মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

গাছপালা কেটে যত্রতত্র ভবন নির্মাণ : জাবিতে জোরালো হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যানের দাবি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তানভীর ইবনে মোবারক, জাবি : অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি আবাসিক হল ছাড়াও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের টাওয়ার, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, লেকচার থিয়েটার প্রভৃতিসহ মোট ১২টি স্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি কোনো মহাপরিকল্পনা ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণ করায় ব্যাপকহারে বৃক্ষনিধন ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাগারের বিপরীতে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় তলাবিশিষ্ট ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট এবং পদার্থবিজ্ঞান ভবনের পাশে জলাশয়ে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় তলাবিশিষ্ট ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। এছাড়া আলবেরুণী হলের সম্প্রসারিত এলাকায় ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন চারুকলা অনুষদ ভবন নির্মাণকাজ শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই যত্রতত্র ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মাস্টারপ্ল্যান করে ভবন নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন তারা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষের দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের ঘোষণা দেন। এজন্য একটি টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) গঠন করা হয়। এর মাঝে আবার গাছ কেটে জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বলছে, মহাপরিকল্পনার দাবির তোয়াক্কা না করে একের পর এক গাছ কেটে ভবন করা হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর নির্বিচারে গাছ কাটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তুসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসনের উচিত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে মাস্টারপ্ল্যান করে এসব বিষয়ের সুরাহা করা। অন্যথায় ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে।
গত শুক্রবার সরজমিন দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের পাশের গাছপালাসমৃদ্ধ এলাকাটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। পদার্থবিজ্ঞান ভবনের পাশে জোবায়ের সরণির পার্শ্ববর্তী জলাশয় ও জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনের পাশের এলাকাটি দুটি সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা আছে। এসব স্থানে ভবন নির্মিত হলে বিভিন্ন প্রজাতির দুই শতাধিক গাছ কাটা পড়বে। তবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না করে কোনো ভবন করতে দেয়া হবে না জানিয়ে ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতা-কর্মীরা। এরপর থেকে লাগাতার নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যানের জন্য আন্দোলন করে আসলেও প্রশাসন আমাদের দাবির তোয়াক্কা না করে একের পর এক ভবন করে যাচ্ছে। মহাপরিকল্পনা ছাড়া আর একটি ভবন নির্মাণ করা হলে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, কলা অনুষদের সব শিক্ষকের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রশাসন নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পিছনে সম্প্রসারিত ভবনের কাজ শুরু করেছে। আমরা লেকের পাড়ে কোনো বিল্ডিং দেখতে চাই না। গাণিতিক ও পদার্থবিদ্যা অনুষদের জায়গাটা পুরোটাই একটা জলাভূমি এবং সেখান থেকে জিমনেশিয়াম পর্যন্ত একটা পানির ফ্লো রয়েছে। ছাত্ররা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার সুযোগে তারা গাছপালা কেটে ভবনের কাজ শুরু করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, সব নিয়মকানুন মেনে ওই ভবন দুটি করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় যেসব স্থাপনা হওয়ার কথা, এখন চারটি স্থাপনার কাজ শুরুই হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না করলে বাজেট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত যাবে। মাস্টারপ্ল্যান একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। ইতোমধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়