাছ রাখার জায়গা হচ্ছে না একথা সত্য। তবে দ্রুত নতুন একটি শেড নির্মাণের কাজ শুরু হবে। করোনার কারণে শেডটির নির্মাণকাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে আশা করি, দ্রুত অবতরণ কেন্দ্রে যেসব সমস্যা রয়েছে তার নিরসন হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়