জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

ঐতিহাসিক কনসার্টের ৫০ বছর

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১ আগস্ট, ১৯৭১। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের জন্য গান গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসনসহ বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড শিল্পীরা। সেই অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অবস্থান নিয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের অংশগ্রহণে সেই কনসার্ট বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সেই কনসার্টের ৫০ বছর পূর্ণ হলো ১ আগস্ট। বিশ্বখ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসন ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবি শংকরের বন্ধু। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা রবি শঙ্করই জানান হ্যারিসনকে। বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে চান বলে বন্ধুর কাছে পরামর্শ চান রবি শঙ্কর। এরপর জর্জ হ্যারিসন যোগাযোগ করেন খ্যাতিমান শিল্পী বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেলসহ অন্যদের সঙ্গে, যারা সেই কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেছিলেন। কনসার্টে রবি শঙ্করের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের আরো তিন কিংবদন্তি শিল্পী অংশ নেন। তারা হলেন ওস্তাদ আলী আকবর খান, ওস্তাদ আল্লা রাখা ও কমলা চক্রবর্তী। কনসার্টের দিনটি অর্থাৎ ১ আগস্ট ছিল রবিবার। সেদিন প্রথমে একটি শো হওয়ার কথা থাকলেও দর্শক-শ্রোতা বেশি হওয়ায় দুটি শো করতে হয়। টিকেট কেটে দুই শোতেই ৪০ হাজারের মতো মানুষ অংশ নেয়। প্রথম শো শুরু হয় দুপুর আড়াইটায়, দ্বিতীয় শো রাত ৮টায়। কনসার্ট শুরু হয় সেতারবাদক রবি শঙ্কর, সরোদবাদক আলী আকবর খান, তবলাবাদক আল্লা রাখা ও তানপুরাবাদক কমলা চক্রবর্তীর পরিবেশনা দিয়ে। এরপর একে একে অন্য ব্যান্ডদলের বিখ্যাত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। সেদিন অনুষ্ঠানে বব ডিলান গেয়েছিলেন ছয়টি গান। ডিলানের সঙ্গে গিটার বাজিয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন, ব্যাস লিওন রাসেল ও ট্যাম্বুরিন রিঙ্গো স্টার। অনুষ্ঠানে বিটলসের অন্যতম সদস্য রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রেস্টন, ডন প্রেস্টন প্রমুখ গান গেয়েছেন, গিটার বাজিয়েছেন। কনসার্টে আটটি গান গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন। সবার শেষে নিজের লেখা ও সুরে গাইলেন তার কালজয়ী ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানটি। বাংলাদেশ গানটি ইংরেজি থেকে পরবর্তীতে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন তরুণ কবি খান মোহাম্মদ ফারাবী। গানের অনুদিত কথাগুলো এররকম- ‘এলো একদিন বন্ধু আমার/চোখ ভরা তার শুধু হাহাকার/বলে গেল চায় শুধু সহায়তা/দেশ তার আজ ধুঁকে ধুঁকে মরে/পারি না বলতে বেশি কিছু আর/ শুধু বুঝি কিছু করে যেতে হবে/ বাংলাদেশ বাংলাদেশ…’। কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর ৫০ বছর উদযাপন কোভিড পরিস্থিতির কারণে বড় পরিসরে না হলেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিরা ছোট পরিসরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। লিয়ার লেভিনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। গত ১ আগস্ট কনসার্টের একটি ভিডিওর অংশ টুইটারে পোস্ট করে রবি শঙ্করের মেয়ে সুরকার ও সেতারবাদক আনুশকা শঙ্কর এক টুইটে লিখেছেন, ‘৫০ বছর আগে আজকের এই দিনে বাংলাদেশের জরুরি ত্রাণ সহায়তার জন্য বাবা ও জর্জ হ্যারিসন কনসার্ট ফর বাংলাদেশের আয়োজন করেছিলেন। বেনিফিট কনসার্টের যে ধারণা আজ আমাদের মধ্যে রয়েছে, সেই সময় তার মানদণ্ড তারা তৈরি করে দিয়েছিলেন।’ ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসে মারা গেছেন কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর অন্যতম রূপকার জর্জ হ্যারিসন। ২০১০ সাল থেকে তার উত্তরাধিকারদের পক্ষ থেকে তার নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট সচল রাখা হয়েছে। কনসার্ট ফর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে সেই অ্যাকাউন্ট থেকেও বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করা হয়েছে। ১ আগস্ট এক টুইটে লেখা হয়, ‘৫০ বছর আগে আজকের এই দিনে বাংলাদেশের জরুরি ত্রাণ সহায়তায় অর্থ সংগ্রহের জন্য জর্জ হ্যারিসন ও রবি শঙ্কর কনসার্ট ফর বাংলাদেশের আয়োজন করেছিলেন। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সঙ্গে সেই লিগ্যাসি আজো অব্যাহত আছে।’ ১৯৭২ সালে ইউনিসেফের মাধ্যমে ২০ লাখ ডলার শরণার্থীদের কাছে পৌঁছায়। আর ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ ডলারের মতো বাংলাদেশে পাঠানো হয় বলে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।
:: হেমন্ত প্রাচ্য

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়