ভূমিহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণের দাবি বিএনপির

আগের সংবাদ

ঈদ ঘিরে লকডাউন শিথিল : ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিন সারাদেশে বিধিনিষেধ শিথিল, আজ প্রজ্ঞাপন

পরের সংবাদ

ধ্রুবতারা

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিরো পয়েন্ট থেকে প্রতিদিনকার মতো আজো জান্নাতকে এগিয়ে দিতে গেল ধ্রæব। ‘এই খালি’ বলে ছোট্ট করে একটি হাঁক ছাড়ল। তারপরই বললো- সাবধানে যেও। আর হ্যাঁ, একদম টেনশন করবে না। আল্লাহ আছেন তো।
ততক্ষণে রিকশাটি ওদের সামনে চলে এসেছে। ‘আচ্ছা’ বলে রিকশার পাটাতনে পা রেখে বসে পড়ল জান্নাত।
– পৌঁছে ফোন দিও কিন্তু…।
দ্বিতীয়বারের মতো ‘আচ্ছা’ বলে হুডটা টেনে নিল জান্নাত।
বিদায় মুহূর্তে দুজনের চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে। এটা নিত্যকার দৃশ্য। এক ধরনের ভালো লাগাও কাজ করে ধ্রæবের। জান্নাতের মুখের দিকে তাকালে অন্যদিকে তাকানোর মনোযোগ হারিয়ে যায়। কী এক অবর্ণনীয় মায়ায় বাঁধা যেন মুখটা। শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে।
করোনা বিভীষিকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাইরে বের হওয়া, একসঙ্গে আড্ডা দেয়ার ফুরসত মেলে না দুজনের। সেখানে দুজনের দেখা হওয়াটা অমাবস্যার চাঁদের মতো। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছিল দুজনই- কবে একটু দেখা করার সুযোগ আসবে? সেখানে জ্যোস্না হয়ে এলো জাকারিয়া স্যারের কোচিংয়ে ক্লাস নেয়ার ঘোষণাটা। এই মওকায় ভীষণ খুশি জান্নাত। অন্তত প্রতিদিন প্রিয় মানুষটার সঙ্গে দেখা করা যাবে!
রিকশাটি ততক্ষণে স্থান ত্যাগ করে সামনের দিকে চলতে শুরু করেছে। ধ্রæব আস্তে আস্তে শিল্পকলা একাডেমি পার হয়ে সোজা পৌরপার্কে ঢুকে গেল।
যখনই মন খারাপ হয়, মন ভালো করার জায়গা হলো পৌরপার্ক। ভালো লাগার জায়গাও বটে।
গত কিছুদিন ধরে জান্নাতকে বিদায় দিতে যাওয়ার পর থেকে তার বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। সহজে সহ্য করতে পারে না সে। মনে হয় কেউ যেন বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা করছে। কষ্টের হাঁপর তার বুকে অটো ওঠানামা করছে। এই অদৃশ্য অনুভূতি তাকে কেন কষ্ট দিয়ে চলেছে সে বুঝতে পারে না। ভালোবাসাটা কি এমনি!
কষ্টের দমক কিছুটা কমানোর জন্য সে একান্তে থাকার জন্য পৌরপার্কে যায় মাঝেমধ্যে।
কিন্তু আজ যেন কষ্টের পাল্লাটা তার বুকটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। বুকের ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে গেছে অদৃশ্য আঘাতে। ঠিক ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেছে আজ।
গতকাল যখন জান্নাত তাকে বলেছিল- কিছু একটা করো। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
ধ্রæব কয়েক মুহূর্তের জন্য থ বনে গিয়েছিল। সচরাচর জান্নাত এমনভাবে কথা বলে না, যতই কষ্ট হোক। কথা বলার অমন আচরণ দেখে ধ্রæব বলল- কী হয়েছে? এমন বলছো কেন?
জান্নাতের মুখ থেকে উত্তর শোনার পর কিছু সময়ের জন্য তার পার নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল সে তার নিজের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
জান্নাতকে দেখার জন্য ছেলেপক্ষ আসবে। ছেলের পুরো পরিবার নৌবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। বনেদি পরিবার যাকে বলে আরকি! ছেলেপক্ষ এলে এক দেখাতেই যে মেয়েকে পছন্দ হয়ে যাবে এটা ধ্রæব-জান্নাত দুজনেই জানে।
জান্নাতের মনে এক ধরনের গোপন ভয়। এ ভয় অন্য কারণে। তার পরিবারের নিয়ম-নীতি তার এ ভয়কে আরো কঠিন করে তুলেছে। ভীষণ খাপছাড়াও করে তুলেছে।
রীতিটা এ রকম, যদি ছেলেপক্ষের মেয়ে পছন্দ হয় তাহলে সেখানেই অনানুষ্ঠানিক বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয়। পরে হয় আনুষ্ঠানিকতা। এ ভয়টা জান্নাতকে যতটা কুরে কুরে খাচ্ছে, ধ্রæবকেও ঠিক ততটাই। সম্পূর্ণ নিরুপায় সে এখন। এক মন নিয়ে কী সব ভেবে যাচ্ছে। সন্ধ্যায় ফুডপান্ডার শিফট আছে। যাবে কি যাবে না- এমন দোনামোনা আঁচড় কেটে যাচ্ছে অবিরাম। তার মনে হলো যাওয়াটাই ভালো, কাজের ভেতরে থাকলে অন্তত কিছুটা কষ্ট কমবে।
সন্ধ্যা সাতটা। ধ্রæব শিফটে তখন। মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দ। তাতে লেখা- ‘আমার বিয়ে হয়ে যাবে আজ রাতে, কিছু একটা করো…’।
বুকের ভেতরের জান পাখিটা এই বুঝি উড়াল দিল ধ্রæবের।
যে সাইকেল ছিল সঙ্গে ওটাই ইউ টার্ন করে ঘুরালো। প্যাডেলে তখন বিদ্যুৎ গতির পা। চলছে তো চলছে। বাজ পাখির মতো উড়ে চলেছে যেন। কিছু একটা তাকে করতেই হবে। পেছনে তাকানোর সময় নেই তার। সে চলছে ঠিক দলছুট শার্দূলের মতো। বিরামহীন, ঠিক জান্নাতের বাড়ির দিকে…।
য় সরকারি এম এম কলেজ, যশোর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়