সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

জবিতে বাসচালকদের তেল চুরির সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গোমতি বাস এসে থামে বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে কিউ. জি. সামদানী এন্ড কোম্পানি পেট্রলপাম্পে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া রশিদ দেখিয়ে ডিজেল তেল নেন গাড়িটির চালক ইসহাক মিয়া। তবে তেল নেয়ার সময় পাম্পের রিডিং মেশিন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের রশিদের ভেতর রয়েছে বিস্তর ফারাক। রশিদে ২১০ লিটার ডিজেল নেয়ার কথা থাকলেও রিডিং মেশিনে দেখা যায়, চালক তেল নেন ১৮৯ লিটার। অর্থ্যাৎ কম নেয়া হচ্ছে ২১ লিটার তেল।
শুধু গোমতি বাসই নয়, ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রায় সব বাসের চালকই এ তেল চুরির সঙ্গে জড়িত। কেউ ১০ লিটার, কেউ ১২ লিটার, কেউবা কমপক্ষে ৫-৭ লিটার তেল রশিদের চেয়ে কম নেন। ওই তেলের অর্থ ভাগাভাগি করে চালকসহ পান নির্ধারিত পেট্রলপাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ৪৫টি গাড়ি থেকে মাসে ৫ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ তেল চুরি হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন প্রশাসক।
গত ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বাসের তেল নেয়ার বিষয়টি সরজমিন অনুসন্ধান করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ২০ মিনিটে কালিগঙ্গা বাসের চালক মনির হোসেনকে বরাদ্দ ৬৫ এর জায়গায় ৬২ লিটার ডিজেল তেল নিতে দেখা যায়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে দেখা যায়, তুরাগ বাসের চালক আবুল হাসান ৯৬ এর স্থলে ৯০ লিটার, ঐতিহ্য বাসের চালক সাখাওয়াত হোসেন ১০৮ এর স্থলে ১০০ লিটার, গোমতি বাসের চালক ইসহাক মিয়া ২১০ এর স্থলে ১৮৯ লিটার ও স্বপ্নচূড়া বাসের চালক শাহবুদ্দিন ৯৬ এর স্থলে ৮৬ লিটার তেল নেন। তবে দীর্ঘক্ষণ নজর রাখায় এ প্রতিবেদককে পাম্পের কর্মচারীরা সন্দেহ করতে থাকেন। সেখানে থাকার কারণ জানতে চান। ট্রাকের তেল নেব বলা হলেও পরবর্তীতে আসা চালকদের সজাগ করে দেন তারা। তাই পরবর্তীতে বনশ্রী রুটের শিক্ষক মাইক্রোচালক আতিকুর রহমান, নরসিংদী রুটের গিয়াস উদ্দিন, মিরপুর-২ রুটের জগদীশ, গাজীপুর রুটের বিপ্লব, প্রজন্ম-২ এর সাইফুলকে সাংবাদিক দেখে রশিদ অনুসারে তেল নিতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে ভিন্নভাবে একই দিন রাতে অপরিচিত দুজন সোর্সের মাধ্যমে সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে পাম্প থেকে মিরপুর-১৪ রুটে কর্মকর্তাদের বাসচালক সুমন দাস ১০৫ এর স্থলে ৯৬ লিটার তেল নেন। এর আধাঘণ্টা পরে গাজীপুর রুটের শিক্ষক মাইক্রোর চালক সাইফুল ইসলাম ২৫ এর স্থলে ২২ লিটার তেল নেন। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে অনির্বাণ-২ বাসের চালক লিটন ৭৫ এর স্থলে ৬৩ লিটার তেল নেন। রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সাভার রুটে শিক্ষকদের মাইক্রোবাসের চালক বিপ্লব ৩৮ এর স্থলে ২৭ লিটার তেল নেন। গাজীপুর রুটের শিক্ষক মাইক্রোর চালক মিলন ৩৯ এর স্থলে ৩২ লিটার তেল নেন। এছাড়া ওইদিন রাতে উল্কা-৪ বাসের চালক ১৪০ এর স্থলে ১৩০ লিটার তেল নেন। তবে এই প্রতিবেদক মিটারের কাছে যেতেই চালক আমিনুল বুঝতে পেরে পাম্পে নিয়োজিত কর্মীদের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ১৪০ লিটার নিলাম কিন্তু। এভাবে ওই সময়ও সবাই সজাগ হয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল সূত্রে জানা যায়, কম নেয়া ওই তেলের অর্থের ভাগ তেল কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীরা পেয়ে থাকেন। ফলে সহজেই রশিদের চেয়ে কম তেল নিতে পারেন চালকরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে তেল দেয়ার সময় কেউ মেশিনের রিডারের দিকে তাকালে সন্দেহ প্রকাশ করে তার পরিচয় জানতে চান কর্মচারীরা। এ যেন ‘চোরের মন পুলিশ পুলিশ’। তবে এ বিষয়ে সামদানী এন্ড কোম্পানি পেট্রলপাম্পের ম্যানেজার শাহিন বলেন, ‘আমার জানা মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রশিদ অনুসারে তেল দেয়া হয়। কর্মচারীরা কম দেয় কিনা জানা নেই। না জেনে এ বিষয়ে বলতে পারব না।’
এদিকে তেল কম নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোমতি বাসের চালক ইসহাক মিয়া বলেন, ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা কম বলে ২১০ এর স্থলে ১৯০ লিটার নিয়েছি। ধারণ ক্ষমতা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৪০ লিটার, তবে ট্যাংকে তেল ৪০-৫০ লিটার থাকে সবসময়। এছাড়া তুরাগ বাসের চালক আবুল হাসানের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো তেল কম নিই না।’ পরে ফোন করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সরজমিন অনুসন্ধানের খবর শুনে অনেক চালক নির্ধারিত সময়ে তেল না নিয়ে গভীর রাতে ও দুপুরে নিয়েছে। পারলে ওইগুলোর খোঁজ নেন।’ এছাড়া সুমন দাস, সাখাওয়াত, শাহবুদ্দিন, লিটন, বিপ্লবসহ বাকি বাসচালকরাও তেল কম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তবে কয়েকজন চালক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, সবাই কম বেশি তেল নেয়। শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় না। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের চালকরাও দুই-এক লিটার রাখে। আমাদের বেতন কম। এটা দিয়ে নাস্তার খরচটা হয়। এছাড়া প্রতিদিন ভোরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী নিয়ে আসার জন্য গন্তব্যে রওনা দেয়ার সময় অনেক বাস সদরঘাট থেকে যাত্রী তুলে নিয়ে যান।
এদিকে তেল কম নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এমন অভিযোগ আমিও পেয়েছি। আমাদের নজরদারি রয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন নীতি-নির্ধারণী কমিটির আহ্বায়ক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ বলেন, এমন অভিযোগ পরিবহন প্রশাসকের কাছ থেকে উপাচার্য ও আমিও শুনেছি। নতুন পরিবহন প্রশাসক এ বিষয়টি তদারক করছেন। কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়