দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ : চট্টগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ

আগের সংবাদ

ঢিমেতালের ফাঁদে সোনালি ব্যাগ : সিলিং মেশিনে আটকে আছে উৎপাদন, বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ

পরের সংবাদ

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় : চলে গিয়েও বারবার ফিরে আসেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গুণী, মেধাবী, কৃতিমান মানুষদের কাজ তো শুধু জীবদ্দশাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং জীবনের ওপারে পাড়ি দেয়ার পরই বোধহয় তাদের কীর্তি আরো বেশি করে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তাই চলে গিয়েও তারা বারবার ফিরে আসেন শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, স্মরণে। যেমন- ভারতীয় তথা এই উপমহাদেশের চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত বছরের ১৫ নভেম্বর তিনি পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু এই কৃতী, গুণী মানুষটি যেন বারবারই ফিরে আসেন আমাদের স্মরণে, স্মৃতিতে, আলাপচারিতায়। কখনো তিনি সত্যজিত রায়ের নায়ক তো কখনো অপুদা, কখনো তিনি নুন সাহেবের ছেলে কখনো তিনি পাবলো নেরুদা, আবার কখনো ফেলুদা তো কখনো তিনি কনির ক্ষিতদা, কখনো পোস্তর দাদু আবার কখনো এক বৃদ্ধার একান্ত প্রিয়তম স্বামী। অভিনয় জগতে নানা রূপে দীর্ঘ ৬০ বছর আমাদের সামনে নিজেকে তুলে ধরেছেন একটাই মানুষ। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এই মানুষটিকে কতভাবে পরিচয় করানো যায়। কখনো তিনি অভিনেতা, আবার কখনো নাট্যকার। এছাড়াও তিনি ছিলেন কবি সৌমিত্র, গায়ক সৌমিত্র, বাচিকশিল্পী সৌমিত্র, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে কথা বলার সৌমিত্র, কমরেড সৌমিত্র। বাড়িতে ছিলেন তিনি একজন ঘরোয়া মানুষ প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে চমৎকার স্বামী, পুত্র কন্যা সন্তানের অসাধারণ এক বাবা। সবকিছুই অনন্য দক্ষতায় সমানভাবে সব্যসাচীর মতো ব্যালেন্স করার কাজটি খুব কম মানুষই পারেন। সৌমিত্র তা পেরেছেন। যে মানুষটি জীবনের ৮৫টি বসন্ত হেসে খেলে বেড়িয়েছিলেন। তিনি ছিলেন পুরো প্রাণশক্তিকে ভরপুর একজন মানুষ। জীবনটা ছিল উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। মঞ্চ-থিয়েটার সিনেমা-সর্বক্ষেত্রেই এমনকি লেখালেখির জগতেও ছিল তার অবাধ যাতায়াত। কোভিড-১৯ মহামারিতে ভয় পেয়ে যখন অন্য সবাই ঘরে কাচুমাচু হয়েছিল, সেই মানুষটি তখন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে নিজের প্রতিটি কাজ করে গেছেন। আসলে সেই মানুষটি ছিলেন ভেতর থেকে চির নবীন ও চিরতরুণ।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছিল আরো এক সুপ্ত প্রতিভা। তার মধ্যে বিরাজমান ছিল এক ঘুমন্ত কবি সত্তা। যে সত্তাকে জনসমক্ষে বের করে আনতে বেশ লজ্জা পেতেন তিনি নিজেই। কিন্তু কবিতা যেন তার কলমের ডগায় আঁকিবুকি কাটত। শুধু লেখনী নয়, কবিতা পাঠেও তিনি ছিলেন অনবদ্য। ‘প্রাক্তন’ সিনেমায় তার কণ্ঠে রবি ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’ আজো মানুষ ভুলতে পারেনি। সৌমিত্র কবি হিসেবে কোনোভাবেই পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি তার জীবনে অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। তার প্রকাশিত কবিতা বইয়ের সংখ্যা ১৪টি। সৌমিত্র তার ছেলে মেয়ের জন্মদিনে বালিশের নিচে একটি করে নতুন কবিতা লিখে রেখে দিতেন। আর সেই মানুষটি এতটাই বিচক্ষণ ছিলেন মৃত্যু নিয়ে শেষ কবিতা লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই। চোখ বুজলেই চলে যেতে হবে এক নিমিষে ইলেকট্রিক চুল্লিতে। তিনি জীবনকে আশ্চর্য দ্বীপের সাথে তুলনা করেছিলেন। মানুষ মারা গেলে নীহারিকা হয়ে নক্ষত্রের দিকে ছুটে যায়। ক্ষুধা, ভালোবাসা, সারাদিনের খাটা-খাটুনি সবই বৃথা হয়ে যায়। এক নিমিষে হয়ে যায় বরফের মতো ঠাণ্ডা। কৃষ্ণা দশমীর চাঁদ নেমে হয় কালো অন্ধকার। তবু মানুষ বেঁচে থাকে অভিলাষে। মৃত্যুর মধ্যে যে ভয়াবহতা আছে তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন মৃত্যুর আগেই।
‘যদি অভিনেতা না হতেন, তাহলে কী হতেন?’ একবার তেমন প্রশ্নের উত্তরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাহলে নাকি ছুতোর মিস্ত্রি হওয়ার একান্ত ইচ্ছে ছিল তার। এই উত্তর কিন্তু রসিকতা করে দেয়া নয়, এ ব্যাপারে রীতিমতো সিরিয়াস ছিলেন কিংবদন্তি মানুষটি। সৌমিত্র কি নিছক একজন অভিনেতাই ছিলেন? মঞ্চ আর ক্যামেরার বাইরে তার পরিচিত লম্বা ছায়া ফেলে কবিতার পাতায়, ছবি আঁকার ক্যানভাসে, পত্রিকার সম্পাদনায়। ইংরেজি ভাষায় যাদের ‘পলিম্যাথ’ বলা হয়, সেই বহু বিষয়ে আগ্রহী এবং বুৎপত্তিসম্পন্ন মানুষদের প্রত্যক্ষ করেছিল বাংলার রেনেসাঁস। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সে হিসেবে দেখলে সেই নবজাগরণের শেষ পথিকদের একজন ভাবা যায় অনায়সেই। কবি সৌমিত্রের জগৎটা ছিল একেবারেই আলাদা। বাংলা কবিতার পরস্পরায় তার কবিতাগুলো নীরব অথচ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলেই মনে করেন কাব্যরসিকরা। কবিতার পাশাপাশি ক্যানভাসেও তিনি দক্ষতার পরিচয় রেখে গিয়েছেন। তার আঁকা ছবির জগৎকে বলা যায় সুন্দর, রহস্যময়।
বলিউডে হিন্দি সিনেমার লোভনীয় হাতছানি সৌমিত্রকে একটুও প্রলুব্ধ করেনি। সারা জীবন বাংলায় কাজ করা মানুষটি শেষ পর্যন্ত হয়ে গেছেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের নক্ষত্র। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে করা ১৪টি ছবির অতিক্রম করে তপন সিংহ বা তরুণ মজুমদাদের মতো পরিচালকের ক্যামেরাতেও তিনি অন্য ঝলক দেখিয়ে গিয়েছেন। বাংলা সিনেমা, নাটক, সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় প্রশাখায় অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে তিনি অনন্য অবদান রেখে গেছেন। সুদীর্ঘ ষাট বছরের চলচ্চিত্রে তার পদার্পণ সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায়। উত্তম কুমারের সমসাময়িক যুগেও বাঙালির মনের মনিকোষ্ঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন সৌমিত্র। অভিনয় ছিল তার জীবনের অক্সিজেন। তিনি বলতেন, ‘আমি অভিনয় করছি বলেই তো সুস্থ আছি। তাই তো করোনা মহামারির সতর্কতার মাঝেও লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। গত বছর লকডাউন পরবর্তী সময়ে শেষ করেছিলেন নিজের বায়োপিক ‘অভিযান’ এর শুটিং। কাজ করেছেন একটি ডক্যুমেন্টারি ফিল্মে। তিনি বলতেন সবসময়ে, ‘কাজ ছাড়া আমি আর কিছু করতে চাই না।’
বাবা কলকাতা হাইকোর্টের উকিল হলেও সংস্কৃতিমা ছিলেন ভীষণ। বাড়িতে নাটকের চর্চা ছিল। বাবা নাটকের দলে অভিনয় করতেন। তেমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা সৌমিত্র অভিনয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন ছোটবেলাতেই। কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স ডিগ্রি লাভের পর পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ অব আর্টস এ দুবছর পড়াশোনা করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার পথ চলা শুরু