চাঁদাবাজির মামলা ৪ দিনের রিমান্ডে দর্জি মনির

আগের সংবাদ

বন্যার পদধ্বনি : পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে

পরের সংবাদ

কয়েক হাজার একর কৃষি জমি পানির নিচে

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে : কুয়াকাটাসহ সমুদ্র উপকূলের কৃষি জমি লবণাক্ত পানির কবল থেকে রক্ষা, বর্ষা মৌসুমে সুষ্ঠুভাবে পানি নিষ্কাশন ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াসের কবল থেকে জানমাল রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধের ওপর নির্মাণ করা জলকপাটগুলো এখন আর কৃষকদের কাজে আসছে না। এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহল মাছ চাষের উদ্দেশ্যে শীত মৌসুমে সাগরের লবণাক্ত পানি উত্তোলন করে এবং বর্ষা মৌসুমে জলকপাট আটকিয়ে রাখার কারণে হাজার হাজার একর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে জমি চাষাবাদ তো দূরের কথা গবাদিপশুর খাবারেও সংকট দেখা দেয়। এসবের প্রতিকারের জন্য প্রতিবাদ করলে উল্টো মিথ্যা মামলায় জড়াতে হচ্ছে কৃষকদের।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় ষাটের দশকের প্রথম দিকে ৯টি পোল্ডারে ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ৪৯টি ড্রেনেজ এবং ৫৩টি ফ্লাশিং স্লুইস বা জলকপাট নির্মাণ করা হয়। প্রত্যেকটি জলকপাট সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন করে খালাসি নিয়োগ দেয়া হয়। এলাকার কৃষকদের সুবিধার জন্য তারা পানি ওঠা-নামা করাত। প্রয়োজনে গেট বন্ধ রাখত আবার প্রয়োজন হলে খুলে দিত। ’৬৯-এর পর থেকে নতুন করে খালাসি নিয়োগ বন্ধ করে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। অপরদিকে নিয়োগকৃত খালাসিরা অবসরে যাবার পর আর কোনো খালাসির নিয়োগ দেয়নি। ফলে জলকপাটগুলো হয়ে যায় অরক্ষিত। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দখল করে নেয় জলকপাটগুলো।
মহিপুর থানাধীন ৪৭/৪৮ নং পোল্ডারে প্রায় ৭টি জলকপাট রয়েছে। এসব জলকপাটগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। জলকপাট নিয়ন্ত্রণ করে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা মাছ শিকার করছে। চলতি মৌসুমে অতিবর্ষণ ও অমাবশ্যা পূর্ণিমার জো’য়ের অতিরিক্ত পানি প্রবেশ করে কৃষকদের বীজতলাসহ ফসলি জমি তলিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, জলকপাটগুলো দিয়ে পানি উঠানো কিংবা নামানো হচ্ছে শুধু মাছ শিকারিদের স্বার্থে। কৃষকদের স্বার্থে এসব জলকপাট ব্যবহার করা হয় না। যার ফলে যখন পানি প্রয়োজন তখন পানি পাওয়া যায় না। আবার যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন পানিতে তলিয়ে থাকে কৃষি ক্ষেত। মহিপুর থানাধীন ৪টি ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌর এলাকার শত শত কৃষক জলকপাটের অপব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একই চিত্র উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নীজকাটা গ্রামে। সেখানে ৮ ব্যান্ডের স্লুইসের ওপর ১৭টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। বর্তমানে ওই গ্রামগুলোর ৪ হাজার একর জমি চাষাবাদের হুমকির মুখে। চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঠালপাড়ার ৪ ব্যান্ডের স্লুইস গেট সম্পূর্ণ খোলা রয়েছে। ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই খালের দুপাড়ে রয়েছে চাকামইয়া, কড়ইবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাশিয়া এই তিনটি ইউনিয়নের মানুষে দুর্ভোগের সীমা নেই। সম্প্রতি সরকারি খালের দখল নিয়ে দুপক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩২ জন আহত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার এআর এম সাইফুল্লাহ বলেন, সøুইস গেট নিয়ন্ত্রণ কমিটির সঙ্গে কৃষি বিভাগকে জড়িয়ে রাখলে আমরা প্রান্তিক কৃষকদের উপকার করতে পারতাম। এ স্লুইস কারা নিয়ন্ত্রণ করে তা আমরা কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি শওকত হোসেন মেহরাজ জানান, কুয়াকাটাসহ উপজেলার সব স্লুইস গেট কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদের সঙ্গে স্থানীয় কৃষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ৯ সদস্যবিশিষ্ট স্লুইস গেট নিয়ন্ত্রণ কমিটি রয়েছে। স্লুইস গেটগুলোর অপব্যবহার সরজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়