শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

কুয়াকাটায় দখল-দূষণ : অস্তিত্ব সংকটে রাখাইনদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পর্যটন নগরী কুয়াকাটার ক্ষুদ্র নৃজাতিগোষ্ঠী রাখাইনদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাচীন নিদর্শনগুলো দখল এবং দূষণে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো মন্দিরের সম্পত্তি ও মগন সম্পত্তির লোভে একশ্রেণীর অসাধু রাখাইনরা এসব বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে আদিবাসী রাখাইনদের পুরাকীর্তিসহ তাদের প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য বিলুপ্ত হতে বসেছে।
সম্প্রতি কুয়াকাটার মিস্ত্রিপাড়ায় দেবালয়ের সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন পাড়ার রাখাইনদের সমন্বয়ে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ রাখাইনরা। তারপরও দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি দেবালয়ের জায়গা। কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়ক লাগোয়া রাখাইনদের ঠাকুর বাড়ি এবং দেবালয়ের ৯৯ শতাংশ জমি কাগজে-কলমে থাকলেও দখলে রয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। একটি বিরাট অংশ বেদখলে ছাড়াও অবশিষ্টাংশ বিক্রির অপতৎপরতা চালাচ্ছে খোদ রাখাইনদেরই একটি অংশ। যেখানে রয়েছে রাখাইনদের ধর্মযাজকদের শ্মশানসহ পুরাকীর্তি। রাখাইনদের একটি সূত্র দাবি করে, একটি আবাসন কোম্পানি তাদের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে একটি আদি ‘কূপ বা কুয়া’ এবং একটি ‘মঠ’ মাটিচাপা দিয়েছে।
অন্যদিকে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে অবস্থিত কেরানীপাড়া ও শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার। রাখাইনদের একাংশের দাবি, কেরানীপাড়ার পূর্ব ও উত্তর পাশ ঘেঁষে ৫৬ শতক জমি দেবালয়ের নামে দলিল ও কাগজপত্র রয়েছে। দেবালয়ের ওই সম্পত্তিতে দেশের একটি খ্যাতনামা বহুজাতিক কোম্পানি ব্যাংক ও ওশান ভিউ নামে বহুতল আবাসিক হোটেল নির্মাণ করেছে। দেবালয়ের ওই সম্পত্তি রাখাইনদেরই প্রভাবশালী একটি গ্রুপ বিক্রি করেছে ওই বহুজাতিক কোম্পানির কাছে। আবার কেউ কেউ পাড়ার ওয়াক্ফকৃত জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবনসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
রাখাইনদের এসব পুরাকীর্তি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় প্রতœতত্ত্ব বিভাগ উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা এখন কতিপয় লোভী রাখাইনদের কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে। এতে সহযোগিতা করছে স্থানীয় একশ্রেণীর ভূমি দালাল ও জনবিচ্ছিন্ন জনপ্রতিনিধিরা। এসব নিয়ে রাখাইনরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। রাখাইনদের বিক্ষুব্ধ অংশটি তাদের পুরাকীর্তিসহ ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় জেলা প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েছে।
জেলা প্রশাসন রাখাইনদের ওয়াক্ফকৃত মগন সম্পত্তি ও দেবালয়ের জমির মালিকানা জটিলতা নিরসনে কিছুটা বিলম্বে হলেও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিরোধীয় জমির মালিকানা জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশও দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে ভূমি জরিপ কর্তৃপক্ষ অসৎ ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এসব জমি জরিপ করেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ফলে মালিকানা জটিলতা নিরসনে দীর্ঘসূত্রতা বলেও জানায় স্থানীয় ভূমি প্রশাসন। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। এ চিত্র শুধু কুয়াকাটাতেই নয়, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার রাখাইন পাড়াগুলোতেও।
কুয়াকাটা কেরানীপাড়ার রাখাইন অধিকার আন্দোলনের নেত্রী লুমা মগনী বলেন, প্রভাবশালী রাখাইন নেতা এমং তালুকদার ও তেমং রাখাইন ২০০ বছরের অধিক পুরনো ঠাকুরবাড়ি ও মগন ওয়াক্ফকৃত জমি সাতটি পাড়ার কতিপয় স্বার্থান্বেষী রাখাইনদের সমন্বয়ে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই খুদরাত-ই খুদা নামে এক আবাসন ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিক্রির উদ্দেশ্যে বায়না চুক্তি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেখানে তাদের একটি বৌদ্ধ মঠ ও আদি কুয়া মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে। ওই জমিতে তারা সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করেছে।
কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়েন মং উচু বলেন, রাখাইনদের দেবালয় ও মগন সম্পত্তি ওয়াক্ফ করা। এসব সম্পত্তি বিক্রির এখতিয়ার কারো নেই। ওয়েন মং উচু একটি বহুজাতিক কোম্পইনর নাম উল্লেখ করে বলেন, কেরানীপাড়ার প্রভাশালী দুই পরিবারের সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে পাড়ার দুই দিক দখল করেছে। কোম্পানিটি দেবালয়ের জমি না কিনে তাদের সম্প্রদায়ের একাংশের সহযোগিতায় ওই জমিতে ব্যাংকসহ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে।
রাখাইনদের পুরাকীর্তি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক এবং বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ পটুয়াখালী-বরগুনা জেলার সভাপতি নিউ নিউ খেইন বলেন, ভূমি দালালদের সহযোগিতায় অস্থিতবিহীন ভূমির মালিকানা সৃষ্টি করে রাখাইনদের একটি অংশের সহযোগিতায় তাদের আদি পুরাকীর্তি ধ্বংসে মেতে উঠেছে ভূমিগ্রাসী চক্র। আমরা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহিদুল হক বলেন, এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে ক্ষুদ্র নৃজাতিগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়। তাদের দেবালয়ের সম্পত্তি বেদখল কিংবা কেউ বিক্রি করতে চাইলে আমরা আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়