হয়েছিল রুপালি পর্দায়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় নির্মিত ৩৪টি ছবির মধ্যে ১৪টিতে অভিনয়ের সুযোগ লাভ তার জন্য যেমন বিরাট অর্জন, তেমনিভাবে তা বাংলা চলচ্চিত্রের এক পরম ও বিরল প্রাপ্তিও বটে। তবে শুধু সত্যজিৎ রায় নন, তপন সিংহ, মৃণাল সেন, অজয় কর, তরুণ মজুমদার থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষ, সুমন ঘোষের মতো আজকের প্রজন্মের চলচ্চিত্রকারদের ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৬১ বছরের দীর্ঘ ফিল্মি ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। মঞ্চেও তিনি ছিলেন অনন্য কৃতি একজন অভিনেতা-নির্দেশক, নাট্যকারও। আজীবন তার এই মঞ্চপ্রীতি বজায় ছিল। নাটক নিয়ে নিত্য নতুন পরীক্ষা চালাতেও তিনি সবসময় উৎসাহী ছিলেন। নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ির অনুসারী ছিলেন সৌমিত্র। কলেজ জীবনের শেষ বছর মঞ্চে শিশির ভাদুড়ির অভিনয় দেখে এই শিল্পে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। সিনেমায় যাত্রা শুরুর পরে দীর্ঘদিন মঞ্চকে সময় দিতে পারেননি সৌমিত্র। ‘অপুর সংসার’ ছবির প্রায় ২০ বছর পর ১৯৭৮ সালে আবার মঞ্চে ফিরেছিলেন তিনি। তখন নিজের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করেছিলেন ‘নাম জীবন’ নাটকটি।
তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আকাশবাণী রেডিওতে একজন ঘোষক হিসেবে। জীবনে একটি মাত্র সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন। ছবির নাম ‘স্ত্রী কা পত্র’। ১৯৮৬ সালের এই হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রূপা গাঙ্গুলি ও উষা গাঙ্গুলি। ২০০১ সালে ‘দেখা’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন, বহু আগেই তাঁর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি সেই পুরস্কার নিতে চাননি। জীবনে কখনো জাতীয় পুরস্কারও পাননি তিনি। অথচ ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘লিজিয়ঁ দ্য ন্যর’ পেয়েছেন এই কিংবদন্তি মহান অভিনেতা। নিজের পত্রিকার নামকরণ করার জন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অনুরোধ করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের কাছে। মানিকবাবু মানে সত্যজিৎ রায় সেই পত্রিকার নাম রাখেন ‘এক্ষণ’। শুধু তাই নয়, তিনি সেই পত্রিকার প্রচ্ছদও এঁকে দিয়েছিলেন। সৌমিত্রের ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় সত্যজিৎ রায়ের বেশ কয়েকটি ছবির চিত্রনাট্য প্রকাশিত হয়েছিল। রাজনৈতিক মতাদর্শ কোনোদিনই লুকোননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বরাবরই বাম ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। সরাসরি মুখ খুলেছেন অনেকবার। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন সোচ্চার বামপন্থি। তার অভিনীত শেষ ছবি ‘বরুণবাবুর বন্ধু’তেও ছিল রাজনৈতিক বার্তা। দ্বিধাদ্ব›দ্ব ছাড়াই তিনি তার নিজস্ব বাম প্রতিবাদী সত্তার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন ছবিতে।
