শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

আমায় তুমি ডেকেছিলে

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাসা থেকে বের হতে গিয়েই আরকাম চাচার মুখোমুখি হয়ে গেলাম। আমি হাসিমুখে সালাম দিলাম। চাচার মুখ থমথমে। আগের রাতে না ঘুমানোর চিহ্ন। বিষণ্নতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে সমস্ত চোখেমুখে। গলির শেষ মাথাতেই উনাদের বাড়ি। জেনেছি মেয়ের বিয়ে নিয়ে ইদানীং বাড়িতে খুব ব্যস্ত থাকেন। রোজ বিকালে বাবার সঙ্গে লুডু খেলতে আসতেন আমাদের বাড়ি। এই কদিন তার মুখ দেখতে পাইনি। আরকাম চাচা হাসিখুশি মানুষ। সব মানুষের সঙ্গে অমায়িক ব্যবহার। কেউ কটু কথা বললেও মুখে নকল হাসি ঝুলিয়ে নিরীহ বনে যাবেন। কারোর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ানো তার স্বভাব বিরুদ্ধ। সহজ-সরল মানুষের উদাহরণ দিতে গেলে চাচাকে এক নম্বরে রাখতে হয়। এমন মানুষের মুখ সকাল সকাল ভারি দেখে বিচলিত হলাম। বললাম, আব্বা ঘরেই আছে। ভেতরে যান চাচা।
আরকাম চাচা শুকনো মুখে বললেন, আমি তোমার কাছে এসেছি বাবা। খুব দরকার।
অবাক হয়ে বললাম, আমার কাছে কী ব্যাপার চাচা?
– তুমি এখনই আমাদের বাড়ি চলো একবার।
চাচা আমার হাত ধরলেন। শক্ত হাতে চেপেই ধরলেন। মনে হচ্ছে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত ছাড়বেন না। লক্ষ্য করেছি, বাড়ির যত নিকটে যাচ্ছি চাচা যেন ততই উত্তেজিত হচ্ছেন। উত্তেজনায় তার হাতের কাঁপুনি টের পেলাম। কপাল কী রকম ঘেমে উঠেছে। একটু পর পরই শার্টের হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিচ্ছেন।
কলিংবেল চাপতে হলো না। বাইরে থেকে কেউ আসবে, ঘরের লোকজনের যেন আগে থেকেই জানা। খুট করে দরজা গেল খুলে। খুলে গেল বলতে কেউ একজন খুলে দিল। একুশ বছরের সুশ্রী একটি মেয়ে। এরই বড় বোনের বিয়ে হতে চলেছে। আমি বললাম, কেমন আছো সামানতারা?
সামানতারা নিচু গলায় কী বলল, ঠিক বোঝা গেল না। অথচ অন্য সময়ে দেখা হলে প্রথমেই জিজ্ঞেস করবে, আপনার নাইটকুইন বেঁচে আছে না মরে গেছে? আমার সবগুলো গাছ মরে ভূত হয়ে গেল। আমার হাতে কোনো কিছুই টেকে না।
এটা ঠিক। সামানতারার হাতে শুধু গাছ কেন, কোনো সম্পর্কও বেশিদিন যায় না। সেদিনই তো সে অবলীলায় বলল, জানেন আমার এই প্রেমটাও গেল। বুড়িগঙ্গার পচা পানির চেয়েও খারাপ গেল!
সামানতারার এসব ছেলেমানুষি কথা শুনব আমার এত সময় কই? তাদের বাড়িতে আগে রোজ একবার আসতাম। তার ছোট ভাইকে পড়াতাম। আমার বিসিএস প্রস্তুতি শুরুর পর থেকে আর আসা হয় না। প্রতিদিন চা হাতে এসে দাঁড়ানো সামানতারার কত অগোছালো-অসংলগ্ন কথাই তো দুই বছর হজম করে গেছি। সেদিনও হজম করব ভাবছিলাম। না পেরে শেষে বললাম, ভালোবাসায় অনেক শর্ত থাকে। একনিষ্ঠ হতে হয়, লোভ সামলাতে হয়, মাছি তাড়ানো শিখতে হয়। মনকে টুকরো টুকরো করে যারা বিলিয়ে দেয়, হয় তারা খেলুড়ে, নয় তো মানসিকভাবে অসুস্থ।
সামানতারা কটমট চোখে তাকাল আমার দিকে। বলল, আপনার ধারণা আমি মানসিক রোগী?
