উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে দুদিন টানা বৃষ্টি : জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগের শিকার নগরবাসী

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই টানা দুদিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিচু এলাকায় বসবাসরত এবং অফিসগামী লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার এই দুর্ভোগের জন্য নগরের সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও খামখেয়ালিপনাকে দুষছেন নগরবাসী। নগরবাসীর অভিযোগ, জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের ধীরগতি ও নানা অসঙ্গতির কারণে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের আওতায় খালে দেয়া বাঁধ অপসারণ না করা এবং বিভিন্ন নালা-নর্দমা ময়লা-আবর্জনা ভর্তি থাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। তাই অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে নি¤œাঞ্চলের মূল সড়কে।
গতকাল শনিবার নগরের নিচু এলাকা মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলোশহর ২ নম্বর গেট, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, বাদুরতলা, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় রিকশায় অথবা পায়ে হেঁটে হাঁটু পানি মাড়িয়ে যাত্রা করতে হয়েছে কর্মস্থলে। সকালে নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে একটি সীমানা দেয়াল ধসে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা দেয়ালের ভাঙা অংশ সরিয়ে নেয়। শুক্রবার ভোর থেকে চট্টগ্রাম নগরী এবং আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গতকাল সকাল থেকেও বৃষ্টি থেমে থেমে অব্যাহত থাকে। কখনো হালকা, কখনো আবার টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭২ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

চসিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছিল। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর পানিও নেমে গেছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের আওতায় কয়েকটি খাল ও ড্রেনে বাঁধের কারণে পানি নামতে পারছিল না। এ রকম পাঁচটি স্পট থেকে আমরা বাঁধ কেটে দিয়েছি। নাসিরখাল, টেক্সটাইল, মাইজপাড়া, এক কিলোমিটার, বিজয়নগর এলাকায় ড্রেন থেকে বাঁধ সরিয়ে আমরা পানি চলাচল স্বাভাবিক করেছি।’
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের আহ্বায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য খালগুলোতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এই বাঁধ সরানো হয়নি। জোয়ারের পানি প্রবেশরোধে রেগুলেটর বসানোর কথা ছিল। কিন্তু এখনো তা হয়নি। এছাড়া নালা-নর্দমা আবর্জনামুক্ত না হওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণেই চট্টগ্রামে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি একটি অসম্পূর্ণ প্রকল্প। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। তাড়াহুড়া করে করা সম্ভাব্যতা যাচাই, নিরীক্ষণ ও দুর্বল কর্মপরিকল্পনাই এর জন্য দায়ী। ত্রæটিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই নিরীক্ষণ, তহবিল বণ্টনের ক্ষেত্রে ধীর গতি, কর্মীর অভাব এবং বাস্তবায়নকারী, ঠিকাদার ও পরামর্শকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল খনন ও সংস্কার করে সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে কি ধরনের জনবল কাঠামো লাগবে, কি ধরনের যন্ত্রপাতি লাগবে- প্রকল্পে এই ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই। খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে, খালগুলো আবার ভরে যাবে। খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনকে তহবিল দিতে হবে, লোকবল নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এজন্য অপারেশন ম্যানুয়েল তৈরি করতে হবে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তী সময়ে করণীয় নিয়ে এখনই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ শেষ করা জরুরি।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। গতকাল টাইগারপাসে নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিকের কর্মকর্তারা। কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের নম্বর হলো- ০১৭১৭-১১৭৯১৩ অথবা ০১৮১৮-৯০৬০৩৮। চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নগরীর কোথাও কোনো ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটলে চসিকের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়