বিষাক্ত কেমিক্যালে নামি ব্র্যান্ডের নকল পানীয় তৈরি : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ২

আগের সংবাদ

সংক্রমণ বাড়ার পথ খুলল!

পরের সংবাদ

মুদ্রাবাজারে অলস তারল্যের পাহাড় মেয়াদি আমানতের সুদহার কমল

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চলমান মহামারী শুরুর আগে বেশি সুদে অন্য ব্যাংকের আমানত দখলে নেয়ার প্রতিযোগিতায় ছিলেন ব্যাংকাররা। তবে বর্তমানে আমানতের তীব্র সংকট আর নেই, ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সব বেসরকারি ব্যাংকে জমেছে টাকার পাহাড়। বিনিয়োগ কমেছে, যে কারণে দেশের মুদ্রাবাজারে তৈরি হয়েছে অলস তারল্যের পাহাড়।
করোনাকালে এই সুযোগে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো মেয়াদি আমানতের পরিমাণ কমিয়ে এনেছে। যা ব্যাংকের সুদহারে ইতিহাসে সর্বনি¤œ। মহামারীর আগে যেসব ব্যাংক গ্রাহকদের ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য ৬-৯ শতাংশ সুদ দিত, তারাই এখন সুদহার দেড় শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য গ্রাহকদের সবচেয়ে কম সুদ দেয়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলো হলো ইস্টার্ন, ডাচ্-বাংলা, যমুনা, শাহজালাল ইসলামী, দ্য সিটি, ব্যাংক এশিয়া, ট্রাস্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
২০১৯ সালের জুনে ব্র্যাক ব্যাংক ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য গ্রাহকদের সুদ পরিশোধ করত ৬ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ। সেই ব্র্যাক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের একই মেয়াদের আমানতের জন্য সুদ দিচ্ছে মাত্র ১ দশমিক ৫০ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। ছয় মাস মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে এখন ব্র্যাক ব্যাংকের সুদহারই সবচেয়ে কম।
এ মুহূর্তে গ্রাহকদের ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ সুদ দিচ্ছে প্রাইম ব্যাংক। অথচ ২০১৯ সালের জুনেও ব্যাংকটি ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য গ্রাহকদের সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়েছে।
ব্যাংকগুলো আমানতের জন্য গ্রাহকদের সুদ দিচ্ছে দেড় থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ। নতুন ও দুর্বল ব্যাংকগুলো ছাড়া দেশের বেসরকারি অন্যান্য ব্যাংকও আমানতের সুদহার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে। অথচ করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ছয় মাস মেয়াদি আমানতের সর্বনি¤œ সুদও ছিল ৬ শতাংশের বেশি।
মেয়াদি আমানতের এতটা কম সুদ কখনো দেখেননি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও। তিনি বলেন, নিরাপদ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের বিকল্প কোনো উৎস না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে ব্যাংক টাকা রাখছে। গত ৩৪ বছর ধরে দেশের ব্যাংক খাতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত আছি। কিন্তু ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের সুদহার ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এমনটি কখনো দেখিনি।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক এ চেয়ারম্যানের ভাষ্য হলো, এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলোয় বিপুল পরিমাণ অলস তারল্য আছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আমানত পরিস্থিতিও একই। এ অবস্থায় গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি সুদে আমানত নিয়ে কী করব? বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। নতুন কোনো বিনিয়োগের জন্য গ্রাহকরা ব্যাংকে আসছে না।
ব্যাংকগুলোকে আমানত ও ঋণের জন্য যথাক্রমে ৬ ও ৯ শতাংশ হারে সুদহার বেঁধে দিয়েছে সরকার। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই আমানতের সুদহার কমাতে থাকে ব্যাংকগুলো। পরবর্তী সময়ে করোনা সৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার ইতিহাসে সর্বনি¤েœ নামিয়ে এনেছে।
অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সরকার স্বল্প সুদের ঋণ হিসেবে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে এসব প্যাকেজের প্রথম দফা ঋণ বিতরণ প্রায় শেষও হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মে পর্যন্ত দেশের বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। দেশের ইতিহাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হিসেবে এটিই সর্বনি¤œ।
অন্যদিকে ঋণ প্রবৃদ্ধির ভাটার বিপরীতে অলস তারল্যের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এ তারল্যের ৪৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ৮৯ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা ছিল দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়