– এসব আমি বলিনি।
– তবে কে বলল?
আমি তার দৃষ্টিকে এড়িয়ে গিয়ে বললাম, হবে কোনো সাহিত্যিকের কথা। কোথায় যেন পড়েছিলাম মনে নেই।
আজ মনে পড়ল, সেদিন সামানতারাকে একটু বেশিই বকে ছিলাম। মেয়েটি এক হৃদয় কজনকে দিয়ে বসে আছে, ভাবতে বিরক্ত লাগে। কারোর প্রতি সত্যিকারের হৃদয় নিয়ে ভালোবাসার অনেক উপদেশ শুনিয়ে শেষমেশ তাকে রাগী মুখে আমার জন্য আনা চা হাতেই ফিরে যেতে দেখেছিলাম। এরপর দেড় মাস আর একটি কথাও হয়নি আমাদের।
আরকাম চাচা উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, আসো এই ঘরে, তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
সাবাতানী সামানতারার বড় বোন। দুই বছর আসা-যাওয়া ছিল এই বাড়িতে। কোনোদিন এক পলক দেখিনি বড় বোনকে। সাবাতানী ছোট বোনের ঠিক উল্টো। পুরুষ মানুষ দেখলেই নিজেকে গুটিয়ে অদৃশ্য করে নেবে। আমি বিচলিত বোধ করছি, আমার জন্য সবার অপেক্ষা!
বড় বোন জড়সড়ো হয়ে বসে আছে বিছানায়। তাকে ঘিরে বাড়ির অনেকেই। আমার জন্য অনেক বড় চমক অপেক্ষা করছিল। বিছানায় মেয়েটির দিকে তাকাতেই ভেতরটা চমক গেল। আমার পেছনে সামানতারা, তাহলে বিছানায় বসা মেয়েটি কে? হুবুহু একই রকম চেহারা। ঠিক কার্বন কপি!
আরকাম চাচা বললেন, আমার দুই মেয়ে, যমজ। দরজা যে খুলল, সে বড় মেয়ে সাবাতানী। বিছানায় যাকে দেখছ ওর নাম সামানতারা। তোমার সঙ্গে তার বিয়ে না দেয়া পর্যন্ত বড় বোনের বিয়ে হতে দেবে না। বিষ খেয়ে মরবে, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে পড়বে। রাত থেকে কী কী সব পাগলামো কথাবার্তা বলছে। সবাই বুঝিয়েও কাজ হচ্ছে না।
আকাশ থেকে ফেলে দিলেও এত অবাক হতাম না। দুর্দান্ত মেয়ে সামানতারা জানি। কিন্তু সে এতটা এডভান্স আমার ধারণার বাইরে। কী নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা! আমি লজ্জা আর রাগ দুইয়ে মিশে যেতে লাগলাম। মুহূর্তেই একটা চিন্তা উদয় হলো, আমার প্রতি সামানতারার এত আবেগ কিন্তু কোনোদিন সে বলেনি কিছু আমাকে। বরং আমার সঙ্গে তার ডজন খানিক প্রেমিকের এমন সব গল্প করত, যা শুনে রীতিমতো তাকে খারাপ কিছু ভাবতাম। তাহলে কি এতদিনে বলা গল্পগুলো সবই তার বানানো? আমার মনে তার প্রতি কোনো অনুভূতি আছে না নেই শুধুই পরীক্ষার জন্য? এক ধরনের মায়া নিয়ে আমি সামানতারার দিকে তাকালাম। সামানতারাও আমার দিকে তাকিয়েছে। মুহূর্তেই চোখ নামিয়ে নিল সে। এই প্রথম আমাকে দেখে লজ্জা পেল। লজ্জা পেলে সামানতারাকে এত সুন্দর লাগে আজ প্রথম দেখলাম।
জুয়েল আশরাফ : নবাবগঞ্জ, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়