শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

করোনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : করোনা মহামারি বৃদ্ধির কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের মোট ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৩ হাজার ৯৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপযোগী হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ২০৪টিতে গত ২১ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সারাদেশে প্রথম ধাপে ৩৭১টি ইউপিতে ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও খুলনা, বাগেরহাট, যশোর-সাতক্ষীরাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ১৬৭টি ইউপির নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। একই সঙ্গে ১১টি পৌরসভায়ও ভোটগ্রহণ করার কথা থাকলেও তার মধ্যে ৯টি পৌরসভায় কোভিডের কারণে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে ইসি।
এদিকে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিষয়ে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুজাফর রিপন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। এ পরিপত্রে বলা হয়- বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেয়াদ শেষ হলেও বর্তমান চেয়ারম্যান-মেম্বাররাই দায়িত্ব পালন করবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ এবং আশু মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এমন ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠান না হাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ), আইন-২০০৯-এর ১০১ ধারা মোতাবেক প্রশাসনিক অসুবিধা দূরীকরণার্থে বিদ্যমান ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাল উদ্দীন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আপাতত স্থানীয় সরকারের ইউপিসহ সব ধরনের নির্বাচন আমরা স্থগিত করে একটি পরিপত্র জারি করেছি। যার কপি নির্বাচন কমিশনেও পাঠিয়েছি। এতে আমরা বলেছি, আগামী ৬ মাসের জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ বা নির্বাচন উপযোগী ইউপির কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। তবে এর আগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে বা ভোটগ্রহণ উপযোগী হলে আমরা এসব ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ করব।
তবে ৬ মাস উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যদি করোনার কারণে ভোট নেয়া না যায় সে ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, আপাতত ৬ মাস তারা চালাবেন বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তার পরেও যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তা হলে আমরা আনলিমিটেড সময় এসব চেয়ারম্যান মেম্বারদের দিয়ে ইউপিগুলো চালু রাখার নির্দেশনা দেব।
তবে ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে ২৯ (৩) উপধারায় বলা হয়েছে, পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পরিষদের মেয়াদ থাকবে। পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে দ্বৈব দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্বাচন না করা গেলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনের ২৯ (৫) উপধারা মতে নির্বাচন স্থগিত করে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা প্রশাসক নিয়োগ করে কার্যক্রম চালু রাখতে পারবে।
তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ইউপি নির্বাচন স্থগিত করে একটি চিঠি স্থানীয় সরকার বিভাগে কমিশন পাঠিয়েছে। কোভিডের এ সময় আমরাই তাদের নির্বাচন না করার জন্য অনুরোধ করেছি; সব স্বাভাবিক হলে আমরা নির্বাচন করার উপযোগী মনে করলে তখন নির্বাচনে যাব। রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই তারা কিন্তু এই এক্সটেনশনটা দিয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ভোরের কাগজকে জানান, করোনার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। তবে বেশি দিন সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ওই পদে রাখাটাও ঠিক নয়, এতে দুর্নীতি বাড়বে। স্বজন পোষণ বাড়ছে বা দলীয়করণ বাড়ছে। তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের আদোলে করে পরে চেয়ারম্যান কে হবেন তা নির্বাচন করার জন্য আইন সংস্কারের কথা বলেন।
আবার নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি ভোরের কাগজকে জানান, এটা বাস্তবতা। কোভিড পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা মানে ভোটারদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়া। আবার সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, কোভিড পরিস্থিতির বাস্তবতায় এখন নির্বাচন করা করা ঝুঁকিপূর্ণ।
আর যদি বাড়তি দায়িত্ব পালনকালে চেয়ারম্যান মেম্বাররা দুর্নীতি করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে আইন সংস্কারেরও কথা বলেন তিনি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশন তৈরিকৃত তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে দেশের ৪৫৭১টি ইউপির মধ্যে ৩ হাজার ৯৯৮টি ইউপি নির্বাচন উপযোগী হয়েছে।
আর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ১ হাজার ৩৩০টি। যার মধ্যে গত এপ্রিলে ৬৬১টি, মে মাসে ১৩৬০টি, জুনে ৬৯২টি ইউপির মেয়াদ শেষ হয়েছে। জুলাই মাসেও বেশ কিছু ইউপির মেয়াদ শেষ হচ্ছে যার তালিকা এখনো ইসি দিতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২২ মার্চ থেকে কয়েক দফায় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হওয়ার কথা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়