বাঙালির জীবনের কতটা জুড়ে তিনি ছিলেন তা কয়েকটি শব্দে ধরা বেশ কঠিন। তিনি ছিলেন এক বিশাল বটবৃক্ষ। তার প্রকাণ্ড ঠাণ্ডা ছায়া বাংলা সিনেমার কয়েক পুরুষ ধীরে ধীরে লালিত হয়েছে। শুধু কি সিনেমা, বাংলার নাট্য চর্চার জগতেও তিনি এক প্রতিভূ হয়ে ছিলেন। তার কণ্ঠস্বর, উচ্চারণে আজো বিভোর বাঙালি। এককথায় বলতে গেলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেই নিজের তুলনা। তিনি কার্যত বাংলা ও বাঙালির জীবনে একটি ‘যুগ’- তিনি ‘যুগ পুরুষ’। সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘অপুর সংসার’ ছবিতে এমন একজন ছাপোষা বাঙালি অথচ উজ্জ্বল চেহারার অভিনেতাকে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন, যার ব্যক্তিত্বে বাঙালি বিভোর হয়েছে। ততদিনে বিভূতিভূষণের অপু সৌমিত্রের হাত ধরে ঠিক যেন পাশের বাড়ির ছেলেটি হয়ে গিয়েছিল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অপুকে যেভাবে বাঙালি বুকে জড়িয়েছে, তেমনই ৭০ মিলি মিটার পর্দার ফেলুদাকে বাঙালি সৌমিত্রের চেহারাতেই চিনতে পেরেছে। সত্যজিৎ-সৌমিত্রের হাত ধরে এসেছে ‘হীরক রাজার দেশে’র মাস্টার মশাইয়ের চরিত্র, এসেছে ‘শাখা প্রশাখা,’ ‘অণ্যের দিনরাত্রি’র মতো সিনেমা। ২০২১ এর একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস অর্থাৎ অস্কার পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানের মঞ্চে আরো একবার আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে অস্কারের মঞ্চে বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রয়াত অনন্য ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিচারণে এসেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। মরণোত্তর শ্রদ্ধা জানানো হয় তাকেসহ আরো কয়েকজনকে।
বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে একজন জাঁদরেল অভিনেতা হিসেবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থান এমন একটি জায়গায় যা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে বিচার করা যায় না। একজন শক্তিমান অভিনেতার প্রতিকৃতি বলতে যা বোঝায় সৌমিত্র তাই। তিনি রোমান্টিক অভিনয়ের চেয়ে সারা জীবন জীবনধর্মী চরিত্রে চ্যালেঞ্জিং অভিনয়ের বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। নায়ক-নায়িকার বোকা বোকা কথা, ন্যাকা ন্যাকা চাউনি, গাছের নিচে ফুলের বাগানে ডাল ধরে প্রেম করা, গান গাওয়া, নাচানাচিকে তিনি রোমান্টিক অভিনয় মনে করেননি কখনো। এ কারণেই সৌমিত্র সেরা চরিত্রাভিনেতা। তিনি রোমান্টিক হিরোর ম্যাটনি আইডল হিসেবে বিবেচিত হননি। রোমান্টিক নায়কের ইমেজ তার কোনো সময়েই ছিল না। উত্তম কুমারের মতো সুন্দর চেহারা কিংবা গø্যামার নিয়ে পর্দায় উপস্থিত হতে দেখা যায়নি তাকে। তবে সৌমিত্রের মধ্যে অন্যরকম ডাইমেনশন ছিল। যা দাগ কেটে যেত দর্শক হৃদয়ে গভীরভাবে। তারপরও তাকে মাঝে মধ্যে রোমান্টিক নায়ক সাজতে হয়েছে বাজারের চাহিদা মেটাতে। অজয় করের ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে রোমান্টিক নায়কের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে আজো দর্শক স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন তিনি। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে উত্তম কুমারের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলেন না সৌমিত্র। এটা অনেকবার প্রমাণ করেছেন তিনি। টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শিক্ষিত, ভদ্র, রুচিশীল শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে তার আলাদা একটি অবস্থান ছিল নিঃসন্দেহে। পাশাপাশি আরো অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা বাংলা চলচ্চিত্রে আলোড়ন তুললেও সৌমিত্রের অভিনয়ে যে স্পেশালিটি তা অন্যদের মাঝে সাধারণত দেখা যায়নি। অভিনয়ের বিশেষত্বের জন্য তার প্রতি দর্শকদের ধারণা, প্রত্যাশা ও ছিল আলাদা ধরনের। সৌমিত্র অভিনীত ছবি দেখতে বসে দর্শক উচ্চ ধারণা নিয়ে অপেক্ষা করেছেন সব সময়ই। মহান এই অভিনেতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়