মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

ঐক্য পরিষদ ও পূজা পরিষদের উদ্বেগ : হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরকরণে ‘প্রেমের ফাঁদ’

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : উগ্রবাদী ধর্মীয় সংগঠন জমঈয়তে আহলে হাদিসের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানীর ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক প্রচারণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠন দুটির আলাদা বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা অবিলম্বে এসব ঘৃণ্য সা¤প্রদায়িক অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং যারা এ ধরনের উসকানিমূলক অপতৎপরতায় লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতে সরকার ও প্রশাসন বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, জমঈয়তে আহলে হাদিস নামের তথাকথিত সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি গত বেশ কিছু দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। যাতে বলা হয়েছে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণে তাদের দলের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল শিবিরদের জন্য নতুন পুরস্কার ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মণ মেয়েদের ধর্মান্তরকরণের জন্য ৩ লাখ, ভারতীয় বাঙালি মেয়েদের জন্য ২ লাখ, নম শুদ্র মেয়েদের জন্য ৫০ হাজার আর পুরো পরিবারের জন্য ৫ লাখ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে কথিত ধর্মান্তরকারীদের।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রচারিত আরেক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ‘মুসলিম ভায়েরা মূর্তি পূজারিদের (হিন্দুদের) প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করছে আর সেসঙ্গে সাচ্চা মুসলিম জন্ম দিচ্ছে। সবচেয়ে এটাই ভালো লাগছে যে, আমাদের মুসলিম ভায়েরা এমনভাবে ব্রেনওয়াশ করছে যে, সে মেয়েরা ভাবছে যে তাদের সত্যি ভালোবাসছে। তাদের এ ভাবনা আমাদের মিশন পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে।’ এ প্রচারপত্র মনোযোগ দিয়ে পড়ার কথাও ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখিত রয়েছে। আরেকটিতে ‘লাভ জিহাদের’ এ কথিত মিশনের গ্রুপ লিডার হিসেবে জনৈক মামুনের নাম রয়েছে।
আরেকটি ফেসবুক গ্রুপের স্ট্যাটাসে কীভাবে হিন্দু নারীকে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলা হবে তার একটি দিক-নির্দেশনাও রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘একটা দুইটা করে ফেক আইডি করবেন হিন্দু নাম দিয়ে। বিভিন্ন হিন্দু ফেসবুক গ্রুপে এড (যুক্ত) হবেন। এড হওয়ার পর প্রথম কাজ হচ্ছে সেখান থেকে বেশিরভাগ মেয়েদের ছবিযুক্ত আইডি টার্গেট করবেন এবং হিন্দু মেয়েদের আইডি লিংক আমাদের গ্রুপে প্রেরণ করবেন এবং নিজেরা ফেসবুকে মেসেজ করবেন। আপনারা শুরুতেই মেয়েদের সঙ্গে সমস্ত প্রেমের আলাপ করবেন না। ধীরে-ধীরে তাদের মনে প্রবেশ করতে হবে। আগে তাদের মন জয় করতে হবে। বেশি অতিরিক্ত প্রশংসা করতে যাবেন না। তবে মাঝে মধ্যে কথা শেষে হালকা-পাতলা প্রশংসা করবেন এবং প্রতিনিয়ত তার প্রতি যতœবান দেখাবেন। তার প্রত্যেকটি বিপদে আপনি বেশি উদ্বিগ্ন দেখাবেন এবং কথাশেষে আল্লাহ ভরসা এবং ইনশাল্লাহ-এ কথাগুলো উচ্চারণ করবেন। তবে তাদের দেব-দেবী নিয়ে প্রথমে কোনো আপত্তি করবেন না, কাউকে খারাপ বলবেন না। তাহলে আপনার প্রতি বিরক্তি চলে আসবে তার মনে। আপনার স্কুলে-কলেজে অনেক হিন্দু বন্ধু আছে। তাদের বিভিন্ন পূজায় আপনারা যান। তখন এ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে তাদের কুসংস্কৃতি সম্পর্কে আপনারা জেনে নেবেন। এভাবে করতে করতে একবার প্রেমে পড়লেই বিভিন্ন বাহানা করে এখানে-সেখানে দেখা করার বাহানা করবেন। তবে প্রথম প্রথম তেমন কিছু করবেন না যাতে মেয়েটি বিরক্তবোধ করে। তাকে আপনি এমন মনোভাব দেখাবেন যে, তাকে আপনি অনেক ভালোবাসেন। উনার শরীর আপনার প্রয়োজন নেই। উনার মনকে আপনি ভালোবাসেন। তাহলে দেখবেন অতি সহজে এবং তাড়াতাড়ি আপনার প্রতি বেশি দুর্বল হয়ে যাবেন। আর দুর্বল হওয়ার পর আস্তে আস্তে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হবেন। আর একবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে আর কোনো টেনশন নেই।’
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এহেন উদ্ভট সা¤প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত উসকানিমূলক প্রচারণা, কথিত ধর্মান্তরকরণ মিশন অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষ করে হিন্দু পরিবারগুলো গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ইতোমধ্যে নিপতিত হয়েছে এবং তাদের মেয়েদের জীবনের, শিক্ষার ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় অধিকতর শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে তাদের কন্যা সন্তানদের স্কুলে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। এসব প্রচারণা ও উদ্ভট কার্যকলাপ সামাজিক শান্তি ও স¤প্রীতির পথে নিরতিশয় বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। এ ধরনের কার্যকলাপ বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়