×

মুক্তচিন্তা

বিশ্ব দুগ্ধ দিবস : আমিষের গুরুত্বপূর্ণ উৎস দুধ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩, ০২:০২ এএম

বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস হলো বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুন দিবসটি পালিত হয়ে আসছে বিশ্বব্যাপী। ডেইরি খাতের কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্য নিয়ে দিনটি উদযাপিত হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে দুধ দিবস উদযাপিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারো ‘দুগ্ধ উপভোগ করুন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৩। দুধ সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী। দুধের মধ্যে ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান। দুধের উপকারিতা সম্পর্কে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুধ হলো ক্যালসিয়ামের খুব ভালো একটি উৎস। আর ক্যালসিয়াম সব বয়সের মানুষের জন্য জরুরি উপাদান। আমরা জানি মানবজীবনের শুরু হয় দুধ দিয়ে। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের জন্য দুধ ভীষণ প্রয়োজনীয় খাবার। যেসব শিশু জন্মের পর ঠিকভাবে দুধ খেতে পায় না, তারা অধিকাংশ সময় কোয়াশিয়রকর, ম্যারাসমাস নামক অপুষ্টিজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের অভাবে বয়স্ক ব্যক্তিরা অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস অর্থাৎ হাড়ের দুর্বলতা ও হাড়ের ভঙ্গুরতাজনিত অসুখে আক্রান্ত হন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে দুধের মূল উৎস গরু। ৯০ শতাংশ দুধ আসে গরু থেকে, ৮ শতাংশ আসে ছাগল থেকে এবং ২ শতাংশ আসে মহিষ থেকে। ১৯৮৯-৯০ থেকে ২০০১-২০০২ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২.৪ শতাংশ, ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ২০ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ২৩.৭০ লাখ টন, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১০৬.৮০ লাখ টন এবং সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩০.৭৪ লাখ টন দুধ উৎপাদিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, একজন মানুষকে গড়ে দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা উচিত। তবে বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ২০৮.৬১ মিলিলিটার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক যুগে দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে ৫ গুণ। মোট আমিষের ৮ শতাংশ আসে দুগ্ধ সেক্টর থেকে। তাছাড়া ডেইরি ইন্ডাস্ট্রি এখন দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্প। এই ইন্ডাস্ট্রি দেশের মানুষের পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে যে অবদান রাখছে, তা অনস্বীকার্য। এর সঙ্গে জড়িত আছে বিশাল শ্রমশক্তি। দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে ৫০ শতাংশ প্রাণিসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে দেশে ক্রমবর্ধমান জিডিপিতে প্রাণিসম্পদের অবদান ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। গরু ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ উৎপাদনের বৈশ্বিক সূচকেও কয়েক বছর ধরে এ দেশের ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। মোট দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ২৩তম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ দুধ উৎপাদন হয় এশিয়াতে। দুগ্ধ খাতসংশ্লিষ্টদের হিসাবে দেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার গুঁড়া দুধ আমদানি করা হয়, যা মোট দুধের চাহিদার ৩৫-৪০ শতাংশ। এছাড়া আমদানি করা গুঁড়া দুধ, পাস্তুরিত দুধ, ফর্টিফায়েড দুধ এমন নানা ধরনের দুধ পাওয়া যায় বাজারে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ পরিবার দুধের পুষ্টির জন্য গুঁড়া দুধের ওপর নির্ভর করছে। গত তিন বছরে এই চাহিদা প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে। মেধাবী জাতি বিনির্মাণে দুধের চেয়ে ভালো খাবার আর নেই। তাই সরকার মানসম্পন্ন দুধ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। দুধের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার ব্যবস্থা জোরদারকরণ, দুগ্ধজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণসহ স্কুলফিডিংয়ের মাধ্যমে দুধপানের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এলক্ষ্যে দুগ্ধশিল্প উন্নয়নে ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্প’ চলমান রয়েছে। যা দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দুধের বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০০টি ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার (ভিএমসিসি) স্থাপন করা হচ্ছে। এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় আমরা সারাদেশে ৫ হাজার ৫০০ দুধ প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি করা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্পের বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। সর্বোপরি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সব ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে। সামছুল আলম : গণযোগাযোগ কর্মকর্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App