চাঁদাবাজির মামলা ৪ দিনের রিমান্ডে দর্জি মনির

আগের সংবাদ

বন্যার পদধ্বনি : পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে

পরের সংবাদ

এবার হাসপাতালের ছাড়পত্র গায়েব করলেন সেই ইউপি চেয়ারম্যান!

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, লালমনিরহাট : ত্রাণের সিøপ চাওয়ায় চেয়ারম্যানের স্ত্রীর গলা ধাক্কা খেয়ে জখম হওয়ার পর আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছিলেন শতবর্ষী বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া। তার সেই হাসপাতালের ছাড়পত্র গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান। গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ত্রাণের স্লিপ নিতে উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলীর বাড়ি গেলে তার স্ত্রী ও মেয়ের দেয়া গলা ধাক্কায় আলেমা বেওয়া জখম হন। আহত বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি মদনপুর গ্রামের মৃত ছপির উদ্দিনের স্ত্রী ও রিকশাচালক নুরুজ্জামানের মা।
জানা যায়, অতিদরিদ্র আলেমা রিকশাচালক ছেলে নুরুজ্জামানের সংসারে বসবাস করে থাকেন। সম্প্রতি লকডাউনে রিকশাচালক ছেলের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় নিদারুণ অর্থকষ্টে পড়ে পরিবারটি। ঈদের কিছুদিন আগে পলাশীর চেয়ারম্যান শওকত আলী ত্রাণ দেয়ার কথা বলে বৃদ্ধা আলেমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেন। ত্রাণ নিতে তাকে ১৯ জুলাই সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকেন চেয়ারম্যান। তখন চেয়ারম্যান তার বাড়িতে রাখা স্লিপ নিয়ে আসতে বললে বৃদ্ধা পরিষদের পাশে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত স্লিপের জন্য অপেক্ষা করেন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা। এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষ করে চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে এলে স্লিপ চান বৃদ্ধা। এ সময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও মেয়ে সুহিন আক্তার ওই বৃদ্ধাকে গলা ধাক্কা দিলে ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা মেঝেতে পড়ে যান। এ সময় তার দাত ভেঙে রক্ত ঝরতে থাকে এবং হাত, পা ও বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।
বিপদ দেখে দ্রুত পল্লী চিকিৎসক নিয়ে নিজ বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন চেয়ারম্যান। মায়ের অসুস্থতার খবরে ছেলে নুরুজ্জামান স্থানীয়দের সহায়তায় আলেমাকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে এবং আসন্ন ঈদের কারণে ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন আলেমা বেওয়া।
এ ঘটনায় আহত বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৯ জুলাই রাতে চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও মেয়েকেও আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে থানা পুলিশ নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে ২৮ জুলাই স্ত্রীসহ চেয়ারম্যান শওকত আলীকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিনই আদালতের জামিনে মুক্তি পান তারা। বৃদ্ধা আলেমা বেওয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সনদ ও ছাড়পত্র মূলে বিচার কার্য সম্পন্ন হবে। তাই সেই চিকিৎসা সনদ দুর্বল করতে ক্ষমতার প্রভাবে ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী হাসপাতালের কর্তব্যরতদের ম্যানেজ করে বৃদ্ধার আলেমার ছাড়পত্র গায়েব করেন। এছাড়া তার কারসাজিতে হাসপাতালে ভর্তি বইতে রোগীকে পলাতক দেখানো হয়েছে বলেও নুরুজ্জামানের অভিযোগ। যথারীতি চিকিৎসকদের বলে স্বাক্ষর করে রোগীকে নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে নেয়ার পরও পলাতক দেখানোর বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে পুনরায় অভিযুক্ত করে বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান মঙ্গলবার ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ বলেন, দায়িত্বরতদের জানিয়ে গেলে পলাতক দেখানো হয় না। রোগীকে কেন পলাতক দেখানো হয়েছে, তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়